উপাধ্যক্ষ সাইফুর হত্যায় অভিযুক্ত দম্পতি গ্রেফতার

0
10

রাজধনীর উত্তরখান থানাধীন পুরান পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া (৫০) হত্যায় অভিযুক্ত রুপা (২২) ও নাজিম (২০) দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ওই অভিযুক্ত দম্পতিকে ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, রমজানের শুরুর দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে অসহায় ওই দম্পতিকে এনে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান। গত রোববার দিবাগত রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়। ঘটনাক্রমে ওই দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকে ওই বাসায় তাদের দেখা যায়নি। এতে দম্পতিকে ঘিরে সন্দেহ তৈরি হয়। অভিযুক্ত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, তারা স্বামী-স্ত্রী। এই হত্যার পেছনে ‘ধর্ষণকাণ্ড’ রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। তবে অভিযুক্তদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য দিকও বিবেচনায় রেখে এ হতাকাণ্ডের তদন্ত করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাসায় আশ্রয় দেয়া ওই দম্পতি সাইফুর রহমানকে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ও বাসার সব চাবি সাথে নিয়ে যান। তারা কয়েক দিন ধরে ওই বাসায় থাকলেও তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না ওই শিক্ষকের। রেলস্টেশনে পরিচয় হওয়ার পর তাদের বাসায় আশ্রয় দেন উপাধ্যক্ষ সাইফুর।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) অভিযুক্ত দম্পতিকে আটক করার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো: মুহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপাধ্যক্ষ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করেন। অভিযুক্তরা দাবি করছেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে ‘ধর্ষণকাণ্ড’ রয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু তথ্য দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রমজানের শুরুতে কমলাপুর স্টেশন থেকে ওই দম্পতিকে তার বাসায় নিয়ে আসে। হতেও পারে, উপাধ্যক্ষ সাইফুরের কোনো অশুভ উদ্দেশ্য ছিল, আবার অভিযুক্তদের দেয়া তথ্য ভুলও হতে পারে। আবার হয়তো অন্য কোনো কারণে ওই দম্পতি তাকে (উপাধ্যক্ষ) ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করতে পারেন। তবে সব তথ্যই আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘তাদের আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’

এদিকে, নিহত উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমানের লাশ ময়নাতদন্ত মঙ্গলবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। সাইফুরের দু’ হাতেই ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলার বাম পাশে বিরাট এক জখম রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

দক্ষিণখান জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো: নাসিম এ-গুলশান বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে উত্তরখানের পুরানপাড়া বাথানের শাহী শাহনেওয়াজের বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। গত সোমবার সকালে রাজধনীর উত্তরার উত্তরখান থানা এলকার পুরান পাড়ার একটি বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের করে প্রতিবেশীরা উত্তরার একটি হাসপাতলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠান। এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে নিহতের ভাই মুজাহিদুর রহমান ভূঁইয়া অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে আশপাশের লোকজনকে ডাকেন। তারপর আশপাশের লোকজন তাকে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’ ওসি বলেন, ‘নিহত সাইফুরের সাথে তার স্ত্রীর দূরত্ব তৈরি হয় এবং এই কারণে উপাধ্যক্ষ সাইফুর উত্তরখানে থাকা শুরু করেন।’

এদিকে নিহতের ভাই মুজাহিদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘সাইফুরের বাসা শান্তিনগরে। সেখানে দু’ ছেলেসহ তার স্ত্রী থাকেন। তবে কয়েক মাস ধরে সাইফুর উত্তরখান এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকছিলেন। এমন কিছু সাইফুরের স্ত্রী ও ছেলেরা আমাকে কখনো বলেননি।’

সাইফুর রহমান হাবিবউল্লাহ বাহার কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সবাইকে পদত্যাগ করিয়ে নতুন করে শিক্ষকদের পদন্নতি দেয়া হয়। সেখানে সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে উপাধ্যক্ষ করা হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here