জান্নাত আক্তার (১৭), ভালো চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে পাচার করা হয় দুবাই। সেখানে তার কাজ হয় যৌনকর্মী হিসেবে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন তাকে বন্দী থাকতে হয় দুবাইয়ের অন্ধকার ঘরে। এক সময় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফারজানা (৩৫) ও সোহাগী ওরফে রিয়াকে (৩০) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায় ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ভিকটিম জান্নাত আক্তারকে (১৭) ফারজানা ও তার বোন সোহাগী মিলে দুবাইতে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে অবস্থানকালীন ওই বছরেরই ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাত মারা যায়। দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি হতে অন্য একজন প্রবাসী বাঙালী ভিকটিমের লাশ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ২৪ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। ২৬ নভেম্বর জান্নাতের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পরবর্তীতে লাশ দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয় এবং জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর বাদি হয়ে ২৮ নভেম্বর মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় ফারজানা ও সোহাগীসহ অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার প্রধান দুই আসামি সোহাগী ওরফে রিয়া (৩০), স্বামী-আ: হালিম, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা এবং তার দুবাই প্রবাসী বোন ফারজানা (৩৫), দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, জান্নাত আক্তার (১৭) দীর্ঘদিন যাবৎ তার পরিবারের সাথে রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় আসামিদের পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে এবং তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। এভাবে টানাপড়েনের সংসারে অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকা অবস্থায় ভিকটিম জান্নাতকে তাদের প্রতিবেশী সোহাগী ও তার দুবাই প্রবাসী বোন ফারজানা দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। দুবাই প্রবাসী ফারজানা ভিকটিমকে জানায় যে, তাকে দুবাই নিয়ে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ পাইয়ে দিবে। যার মাধ্যমে অনেক ভালো বেতন এবং ভাতাসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পাবে যাতে করে জান্নাতের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার খরচের কথা বলে ফারজানা ও সোহাগী জান্নাতের পরিবারকে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে দিতে বলে। বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম জান্নাত তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে এবং লোনের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে সোহাগীর হাতে তুলে দেয়।
পরবর্তীতে ফারজানার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সোহাগী তাদের চক্রের দালালের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের একটি ভুয়া ঠিকানা সংবলিত পাসপোর্ট ও টুরিস্ট ভিসা প্রস্তুত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট জান্নাতিকে দুবাই পাঠানো হয়। দুবাই পৌঁছানোর ২ দিন পর ভিকটিম তার পিতা জাহাঙ্গীরকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে জানায় যে, আসামিরা দুবাইতে উচ্চ বেতনের চাকরির মিথ্যা প্রলোভন ও আশ্বাস দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচারপূর্বক বিক্রি করে দিয়েছে এবং সেখানে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। একপর্যায়ে নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর সে মারা যায়। এরপর ভিকটিম এর সাথে তার পরিবার আর কোনো যোগাযোগ করতে না পারায় তারা গ্রেফতারকৃত সোহাগীর দ্বারস্থ হয়। সোহাগী ও ফারজানা মিলে ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে থাকে এবং তাদেরকে জানায় যে, তাদের মেয়ে দুবাইতে খুব ভালো আছে, সময় পেলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করবে।