যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি ইসরাইল

0
68

অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইসরাইল। গাজায় আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে শুক্রবার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রস্তাবে প্রথমে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং পরে ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
শনিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও সেই প্রস্তাবেই আবার সম্মতি দিয়েছে ইসরাইল। রোববার এমন খবরই নিশ্চিত করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সহযোগী ওফির ফালাক। তিনি বলেছেন, এই প্রস্তাব ত্রুটিপূর্ণ হলেও তাতে রাজি হয়েছেন নেতানিয়াহু। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর প্রধান বৈদেশিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ওফির ফালাক জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে গাজার যুদ্ধ শেষ করতে জো বাইডেন যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা গ্রহণ করেছেন নেতানিয়াহু। তবে তিনি বলেছেন, এই প্রস্তাব ত্রুটিযুক্ত এবং এটি নিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ আছে। ফালাক বলেছেন, ‘বাইডেন প্রস্তাবিত একটি পরিকল্পনার চুক্তিতে আমরা রাজি হয়েছি। এটি ভালো চুক্তি নয়। তবে আমরা জিম্মিদের মুক্তি চাই। তাদের সবাইকে মুক্ত করতে চাই। সেখানে আরও বিস্তারিত কাজ করার সুযোগ আছে।’ এ সময় তিনি চুক্তি বাস্তবায়নে শর্ত হিসেবে সব জিম্মির মুক্তি এবং হামাসের ধ্বংসেরও দাবি করেন। ওফির ফালাক বলেছেন, ‘আমাদের সব উদ্দেশ্য (হামাস নির্মূল হওয়া) পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে না।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাসের যুদ্ধের পর থেকেই ইসরাইলকে অস্ত্র সহায়তা করে আসছেন বাইডেন। তবে অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি বিষটি গুরুত্বসহকারে নেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। সবশেষ শুক্রবার তিনি তিন ধাপের একটি পরিকল্পনার কথা জানান। যা তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেও পাঠিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। বাইডেনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে একটি ‘পরিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, সেই সঙ্গে জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের জিম্মি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রথম পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়াসহ বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মানবিক সহযোগিতা পৌঁছানোর অনুমতি দেবে। এরপর যুদ্ধ শেষ করতে ইসরাইল-হামাস উভয় পক্ষ একটি উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবে এবং দ্বিতীয় ধাপে বাদবাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। সবশেষ অর্থাৎ তৃতীয় দফায়, ইসরাইলি বন্দিদের কোনো কিছু গাজায় থেকে গেলে তা ফেরানো এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা পুনর্র্নিমাণ করা হবে বলে জানানো হয়। এর আগেও, বাইডেন প্রায় একই ধরনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করলেও তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
এদিকে, নেতানিয়াহু তার জোট সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে গিয়ে ব্যাপক চাপে পড়েছেন। তার সরকারের দুই উগ্র ডানপন্থি অংশীদার জানিয়েছেন হামাসকে ছাড় দেওয়া হলে তারা সরকার থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সাবেক জেনারেল এবং মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ বেনি গান্তেজ বাইডেনের পরিকল্পনাটি বিবেচনা করতে চান। হামাস সাময়িকভাবে বাইডেনের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান শনিবার আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘বাইডেনের বক্তব্যে ইতিবাচক ধারণা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে আমরা এটিকে বিস্তৃত চুক্তি কাঠামোর মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে চাই, যা আমাদের দাবি পূরণ করবে।’ স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়াও হামাস গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনিদের অবাধ চলাচল এবং গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা চায়।
রোববার রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও উপত্যকায় থাকা বন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে বাইডেন যে পরিকল্পনা হাজির করেছেন, তা চূড়ান্ত করতে ইসরাইল ও হামাসকে তাকিদ দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে গাজার জনগণ, জিম্মি ও তাদের পরিবারে তাৎক্ষণিক স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার গত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এ নিয়ে দুই পক্ষকে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ করাতে পারেনি দেশগুলো।
রাফাহ ছেড়েছে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি: আন্তর্জাতিক সব ধরনের চাপ উপেক্ষা করে রাফায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা রাফাহ ছাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে রাফাহ ছেড়েছে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধের কথা জানিয়েছে জতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক শরণার্থী সংস্থা। রোববার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৩৭৯ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও ৮২ হাজার ৪০৭ জন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here