মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর ও সদরের আংশিক) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামি করে সিংগাইরে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং পুলিশ ও স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় ৯০ জনের নামে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ১১বছর পর গোবিন্দল গ্রামের মরহুম ইউসুব আলীর ছেলে মো: সহিদুল ইসলাম (৫০) মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি করেন।
মামলায় পুলিশসহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে।
গত ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিংগাইর পৌর এলাকার গোবিন্দল নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এমপি মমতাজ বেগম ছাড়া মামলায় অন্য আসামিরা হলেন সিংগাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মো: শাহজাহান, উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আ: মাজেদ খান, উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো: সায়েদুল ইসলাম, উপজেলা আ: লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুর রহমান শহিদ, পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবু নঈম মো: বাশার, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আব্দুস সালাম খান, মো: সমেজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: রমিজ উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রবিউল আলম উজ্জ্বল ও উপজেলা আ: লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আব্দুল বারেক খান।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে মো: শওকত হোসেন বাদল, মো: রমজান আলী, মো: আবুল হোসেন মোল্লা, গাজী কামরুজ্জামান, দেওয়ান মো: রিপন ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজুসহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারী রয়েছে অনেকেই।
মামলার বিবরণে বাদি উল্লেখ করেন, বিগত ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমার ভাই মো: নাসির ও আমি গোবিন্দল নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণে ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে আমার নিজের জমিতে কাজ করতে যাই। এ সময় বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগ তার সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী ও পুলিশ টহল দিচ্ছিল। এর কিছুক্ষণ পর একদল মুসুল্লি একটি মিছিল নিয়ে সিংগাইর উপজেলা সদরের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ তাতে বাঁধা প্রদান করে। এতে ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে মিছিলকারীরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এরই মধ্যে ওই স্থানে সরকারদলীয় কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ও পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় কিছু লোক বিদেশী রিভলবার, চাইনিজ পিস্তল, দেশীয় রামদা, ছামুরাই, চাইনিজ কুড়াল, ছেন ও কিরিচসহ হাজির হয়। এরপর তারা পুলিশের ছত্রছায়ায় ওই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামের নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার ভাই মো: নাসির এবং একই এলাকার আলমগীর, নাজিমুদ্দিন মোল্লা ও শাহ আলম মারা যায়। এছাড়া মামুন, হেলেনা, লিংকন, আনোয়ার, রুবেল, ফারুক, আলমাছসহ ১০-১২ জন মুমূর্ষু অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকে।
পরে এ ঘটনায় এজাহার করতে থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করে পুলিশ জানায়, ‘এই বিষয়ে মামলা হয়েছে। এতে বেশি বাড়াবাড়ি করলে এই মামলায় আসামি করে চালান দিয়ে দিব।’
মামলার বাদি আরো উল্লেখ করেন, রক্ষিত সুরতহাল ও পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের কপি তলব করে এনে এই মামলায় ব্যবহার করা আবশ্যক। এছাড়া মামলাটি জুডিসিয়াল তদন্তসহ আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবিও করেন তিনি।