ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘আপগ্রেড’ চায় বিএনপি

0
11

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আপগ্রেড’ চায় বিএনপি। আজ সন্ধ্যায় দলের নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে যদি আমরা সঠিক ভোটার তালিকা করতে চাই, তাহলে বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আমরা কম্পিউটার দিয়ে তা করতে চাই। কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে, সেটা এ্যাবসুলেটলি একুয়রেট হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং অপ্রয়োজনীয়। এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন, তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ যাবে। সেজন্য এই বিষয়ে (ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছি যে এটা আপগ্রেড হতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মঈন খান বিগত সরকারের আমলে আরপিও-এর সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ এনেছিল তা বাতিল, নির্বাচনী পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণ বিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ তারা সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড তৈরির জন্য যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, সে অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয়নি, যাতে নতুন কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি। নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেয়া ইত্যাদির কথাও বলেছি। আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন ও সংস্কারের কথা বলেছি। এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটা নির্বাচনের বেসিক কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। ওই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়া, আমরা বুঝিনি এটা কোন ধরনের এক্সসারসাইজ হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে, তালিকা ঘোষণার সময় এটাও ঘোষণা করা হয় যে কারো নাম যুক্ত না হলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন। কারো ব্যাপারে অভিযোগ থাকে যে তিনি বেঁচে নেই, এরকম কারো নাম তালিকায় থাকলে তা কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেল। এরপর নির্বাচনী প্রস্তুতি, সিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এতো বেশি সময় লাগার কথা না। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি, সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যাদের নেতৃত্বে অপকর্ম হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম হয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি। যেন তারা আগামীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না থাকে, সেই প্রস্তাবও রেখেছি। কাজেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকছে তার নির্বাচনী কোনো স্ট্যাক নেই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে, তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে আগে যুক্ত ছিল বা থাকতে পারে, তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদেরকে নিযুক্ত করা যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিতভাবে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, এক্সপার্ট কমিটির সাথে বসেছি, অনেকের সাথে কথা বলেছি। আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি সেগুলো অধিকাংশই আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়। প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয় যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন, কী কী ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার স্ক্রটনি করা তারপরে নির্বাচন কাজ অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি এসব কাজ গোছাতে প্রাকটিক্যালি দুই থেকে তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের আরো সংস্কার, প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে, এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে তিন থেকে চার মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমন্ডেশন ফাইনাল হওয়ার পরে আপনারা ধারণা পাবেন, প্রাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ার টেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে। এটাই ছিল সবচাইতে বড় বাধা একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে, কেয়ার টেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এসব উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারকেটাকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here