চলছে চিরুনি অভিযান: কেএনএফের প্রধান সমন্বয়কসহ পাঁচজন গ্রেফতার

0
66

ঢাকা: বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে তিনটি সরকারি ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, গোলাগুলি এবং ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় জড়িত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধরতে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এদিকে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে র‌্যাব-১৫ সদস্যরা গতকাল ভোর রাতে বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়ায় এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে চেওসিম বম (৫৫) নামে কেএনএফের প্রধান সমন্বয়কসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় ঈদের আগে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে।
থানচি ও রুমায় কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানে কেএনএফের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে যৌথ বাহিনী চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। গতকাল সকালে বান্দরবানে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এদিকে ব্যাংকে হামলার পর পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; যাদের মধ্যে একজন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বলে দাবি করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার কেএনএফ নেতার নাম চেওসিম বম। তিনি বান্দরবান সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের শ্যারনপাড়ার বাসিন্দা। গতকাল বিকালে বান্দরবান জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ এর ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এসব তথ্য জানান। হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন আরও যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের পরিচয় জানায়নি র‌্যাব। এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, চেওসিম বম কেএনএফের প্রধান নাথান বমের আত্মীয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নেতা শামীম মাহফুজ ও নাথান বমের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণের চুক্তি শ্যারনপাড়ার চেওসিম বমের বাড়িতেই হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারনপাড়ায় চেওসিম বমের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় জানিয়ে র‌্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার বলেন, ঘরের মধ্যে একটি লোহার লকারের ভিতর তাকে পাওয়া যায়। তিনি সেখানে লুকিয়ে ছিলেন। লকারটি বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। তালা ভেঙে তাকে বের করে গ্রেফতার করা হয়।
পরে বান্দরবান সদর উপজেলার পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব দুটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করে। তবে এগুলো গত ২ এপ্রিল রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির সময় সেখানকার পুলিশ ও আনসার সদস্যদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র কি না- তা এখনো জানা যায়নি।
বান্দরবানে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে লুট হওয়া ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলির হদিস পাঁচ দিনেও মেলেনি।
এদিকে থানচি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি করে ছয়টি শাখার কার্যক্রম গত বুধবার থেকে নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তিনটি উপজেলার বাসিন্দারা লেনদেন করতে না পারায় আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। তিনটি উপজেলায় দুটি ব্যাংকের এ ছয়টি শাখা ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যাংকের শাখা নেই। রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে হামলা করে অস্ত্রধারীরা ভল্টে থাকা ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা নিতে পারেনি। তবে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিজাম উদ্দিনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা থেকে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব। ওইদিন পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করে অস্ত্রধারীরা। এলাকাবাসীর মুঠোফোনও নিয়ে গেছে তারা। পরদিন বুধবার থানচি থানার দুটি ব্যাংকের শাখা থেকে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনায় রুমা ও থানচি থানায় পৃথক ছয়টি মামলা হয়।
এদিকে গত মঙ্গল ও বুধবার ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ ঘটনার পর থেকে রুমা উপজেলার জনজীবন থমকে আছে। হাটবাজারের দোকানপাট তেমন একটা খুলছে না। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না কেউ। এর ফলে বিকালের পর থেকেই উপজেলাজুড়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে যানবাহন চলছে না।
অন্যদিকে শনিবার থেকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের দুটি ইউনিট তল্লাশি চালাচ্ছে। এতে বম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে। তবে র‌্যাব বলেছে, এই তল্লাশি অভিযানে নির্দোষ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের সংখ্যা। এর ফলে জনজীবন ক্রমশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী জানান, লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে এসব অস্ত্র কোথায় রয়েছে তার অনুসন্ধান চালাচ্ছি। আশা করছি, চলমান বিশেষ অভিযানে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here