ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা হতে হলে মুসলিমদেরকে কয়েকটি শর্ত পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এ সবের মধ্যে রয়েছে দুয়ের বেশি সন্তান না থাকা, সন্তানদের মাদরাসায় না পড়ানো। আনন্দবাজার পত্রিকা।
চলতি মাসেই ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হয়েছে। সিএএ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপি বিরোধী দলগুলো সুর চড়াতে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটকে সিএএ চালু হতে দেবেন না, বলে দাবি করেছেন ওইসব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। এই আবহেই ‘বাংলাদেশী’ মুসলিমদের নিয়ে মন্তব্য করে লোকসভা ভোটের আগে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাস করিয়েছিল ভারতের মোদি সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি ওই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চান, তাহলে তা দেবে ভারত। কিন্তু সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিম স¤প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই ‘বৈষম্য’ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধী দলগুলো।
উল্লেখ্য, মুসলিমেরা আসামে ‘মিঞা’ নামে পরিচিত। তারা বাংলাদেশ থেকে গেছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। ওই ‘মিঞা’ স¤প্রদায়কে স্বীকৃতি দেয়ার প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেন, ‘আসামিয়া সমাজের কিছু সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং ঐতিহ্য রয়েছে। যদি আসামের অধিবাসী হতে হয় তবে সেইসব মেনে চলতে হবে।’ হিমন্ত জানান, কোনো পরিবারে যদি দুইয়ের বেশি সন্তান থাকে, তবে ‘বাংলাদেশি’ মুসলিমেরা আসামের বাসিন্দা হতে পারবেন না। এ ছাড়াও বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার শর্তও দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যদি এ রাজ্যের বাসিন্দা হতে হয় তবে নাবালিকার বিয়ে দেয়া যাবে না।’ পাশাপাশি হিমন্ত জানান, ছেলেমেয়েদের মাদরাসায় পড়ানো যাবে না। আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাদরাসার পরিবর্তে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে মনোযোগ দেয়া উচিত।’
আসামে হিমন্তের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০২৩ সালে রাজ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাল্যবিবাহ করার অভিযোগে প্রায় ৯ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০২২ সালে অসম মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪০ লাখ আসামিয়াভাষী মুসলিমকে ‘আদিবাসী আসামিয়া মুসলিম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আসামে দাবি করা হয়ে থাকে যে, আসামের মুসলিম স¤প্রদায়ের প্রায় ৩৭ শতাংশ ‘আসামিয়া মুসলিম’, বাকিরা ‘বাংলাদেশি’ মুসলিম। তাদের ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নেই মন্তব্য করে নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।