ট্রাম্প ইস্যুতে বিভক্ত মার্কিন রাজনীতি

0
52

নিউইয়র্কের আদালত ৩৪ দফা অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করায় দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফায়দা হাসিলের জন্যই ট্রাম্পকে নিয়ে এসব কান্ড করা হচ্ছে। তবে এসব করে তাকে দমানো যাবে না, বরং নির্বাচনে তিনি আরও ভালো করবেন। অন্যদের ধারণা, এখন আর নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের আশা নেই।
রায়ের পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও ডেমোক্র্যাটিক দল মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের প্রচার বিভাগ বলেছে, ‘সাবেক প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত দেখিয়ে দিয়েছে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।’ বাইডেন-কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচার বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সব সময় ভুলবশত বিশ্বাস করে এসেছেন যে, ‘ব্যক্তিগত লাভের জন্য আইন ভাঙলেও তাকে কোনো ফল ভোগ করতে হবে না। কিন্তু আদালতের রায় সে সত্যই অপরিবর্তিত রাখল যে, আমেরিকার জনগণ এখন এক সহজ বাস্তবতার মুখোমুখি। ওভাল অফিস থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দূরে সরিয়ে রাখার এখনো একটাই মাত্র পথ রয়েছে। আর তা হলো, ব্যালট বাক্স।’ অন্যদিকে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি অপমানজনক। দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিতর্কিত বিচারক দিয়ে এ বিচারে কারচুপি করা হয়েছে। এটা একটা কারচুপির বিচার, একটা অসম্মান। তারা আমাদের বিচারের স্থান পরিবর্তন করতে দেবে না। এ এলাকায়, আমাদের অনুপাত ৫ বা ৬ শতাংশ।’ যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার মাইক জনসন যিনি একজন শীর্ষ পদাধিকারী রিপাবলিকান, তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজকের দিনটা আমেরিকার ইতিহাসে একটা লজ্জার দিন। ডেমোক্র্যাটরা উল্লসিত, কেননা তারা একাধিক হাস্যকর অভিযোগে বিরোধী দলের নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এ বিচার একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আইনের সঙ্গে এর যোগ নেই।’
ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদন বলছে, এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। সে অর্থে এ রায় নজিরবিহীন। তবে এ সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা হবে না। এ রায় দীর্ঘমেয়াদি আপিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হবে। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলার সেন্টারের প্রেসিডেন্সিয়াল ওরাল হিস্টোরি কর্মসূচির সহসভাপতি বারবারা পেরি বলেন, ‘আপিল যদি ব্যর্থ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো আরেক ঐতিহাসিক নজির হয়ে থাকবেন।’ হোয়াইট হাউস কাউন্সেল মুখপাত্র ইয়ান স্যামস বলেন, ‘আমরা আইনের শাসনকে মর্যাদা দিই। এর বাইরে আমাদের কিছু বলার নেই।’ এ রায়ের পর তীব্র হুমকি ও ঝুঁকি সামলাতে তারা প্রস্তুত কি না, ভয়েস অব আমেরিকার এমন প্রশ্নের জবাব দেয়নি হোয়াইট হাউস। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে একটি নামের জন্য সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর সেই নামটি হলো স্টর্মি ড্যানিয়েলস। তার সঙ্গে করা যৌন সম্পর্কের খবর গোপন রাখতে গিয়েই বিপদে পড়েছেন ট্রাম্প। স্টর্মি ড্যানিয়েলস জানিয়েছিলেন, ২০০৬ সালে ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন ‘ট্রেইলার পার্ক’ থেকে বেরোতে চাইলে তাঁর (ট্রাম্প) সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতেই হবে। সেই ঘটনার প্রায় দুই দশক পর তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর সেই সাক্ষ্যেই ফেঁসে গেছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারকরা ট্রাম্পকে ব্যবসাসংক্রান্ত নথিতে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তাঁর সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন এক দশক আগের ওই যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ না খুলতে। সে তথ্য ট্রাম্প তাঁর ব্যবসায়িক নথিতে গোপন করেছেন।
কে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস : প্রকৃত নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন তিনি। স্বল্প আয়েই মায়ের সংসারে তার শৈশব কেটেছে। ড্যানিয়েলস হাই স্কুল শেষ করার সময় সবচেয়ে ভালো ফল করা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিলেন। স্কুলের সংবাদপত্রও সম্পাদনা করেছেন। টেক্সাসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশুর ওষুধ নিয়ে পড়াশোনারও সুযোগ পেয়েছিলেন স্টর্মি। তবে পড়াশোনা তিনি চালিয়ে যাননি। স্টর্মি জানিয়েছেন, নিজের খরচ মেটাতে ১৭ বছর বয়সেই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিভিন্ন জায়গায় নাচতেন তিনি। পরে নগ্ন মডেলিং ও পর্নো ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। ড্যানিয়েলস বলেছেন, তিনি সবচেয়ে কম বয়সি পর্নো ছবির পরিচালকদের একজন ছিলেন। অনেক পুরস্কারও পেয়েছিলেন। টেলিভিশন শোতে বিভিন্ন চরিত্রে এবং ‘দ্য ফোরটি-ইয়ার-ওল্ড ভার্জিন’ এবং ‘নকড আপ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। পর্নো দুনিয়া ছেড়ে স্টর্মি বেশ কয়েকটি সফল সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন এবং পরিচালনা করেছেন। অবসরে ঘোড়ায় চড়ে সময় কাটাতেন। মেয়েকে বড় করেছেন। ২০১৮ সালে তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। স্টর্মির দাবি, এ প্রতিবেদনই ফের তার জীবন ওলটপালট করে দেয়, শুরু হয় ‘বিশৃঙ্খলা’। তার অভিযোগ, ওই প্রতিবেদন তার ব্যক্তিগত অনেক বিষয় সামনে নিয়ে আসে। এ প্রতিবেদনেই ট্রাম্পের সঙ্গে ড্যানিয়েলসের সাক্ষাতের বিষয়টি প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসে। ট্রাম্পের আইনজীবীদের অভিযোগ, ড্যানিয়েলস ওয়ালস্ট্রিটের প্রতিবেদনটি থেকে লাভবান হয়েছেন। এটা তার প্রচারের কাজ করেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে ড্যানিয়েলসের সাক্ষাতের বিষয়টি বানানো। ওয়ালস্ট্রিটের ওই গল্পটিকে ড্যানিয়েলস অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here