ফ্ল্যাটে মায়ের লাশ, ছেলে গ্রেপ্তার

0
123

মাদারীপুরে সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে। ৮২ বছর বয়সী ১০ সন্তানের মা ফরিদা বেগম এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌর পেয়ারপুর গ্রামের এ ঘটনায় তোলপাড় পুরো এলাকায়। তবে বৃদ্ধা ফরিদার পাশে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
অপরদিকে রাজধানীর একটি ভবন থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে মা রোকেয়া বেগম (৫৫) খুন হয়েছেন।
মাদারীপুরের ওই বৃদ্ধার প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ বছর আগে ফরিদা বেগমের স্বামী কলম গড়িয়া মারা যান। এরপর চার ছেলেকেই মা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এর মধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী, মেজো ছেলে কামাল চাকরিজীবী, সেজো ছেলে হেমায়েত পল্লী চিকিৎসক আর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া সরকারি চাকরি করেন। ছয় মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন সচ্ছল পরিবারে। এখন এই ১০ সন্তানের বিরুদ্ধেই ফরিদা বেগমের অভিযোগ।
ফরিদা বেগম জানান, স্বামীর দান করা ও রেখে যাওয়া ৬৭ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানদের মানুষ করেছেন।
আর বাড়ির ৪৫ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময় কারণে-অকারণে লিখে নিয়ে গেছে সন্তানরা। দলিলে লাখ লাখ টাকা জমির মূল্য লেখা, কিন্তু ফরিদাকে দেওয়া হয়নি একটি টাকাও। সব কিছু লিখে নেওয়ার পর তাঁকে মারধর করে বের করে দিয়েছেন ছোট ছেলে। বড় ছেলে তাঁর মাকে বিষ খেয়ে মরে যেতে বলেছেন।
ঘরহীন ফরিদা ঠাঁই নিয়েছিলেন বড় মেয়ে সুফিয়ার বাড়িতে।
কিন্তু সম্পত্তির ভাগ কম হওয়ায় বড় মেয়েও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মাকে দেখভাল করবেন না এবং খাবারও দেবেন না। অন্য সন্তানদেরও একই কথা।
তবে জোর করে সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তাঁর সন্তানরা।
বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের বোনদের অল্প সম্পত্তি দিয়েছেন মা। তাই মাকে আমরা কেউই বাড়িতে রাখব না। ছেলেদের সম্পত্তি বেশি দিয়েছেন, তাঁদের কাছেই মা থাকুক।’
ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া বলেন, ‘মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে। মাঝেমাঝে উল্টাপাল্টা বলেন। মা আমার নামে মিথ্যে কথা বলছেন। ভাইদের একই সম্পত্তি বারবার লিখে দেওয়ায় আমাদের ভাইদের মধ্যে দ্ব›দ্ব হয়েছে।’
সেজো ছেলে হেমায়েত গড়িয়া বলেন, ‘ছোট ভাই কাজল বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাকে আমি বলেছি আমার ঘরে থাকতে ও খাবার খেতে, কিন্তু মা আমাকে সম্পত্তি কম দেওয়ায় তিনি নিজেই আমার ঘরে থাকবেন না।’
বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া বলেন, ‘আমি জোর করে সম্পত্তি লিখে নিইনি, মা ১০ ছেলেমেয়েকে সম্পত্তি স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছেন। আমার নামে মা যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, ‘১০ সন্তানকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন এই মা। অথচ বৃদ্ধ বয়সে তাঁর ঠাঁই হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। তাঁর পাশে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন। আইনগত সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও করা হবে। এ ছাড়া জোর করে সম্পত্তি লিখে নিলে সেটা ফেরত আনার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ফ্ল্যাটে মায়ের লাশ, ছেলে গ্রেপ্তার
রাজধানীর পশ্চিম মানিকদি নামাপাড়া এলাকার একটি ভবনের পঞ্চম তলা থেকে রোকেয়া বেগমের (৫৫) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই জমসেদুল আলম। তিনি জানান, শনিবার রাতে ৯৯৯-এ ফোনকল পেয়ে রোকেয়া বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী দুই সন্তানের মা। তাঁর বড় ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন, বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছেলেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। ঘটনার সময় ছোট ছেলে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন।
ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি শাহীনূর রহমান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে। পরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া এই ঘটনায় ছেলেকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। নিহতের স্বামীর নাম এস এম মোহাম্মদ আলী। তিনি নরসিংদীর ঘোড়াশাল পাওয়ার হাউসে চাকরি করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here