শুক্রবার প্রথম দফায় লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ১০২টিতে ভোট নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ত্রিপুরায়, ৭৯.৯০ শতাংশ। এর পরই ভোট পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে, ৭৭.৫৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বিহারে, মাত্র ৪৭.৪৯ শতাংশ। গোটা দেশে গড় ভোটদানের হার ৬৪ শতাংশ। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় এক বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গোটা দেশে তাপপ্রবাহের মধ্যেও এত বেশি সংখ্যায় ভোটদানের ঘটনা নজিরবিহীন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার প্রথম দফায় ৬৪ শতাংশ ভোট পড়ার ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)’-এর পক্ষেই একতরফাভাবে এ ভোট পড়েছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, উনি (মোদি) এতটা নিশ্চিত হলেন কীভাবে? নির্বাচনের ফল তো এখনো বের হয়নি। গতকাল মহারাষ্ট্রের নানডের এলাকায় নির্বাচনি প্রচারসভায় বক্তৃতাকালে মোদি বলেন, ‘যারা গতকাল (শুক্রবার) ভোট দিয়েছিলেন, বিশেষ করে প্রথম ভোটারদের আমার তরফ থেকে অনেক ধন্যবাদ। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ভোট প্রদানের পর বুথ লেভেল থেকে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে এবং আমি যে তথ্য পাচ্ছি তাতে আমার বিশ্বাস মজবুত হচ্ছে যে প্রথম দফায় এনডিএ’র পক্ষেই একতরফাভাবে ভোটদান হয়েছে। এনডিএ’র জয় নিশ্চিত করায় আমি মাথা নত করে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসবে দেশবাসীকে আরও বেশি সংখ্যায় শামিল হওয়ার আহŸানও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যারা প্রথম দফায় ভোট দেননি তাদের বলব ভোট প্রদান গণতন্ত্রের শক্তিশালী মাধ্যম। আপনি যাকেই ভোট দিন না কেন, ভোট অবশ্যই দেবেন। ভোট দেওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনোরকম উদাসীনতা থাকা উচিত নয়। এটা ঠিক যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে ফলে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তারপর একদিকে বিয়ের মৌসুম, অন্যদিকে চাষিরাও মাঠে কাজ করছেন। তার পরও আমরা যখন দেশের সেনা সদস্যদের দিকে তাকাই, তখন দেখব যে কোনো মৌসুমেই জওয়ানরা নিজেদের কর্তব্যে অবিচল থাকে, কারণ দেশের জন্য তারা এ কাজ করে। আমার মনে হয় ভোটারদের মধ্যেও এ রকম মনোভাব থাকা উচিত। তাদের ভাবা উচিত যে ভোট দিয়ে আমি কারও উপকার করছি না বরং আমি ভোট দিয়ে আমার দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করছি।’ বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আজ না হলে কাল, কাল না হলে পরশু আপনারা নিশ্চয়ই সুযোগ পাবেন। তাই আমি বিরোধীরা, যাদের পরাজয় নিশ্চিত, তাদের দলের কর্মীদের বলতে চাই-ভোটারদের ভোট দিতে আপনারাও উদ্বুদ্ধ করুন। কেননা আগামী ২৫ বছর ভারতের মহত্ত¡ প্রমাণ করবে আর যার জন্য ভোটের শতকরা বৃদ্ধি করাটা খুবই জরুরি।’ বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’কে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, ‘নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতেই বিরোধীরা এ জোট গঠন করেছেন। ফলে প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটাররা সম্পূর্ণভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। নির্বাচনে লড়াই করার মতো প্রার্থী তাদের নেই। জোটের নেতারাই একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-‘যারা নিজেরাই একে অন্যকে বিশ্বাস করেন না, আপনারা কি তাদের বিশ্বাস করে ভোট দেবেন?’ প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পর তাঁকে পাল্টা নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা। তাঁর প্রশ্ন-প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বলতে পারেন যে প্রথম দফার ভোটে ভোটাররা কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে? এদিন কেরালার ত্রিশূরে একটি নির্বাচনি প্রচারের ফাঁকে প্রিয়াঙ্কা প্রশ্ন তোলেন-‘নির্বাচনের ফলাফল এখনো বের হয়নি, তার আগেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কীভাবে এটা জানলেন? আমি জানি না তাঁরা এতটা আত্মবিশ্বাসী কীভাবে হলেন!’ কংগ্রেস নেত্রী এও প্রশ্ন তুলেছেন-‘কীভাবে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি দাবি করে যে এ নির্বাচনে তারা ৪০০ আসন পাবেন? আমরা যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই মানুষ বলছে তারা পরিবর্তন চায়। আমি নিশ্চিত যে পরিবর্তন এবার আসবেই।’