বিএনপি নেতারা সত্যিকারে ভারতীয় পণ্য বর্জন করছেন কি না তা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করব না বলে ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন, তাদের বউদের কতগুলো শাড়ি আছে। তারা কেন শাড়িগুলো এনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন না। বউদের শাড়িগুলো পুড়িয়ে দিলে বুঝব সত্যিকারের পণ্য বর্জন করেছেন তারা।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন এখানে (ঢাকায়) গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। যারা জাতির পিতার আহŸানে সাড়া দিয়ে ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জিয়াউর রহমান ছিল। সেই সময় যারা ব্যারিকেড দিয়েছে, জিয়াউর রহমানও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে আক্রমণ চালায় সেই আক্রমণকারীর একজন কিন্তু জিয়াউর রহমান। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে আগুন দিচ্ছেন যে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করবেন না। এরপর আবার দেখা গেল কিছু চাদর কিনে এনে পোড়ানো হলো। আচ্ছা শীতকাল তো চলে গেছে, এখন আর চাদর পোড়ালে কী এসে যায়। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করছেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে। তাহলে বউদের কাছ থেকে কেন শাড়িগুলো এনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন না। আপনারা সবাই একটু বিএনপি নেতাদের এ কথাটা জিজ্ঞেস করেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিএনপি নেতাদের বলব, যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, সবাই বাড়িতে গিয়ে তাদের বউরা যেন কোনো মতে কোনো ভারতীয় শাড়ি না পরেন; আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে সব এনে যেদিন ওই অফিসের সামনে পোড়াবেন, সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যিকারে ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন।
বিএনপি নেতারা কি ভারতীয় মসলা ব্যবহার বন্ধ করতে পারবেন, এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে আমরা পিঁয়াজ আমদানি করছি। রসুন-মসলাপাতি, আদা; ভারত থেকে যা কিছু আসছে তাদের কারও রান্নাঘরে যেন এসব মসলা দেখা না যায়। তাদের মসলা ছাড়া রান্না করে খেতে হবে। এটা তারা খেতে পারবেন কি না সেই জবাবটা তাদের দিতে হবে। বিএনপি নেতাদের পেলে তাদের বউদের শাড়ির কথা আর মসলার কথা বলবেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু আঁতেল আছে। বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যিনি। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, আজকের যে দলটি বড় বড় কথা বলে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করল। শুধু যুদ্ধ পরিচালনা নয়, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে ভাগ করা হয়। এক একটা সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেক্টরের যিনি দায়িত্ব ছিলেন তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পায়, জিয়াউর রহমান একটা বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক কর্মচারী ছিল জিয়াউর রহমান। এই কথা নিশ্চয়ই তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এটাও ভুললে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন মেজর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করেছি। ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯টা বছর এই জাতির দুর্ভাগ্যের বছর। এ দেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত। সেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বাধীনতার বিজয় এনে দেওয়া একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারীর জন্য সম্ভব। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এ দেশে ইতিহাস বিকৃতির পালা দেখেছি। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম হলো কলকাতায়। ভারত-পাকিস্তান যখন বিভক্ত হয়, তখন তারা কিন্তু পূর্ব বাংলায় আসেনি, তারা করাচিতে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেখানে পড়াশোনা করে। সেখানেই আর্মিতে যোগ দেয়। সেখান থেকে সামরিক অফিসার হিসেবে পূর্ব বাংলায় এসেছিল দায়িত্ব পালন করতে। এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু তার মনে তো পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে। তার প্রমাণও আছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো, এই প্রমোশনগুলা একে একে কে দিয়েছে। এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছেন। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও ভুলে যায়।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্য সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।