ফরিদা ইয়াসমীনঃ নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির উচ্ছ্বাস আনন্দ এবং ব্যতিক্রমের আতিশয্যে ভরপুর ছিল প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার ৮ম বর্ষে পদার্পণ অনুষ্ঠান এবং সিবিএন টিভির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সিটি অফিসের কর্মকর্তা সংবাদপত্রসেবী, সম্পাদক, সাংবাদিক, লেখকসহ অগ্রসর জনসমাজের মেলা বসেছিল উডসাইডের গুলশান টেরেসে। কথায়, প্রতিশ্রুতিতে এবং কর্মে ভিন্ন ধারার অনুষ্ঠানে ঋদ্ধ হয়েছেন আগত সকল অতিথি।
পবিত্র রমজান এবং কর্মদিবসের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সময়মতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিথিরা। ২৭ মার্চ বুধবার বিকেল সারে চারটার দিকেই সিটি অফিসের কর্মকর্তাদের আগমন শুরু হয়। সিটি মেয়র আসার জন্য আগাম নিরাপত্তা টিমও যথাস্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। বিপত্তি বাঁধে ওজন পার্কে পুলিশের হাতে একজন বাংলাদেশি তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ফলে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামকে ভিন্ন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।
বিকেল ঠিক সাড়ে পাঁচটায় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার লেখক, সাংবাদিক রহমান মাহবুবের আমন্ত্রণে পত্রিকাটির সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী ও নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল হক মঞ্চে উপস্থিত হন। এসময় মেয়র অফিসের এথনিক ও কমিউনিটি মিডিয়া বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক হোজে বয়েনা, মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার, কারেকশন অফিসারদের সাংগঠনিক প্রধান কাজী হাসান, লেখক সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসকে নিয়ে প্রথম পর্বের আলোচনা শুরু হয়।
মীর বাশার তাঁর বক্তৃতায় বলেন, প্রথম আলো নিউইয়র্কে কমিউনিটির কথা বলে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের নতুন সহযোগী সংগঠন হিসেবে সিবিএন টিভি একইভাবে সবাইকে নিয়ে কাজ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সিটি অফিসের এথনিক মিডিয়া বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক হোজে বয়েনা বলেছেন শুরু থেকেই প্রথম আলোর সাথে সিটি অফিসের কার্যকর যোগাযোগ রয়েছে। যেকোনো কাজে, কমিউনিটির যে কোন প্রয়োজনে প্রথম আলো যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সিটি অফিস থেকেও এ পত্রিকার জন্য একই প্রতিক্রিয়ায় আমরা সাড়া দিয়ে থাকি। এ পত্রিকাটির মাধ্যমে এবং তাদের সিবিএন টিভির সাথে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রশংসার এবং সিটি অফিস সর্বতোভাবে এ প্রতিষ্ঠানটির পাশে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লেখক সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস বলেছেন, ” ৮ বছর আগে প্রথম আলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু করেছিল, কঠিন পরিশ্রম এবং প্রথম আলোর ভাবমূর্তি ধারণ করে তাদের এগিয়ে চলা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
অনুষ্ঠানে একপর্যায়ে যুক্ত হন নিউজার্সি রাজ্যের একমাত্র বাংলাদেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি কাউন্সিলউওম্যান শিফা উদ্দিন। প্রথম আলো পত্রিকার বিন্যাসের শাড়ীর সাজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রথম আলো পরিবারের নারী লেখক ও সাংবাদিকদের কাজকর্মের প্রশংসা করে শিফা উদ্দিন বলেছেন, ব্যতিক্রমী কাজের মাধ্যমে প্রথম আলো নারীদের সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় এ এক তাৎপর্যপূর্ণ কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, তাঁর বক্তৃতায় পত্রিকার প্রকাশনা থেকে শুরু করে নিউইয়র্কে এর এগিয়ে চলার নানা বাঁধা বিপত্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি ঢাকা প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক তাঁর পিতৃসম মতিউর রহমান এবং ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, প্রথম আলো যেমন করে কমিউনিটিকে নিয়ে, কমিউনিটির জন্য কাজ করেছে। একইভাবে সবাইকে, সকলের সহযোগিতা নিয়ে সিবিএন টিভিও গড়ে তুলে হবে। তিনি প্রথম আলো পত্রিকার কাণ্ডারি হিসেবে সহকর্মী মনজুরুল হকের নিরলস কাজের প্রশংসা করেন। মনজুরুল হক তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, প্রথম আলো পত্রিকার জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজের সন্তান জন্মের দিনক্ষণের কথাও জানাননি। কাজকে এভাবেই প্রাধান্য দেয়ার চর্চার মাধ্যমে পত্রিকাটির এগিয়ে চলা এবং সিবিএন টিভিও একইভাবে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে ইব্রাহীম চৌধুরী সিবিএন টিভির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং দর্শকদের স্ক্রিনে টিভির প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দেখানো হয়। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার দুইজন সকর্মিকে তাদের কাজের জন্য সম্মাননা জানানো হয়। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন পত্রিকাটির সাহিত্য সম্পাদক এইচবি রিতা এবং অন্যজন হচ্ছেন রিপোর্টার রুদ্র মাসুদ। তাদের নাম ঘোষণা করেন কবি রওশন হাসান এবং ফার্মাসিস্ট, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সুমাইয়া চৌধুরী।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্মানজনক ‘কবিতার এক পাতা’ র সম্পাদক ফারুক ফয়সল তাঁর বক্তৃতায় পত্রিকাটির যাত্রাপথ তুলে ধরেন এবং নানা কঠিন বাস্তবতার মধ্যে এ পত্রিকাটির সাথে তাঁর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও কবিতার উৎকর্ষতায় ভূমিকা রাখতে পারছেন বলে জানালেন।
প্রথম আলো নারী লেখক সাংবাদিকদের মধ্যে রওশন হক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, নিউইয়র্কে প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর এখানকার অনেকেই নিজেদের প্রতিভাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক হওয়া বা সাংবাদিক হওয়ার জন্য ভালোবেসে সবাই এক প্লাটফর্মে যুক্ত থাকতে পারছেন। তিনি বলেছেন, মান যাই হোক সবাই মুক্তভাবে এ পত্রিকার মাধ্যমে লেখালেখি করে নিজেদের উৎকর্ষ অর্জনে সক্ষম হচ্ছেন এবং এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তিনি সবাইকে
প্রথম আল উত্তর আমেরিকার লেখক সাংবাদিক এবং ‘টক অব দ্যা উইক’ অনুষ্ঠানের সংগঠকদের মধ্যে সোহানা নাজনীন, ফরিদা ইয়াসমীন এবং রোকেয়া দীপা বলেছেন, তারা নির্ভয়ে কাজ করার সাহস পেয়েছেন প্রথম আলোর মাধ্যমে এবং নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পেরেছেন। প্রথম আলো তাদের জন্য একটি ভালোবাসার প্লাটফর্ম বলে তারা উল্লেখ করেন। লেখক সাংবাদিক শেলী জামান খান, ভায়লা সালিনা, রুপা খানম, বিলকিস সুমি, সেমু আফরোজা, বদরুন নাহার, ইসমত হানিফা, কান্তা কাবির, মনীষা তৃষা তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেছেন, প্রথম আলো দূর দেশে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করছে এবং এ পত্রিকাকে তারা ভালোবাসার প্লাটফর্ম হিসেবে দেখে থাকেন।
কুইন্স ডেমোক্র্যাট পার্টির ডিসট্রিক্ট লিডার এট লার্জ অ্যাটর্নী মঈন চৌধুরী বলেছেন, প্রথম আলো পত্রিকার পাশে ছিলেন সব সময়। এখন সিবিএন টিভি করে কমিউনিটিকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে তারা যে সার্ভিস প্রদান করবে, তাঁর পাশে তিনি থাকবেন বলে উল্লেখ করেন মঈন চৌধুরী।
নারী সংগঠক সালমা ফেরদৌস বলেছেন, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা নারীদের নিয়ে কাজ করে নিউইয়র্কে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করেছে। সিবিএন টিভিও একইভাবে নারীদের প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রবীণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ প্রথম আলো পত্রিকার ৮ম বর্ষে পদার্পণে আশীর্বাদ প্রদান করেন। অপর প্রবীণ সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেছেন, কমিউনিটি নির্মাণে সংবাদপত্রই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রথম আলোর মতো সিবিএন টিভিও একই প্রত্যয় নিয়ে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। টাইম টিভির সিইও এবং বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের সহযোগী সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার পাশে আছেন বলে উল্লেখ করেন। অন্যান্য পত্রিকা সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোল্ডেন এজ হোমকেয়ারের সিইও এবং আজকাল পত্রিকার সম্পাদক শাহনেওয়াজ, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর, মুক্তচিন্তা সম্পাদক ফরিদ আলম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম, নিউইয়র্ক সময় পত্রিকার সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকু এবং প্রধান সম্পাদক দর্পন কবির, শওকত রচি, শামসুন নাহার নিম্মি, এনামুল হক, জলি রহমান, সাংবাদিক ফিরোজ কবির,রিমন ইসলাম,ড:বিলকিস দোলা, মোস্তফা অনীক রাজ প্রমুখ।
বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন এক লাইন গান গেয়ে প্রথম আলোর প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবং কথা বলেছেন শোটাইম মিউজিকের আলমগীর খান আলম, মঈনুল হক চৌধুরী হেলাল, সেকিল চৌধুরী,তোফায়েল চৌধুরী, রওশন জাহান, জন সংগঠক সৈয়দ ফজলুর রহমান, লায়ন আহসান হাবীব, জাকির হোসেন, কবি স্বপ্ন কুমার, কবি মাসুম আহমেদ, সৈয়দ উতবা, মিয়া মোহাম্মদ আছকির, লেখক ফজলুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল হাই, মোহাম্মদ কে আহমদ, ঊষা রহমান, ডেইজী, মাহবুব চৌধুরী, অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার, ইমাম কাজী কাইয়্যুম , মোহাম্মদ নাসির শিকদার, ঝর্না চৌধুরী, শামসুদ্দিন বশির, রানু ফেরদৌস,আব্দুল কাইয়ুম, আহমেদ হোসেন, ডাঃ এম হাসান, বেনজীর শিকদার, জাহিদা আলম, আমানউদ্দৌলা, মুকুল হক, আজাদ উদ্দিন, মামুনুর রশীদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ফারমিছ আখতার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনিজা রহমান, জয়তূর্য চৌধুরী, এডভোকেট জয় আচার্য, এডভোকেট শামীম আহমেদ সিদ্দিকী, ফরিদা ইয়াসমীন, প্রতীক রহমান, ফটো সাংবাদিক সানাউল হক, আমজাদ হোসেন, জুলহাস কবির, মোহাম্মদ দিপু, অনির্বাণ খন্দকার, এমবি তুষার, রেজাউল করিম রাজু, এম এইচ পাহলভি, সানজিদা উর্মী, সানজিদা আখতার, সিপিএ আবু নাসের, রিনা শাহা, মোহাম্মদ কে আহমেদ, সুজন মিয়া প্রমুখ।
ইমাম কাজী কাইয়্যুমের বক্তব্য রাখেন এবং ইফতারের জন্য আজান দেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। ইফতার ও নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই বলেছেন, এমন স্বতঃস্ফূর্ত অনুষ্ঠানে তারা কমই উপস্থিত হতে পারেন। সতর্ক ভাবে অসতর্ক অনুষ্ঠান বিন্যাসে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার ৮ম বর্ষে পদার্পণ এবং সিবিএন টিভির যাত্রা লগ্ন অনেকের কাছেই স্মরণীয় থাকবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা ৮ম বর্ষে পদার্পণ এবং সিবিএন টিভির উদ্বোধন উপলক্ষে ১১২ পৃষ্ঠার একটি পৃথক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করেছে এসেনসিয়াল হোম কেয়ার, রাজু ল’ ফার্ম এবং আব্রাহাম ল’ গ্রুপ। এছাড়া পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকসহ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী।