বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন ব্যারিস্টার সুমনের

0
70

অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গতকাল রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ে গিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদন করেন। এ সময় তিনি বেনজীরকে নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। আবেদনে বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। পরে এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের বলেন, বেনজীরের বিরুদ্ধে প্রায় হাজার কোটি টাকার যে রিপোর্ট আসছে, তার দুর্নীতির ব্যাপারে পত্রিকায় যে অভিযোগ আসছে, হেডলাইন হয়েছে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ইনকোয়ারির (অনুসন্ধান) ব্যবস্থা না দেখে দুদকে এসে নাগরিক হিসেবে আবেদন করে বলেছি, এর (অভিযোগের) ইনকোয়ারি করা দরকার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাবেক আইজিপি মহোদয়ের যদি এত সম্পদ থাকে তবে বাংলাদেশের পুলিশ ফোর্সের মধ্যে যারা সৎ অফিসার আছেন তারা খুব বেশি ফ্রাসট্রেটেড (হতাশাগ্রস্ত) হবেন এবং দেশে যারা সৎ আছেন তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আর যারা অসৎ আছেন, তারা মোটামুটি প্রতিযোগিতায় নামবেন। যদি অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে তাহলে তারা বলবেন আমরা সবাই বেনজীর হতে চাই। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশের জন্য এটা একটা ভয়ানক বিষয়! দুদক পদক্ষেপ না নিলে কী করবেন জানতে চাইলে সুমন বলেন হাই কোর্টে যাব। সুমনের আবেদনের পর সুপ্রিম কোর্টে দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, জানতে পেরেছি প্রাক্তন আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে যে খবর ছাপা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন দুদকে একটি দরখাস্ত দাখিল করেছেন। তার এই দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক আইন ও বিধি অনুসারে যাচাই-বাছাই করবে। কমিশন যদি মনে করে এটি দুদকের আওতার মধ্যে পড়ে তাহলে দুদক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। এক প্রশ্নে এ আইনজীবী বলেন, এখানে ব্যক্তি মুখ্য নয়। কে কী সেটি এখানে ইস্যু নয়। দুদক দেখে যে অভিযোগটি তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না। কমিশন দেখবে তথ্যে সত্যতা কতটুকু। দুদকে দেওয়া সুমনের আবেদনে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম আইজি ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু চাকরিতে থাকাকালে তার স্ত্রী ও মেয়েদের নামে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে, যে সম্পদগুলো তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে সুমনের আবেদনে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদের বৈধ আয়ের চেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে বেনজীর আহমেদ চাকরিতে থাকাকালে পদ-পদবি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। ফলে বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী সন্তানদের সম্পদের তদন্তে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে স¤প্রতি দুই পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। দুটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদের খোঁজ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি, বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচ তারকা হোটেলে শেয়ার, পূর্বাচলে সুবিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি, প্লট, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুরে অভিজাত রিসোর্টের সন্ধান মিলেছে ওই প্রতিবেদন দুটিতে। প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি যুক্ত করে দুদকে আবেদন করেন সংসদ সদস্য সুমন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here