সবাইকে হতবাক করে দিয়ে প্রবল বৃষ্টিজনিত বন্যা ডুবিয়ে দিয়েছে মরুভূমির দেশ দুবাইকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এই দেশটির রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শপিং মল ও বিমানবন্দর ডুবে গেছে পানিতে। এতেকরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিমান চলাচলসহ সব পরিবহন পরিষেবা।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে সবাইকে বিস্মিত করে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যার পানি বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে বহির্গামী সব ফ্লাইটের সময় পেছানো ও স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছবিতে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্যার পানিতে ডুবে আছে। দেশটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন এই ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে দুবাই ও শারজাহ থেকে ঢাকামুখী ৯টি ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল পর্যন্ত এয়ার অ্যারাবিয়ার ৫টি ফ্লাইট স্থগিত হয়েছে। এ ছাড়া এমিরেটস এয়ারলাইনসের ২টি ও ফ্লাই দুবাইয়ের ২টি ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। আরেক খবরে বলা হয়েছে, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে দুবাই বিমানবন্দর। এতে বিপাকে পড়েছেন বহু যাত্রী। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার শতাধিক উড়োজাহাজ অবতরণের কথা ছিল বিশ্বের ব্যস্ততম এ বিমানবন্দরে। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির কারণে তা বিঘিœত হয়েছে। আর যেসব ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সেগুলোও স্থগিত করা হয়।
এমন নজিরবিহীন বন্যার কারণ : এমন রেকর্ড বন্যায় নানা গুঞ্জন উঠেছে শহরটির কৃত্রিমভাবে তৈরি বৃষ্টি বা ক্লাউড সিডিং নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন, কৃত্রিমভাবে তৈরি বৃষ্টির ফলেই এই অবস্থা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ক্লাউড সিডিং হল কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটানোর একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। এর জন্য উড়োজাহাজ বা ড্রোনের সাহায্যে মেঘের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয় সিলভার আয়োডাইড বা পটাশিয়াম আয়োডাইড। এই আয়োডাইড মেঘে ঘনত্ব বাড়াতে কাজ করে। মেঘে ঘনত্ব বাড়লে বৃষ্টিকণা তৈরি হয়, ফলে বৃষ্টি বা বরফপাত হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সবসময় কাজ করে না। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে অবস্থিত এবং সাধারণত খুবই শুষ্ক অঞ্চল। যদিও এখানে সারা বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, তবে মাঝেমধ্যে ভারী বর্ষণও হয়ে থাকে। রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ অধ্যাপক মার্টেন অ্যাম্বাউম বলেন, পৃথিবীর এই অংশটি দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতহীন থাকার এলাকা। তবে এখানে অনিয়মিতভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে এখন যে বৃষ্টিপাতের ঘটনা- তা একেবারেই বিরল। তিনি বলেন, এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কতটা ভূমিকা পালন করেছে- তা সঠিকভাবে পরিমাপ করা এখনো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রাকৃতিক এবং মানবিক কারণগুলোর একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যার জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তবে রেকর্ড বৃষ্টিপাত অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালান বলেন, বৃষ্টির তীব্রতার রেকর্ড ভাঙার সঙ্গে উষ্ণতাপূর্ণ জলবায়ুর সম্পর্ক রয়েছে। উষ্ণ বাতাস বেশি জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে, ফলে এর সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা এবং বন্যা সম্পৃক্ত। সা¤প্রতিক একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশির ভাগ অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যার কারণ উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়া। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানের সিনিয়র লেকচারার ড. ফ্রেডরিক অটো বলেছেন, ‘মানুষ যদি তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে থাকে- তাহলে জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকবে, বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকবে এবং বন্যায় মানুষ প্রাণ হারাতে থাকবে।’