দীর্ঘ ১৫ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমামতি ফেরত পেলেন মুফতি আবুল খায়ের

0
16

১৫ বছর পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে বরেণ্য আলেম মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে।

রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদ-উল-ফিতরের ১৯৮তম জামাত উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান। এতে ঈদের জামাত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবারো শোলাকিয়ায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের জামাত সকাল ১০টা অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ছাড়াও সেনাবাহিনী

স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামে দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে।

প্রস্তুতিমূলক সভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো: রমজান আলী, কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো: আল আমিনসহ অনেকেই মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে ইমাম হিসেবে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

প্রস্তুতিমূলক সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের মেজর রায়হান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মোস্তারী কাদেরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলার পিপি অ্যাডভোকেট মো: জালাল উদ্দিন, জিপি অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি আলমগীর হোসাইন তালুকদার, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো: আল আমিন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন, সদস্য সচিব মো: ফয়সাল প্রিন্সসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা।

সভা সঞ্চালনা করেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো: এরশাদ মিয়া।

উল্লেখ্য, শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির বৈধ নিয়ম অনুযায়ী ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: শাহ কামাল তাকে বেআইনিভাবে

সরিয়ে দেন। পাশাপাশি মোতাওয়াল্লির অধিকারকেও ছিনিয়ে নেয়া হয়। ওয়াকফ দলিলকে তোয়াক্কা না করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহ কামাল ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন বেসরকারি এনজিও ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান বিতর্কিত আলেম ফরীদ উদদীন মাসউদকে। তখন এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করে ঈদের জামাত নিয়ন্ত্রণ করে। মুফতি ছাইফুল্লাহর আগে তার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহ (রহ:) ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ ১৫ বছর শোলাকিয়া ইমামের পদ থেকে সরিয়ে রাখা হয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহ রহ:-এর সন্তান ও কিশোরগঞ্জের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম পরিবর্তনেরও দাবি উঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সোচ্চার হন অনেকেই। তাদের দাবি, ‘চাপিয়ে দেয়া’ ইমামকে অবিলম্বে সরিয়ে মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত আগের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মো: সাইফুল্লাহকে আবারো ইমামের দায়িত্ব দিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here