কোরবানি ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘তুফান’ সিনেমার ইতিহাসে দুই দশকের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ইতোমধ্যে সিনেমাটি সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ঝড় তুলার পাশাপাশি সর্বোচ্চ শোর রেকর্ড গড়েছে। তারপরও অগ্রিম টিকিট করতে গিয়েও তা মিলছে না। এ নিয়ে অনেক হলে টিকিট না পেয়ে দর্শকদের মধ্যে মারামারি ও হলে হামলার ঘটনাও ঘটছে। তবে সিনেমাটিতে এখন পর্যন্ত আয় কতো তা নিয়ে দর্শক ও সিনেমা সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তবে সপ্তাহ পেরোলেই ‘তুফান’ সিনেমার আয়ের রেকর্ড জানা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
দেশের সিনেমা শিল্পে চরম দুর্দিনে হঠাৎ তুফানের এমন দর্শক প্রিয়তা পেছনে সিনেমার কাহিনী নির্মাণ কৌশল সফলতার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন ছবিটির পরিচালক রায়হান রাফি। ছবিটি বাংলা সিনেমার অবস্থানকে কয়েক ধাপ ওপরে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন। এত দিন মানুষ বাংলা ছবি বলতে যা বুঝত, তুফান সেই ভাবনাকে পাল্টে দেবে।
রায়হান রাফি পরিচালিত ও শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমা শুরু থেকেই নানা কায়দায় আলোচনার তুঙ্গে ছিল। কারণ এবারই প্রথম ঢালিউড সিনেমায় শাকিব জুটি গড়েছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর সাথে। এরপর সিনেমাটি ১২৯টি হলে মুক্তির টিকিট নিয়ে হুলস্তুল পড়ে যায়। মুক্তির ৫ দিন পরও ছবিটি হাউজফুল চলার সাথে টিকিট সংটক চলছে।
সিনেমাটিতে শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে। শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের নাবিলা। আরো আছেন চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, গাজী রাকায়েত, সালাহউদ্দিন লাভলু, গাউসুল আলম শাওন প্রমুখ।
দর্শকরা বলছেন, পুরোপুরি অ্যাকশন ও কমার্শিয়াল ধাঁচের এ সিনেমায় কোনো বিনোদনের কমতি না নেই। আর এতে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় করা চরিত্রটি নিয়েও দর্শকদের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। দর্শকের সেই আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয় শাকিবের নতুন লুক আর উরাধুরা গান। তাই সিনেমাটি দেখতে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে দর্শক চাহিদা বাড়তে থাকায় হল মালিকরা শো বাড়িয়েছেন। যার কারণে বর্তমানে প্রতিদিন সিনেমাটি ৫৮টি শো চলছে।
এ প্রসঙ্গে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের দিনের আগে থেকেই অগ্রিম টিকিট ছাড়ার সাথে সাথে তুফানের বেগে সব টিকিট সোল্ড আউট। ঈদের দিন স্টার সিনেপ্লেক্সের সব আউটলেট মিলিয়ে ২২টি শো চালানো হয়েছিল। তারপরই সিনেমাটি দেখার জন্য এত দর্শকের চাপ তৈরি হয়েছে যে- বৃহস্পতিবার থেকে তার শো বাড়ানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ছাড়াও তুফান সিনেমার টিকিট সঙ্কট সারাদেশের প্রতিটি সিনেমা হলেই। দর্শকের চাপে রাত ১১টা ও ১২টার শো চালু করেছেন ময়মনসিংয়ের ছায়াবাণী প্রেক্ষাগৃহ, সিরাজগঞ্জের মিনি সিনেপ্লেক্স ‘রুটস সিনে ক্লাব’, সৈয়দপুরের তামান্না ডিজিটাল সিনেমা হলমালিকরা। তবে বন্যার প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে গ্র্যান্ড সিলেট সিনেপ্লেক্সের রাত ১১টার শোতেও উপচে পড়া ভিড় ‘তুফান’ দর্শকদের।
ছায়াবাণী প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, দর্শকের চাপে মঙ্গলবার থেকে ‘লেট নাইট শো’ চালাচ্ছেন তারা। সৈয়দপুরের তামান্না ডিজিটাল সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ তাদের ফেইসবুক পেইজে জানিয়েছে, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাত ১২টার শো তেও তুফান হাউসফুল।
এদিকে সিনেমাটির আয় কত এ নিয়ে এখনো কোনো অফিশিয়ালি তথ্য দেয়নি ‘তুফান’ কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে সিনেমাটির প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, আসলে মুক্তি পাওয়া সিনেমার আয় কত হচ্ছে, দর্শক চাহিদা কেমন তা দ্রুত জানার সুযোগ নেই আমাদের দেশে। অন্য দেশে বক্সঅফিস থাকায় এ সম্পর্কে দ্রুত সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে তা সম্ভব না হওয়ায় প্রযোজকরা অনেক বেশি সমস্যায় পড়ে।
প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল আরো বলেন, সিনেমা থেকে কত আয় হয়েছে সেটা আসলে ম্যানুয়ালি আমাদের সংগ্রহ করতে হয়। কোন সিনেমা হলে কত দর্শক তার হিসাব আসলে করতে সময় প্রয়োজন। শুধু একটা হিসাবই এখন আমার হাতে আছে তাহলো সিনেপ্লেক্সে প্রথম আড়াই দিনে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্রস সেল হয়েছে। সিনেপ্লেক্সের ইতিহাসে গত ২০ বছরে কোনো সিনেমার ক্ষেত্রে এটা হয়নি।
প্রসঙ্গত, তুফান সিনেমা দেখার পর এমন কোনো দর্শক এখনো পাওয়া যায়নি যারা সিনেমাটির খারাপ রিভিউ দিয়েছে, এমনই দাবি প্রযোজকের। সিনেমাটি দেখার জন্য মধুমিতা হলে ভাংচুর হয়েছে। দর্শক চাপে সিনেপ্লেক্স আর মাল্টিপ্লেক্স স্কিন দুটোতেই হাউজফুল ‘তুফান’।