top-ad
১৯শে এপ্রিল, ২০২৪, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১
banner
১৯শে এপ্রিল, ২০২৪
৬ই বৈশাখ, ১৪৩১

বাঙালি কন‍্যা সঞ্চারী দাস মল্লিকের অস্কার জয়!

কলকাতা প্রতিবেদকঃ মহান চিত্র নির্মাতা সত‍্যজিৎ রায়ের অস্কার জয়ের অনেক বছর অতিবাহিত হয়েছে। উল্ল‍েখ‍্য অজস্র অর্জনে ভরপুর বিশ্ববরেণ্য এ নির্মাতার ক্যারিয়ার। প্রথম বাঙালি চলচ্চিত্রকার হিসেবে সত্যজিৎ রায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার অর্জন করে বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জল দিপালী শিখা প্রজ্জ্বলন করেন। এই মহান চলচ্চিত্রকারের সম্মানে ও ভালোবাসায় সেজে উঠেছিল সেদিন বিশ্বমঞ্চের মহান আসর অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার এর মঞ্চ। অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, সত্যজিৎ রায় তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’র জন্য অস্কার পেয়েছিলেন। এ তথ্যটি সঠিক নয়। তিনি কোনো নির্দিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার আসরের বর্ণময় মঞ্চে আরোহন করেননি। তাঁর আরো অনেক মহান অর্জনকে সম্মান জানাতে এই অস্কার আসর তাঁকে সম্মানিত করে। তাঁর চলচ্চিত্র পরিচালনার অসাধারণ দক্ষতা শৈলী, সংলাপ, চিত্রধারণ কুশলতা, শতভাগ সঠিক পরিবেশ সৃষ্টির পর চিত্র ধারণ, আলোর সঠিক ব‍্যবহার, সত‍্যিকার পরিবেশের সাথে মিশে চিত্রনাট্য তৈরী, জীবন্ত অভিনয় ধারা সৃষ্টি, সংগীতের জীবনমুখী প্রকাশ, অভিনয়ে সত‍্যের ছোঁয়া ও পরিচালনাসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯১ সালে অস্কার কমিটি তাঁকে ‘আজীবন সম্মাননা’ দেয়। অসুস্থতার কারণে তিনি পুরস্কার মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারেননি বাংলা চলচ্চিত্রের এই দিকপাল। মৃত্যুশয্যায় তার অস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতির ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীকালে অস্কার অনুষ্ঠানে দেখানো হয়। এই পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন।

অস্কারের আসরের কথা যখন বাঙ্গালীরা ভুলতেই বসেছিল। আর ঠিক সেই মুহুর্তে এই মহান দিকপালের পথ ধরে আরেক মেধাবী বাঙ্গালী কন‍্যা সঞ্চারী দাস মল্লিকের অস্কার জয়ের গল্প আনন্দের জোয়ার এনেছে বাংলা সংস্কৃতির অঙ্গন জুড়ে। দেশে বিদেশে ও বিশ্ব চলচ্চিত্র মঞ্চে। অগণিত প্রাণে আজ প্রীতির স্পন্দন তোমাকে ঘিরে। সাবাস সঞ্চারী এগিয়ে যাও দীপ্তপায়ে প্রত‍্যাশার দিগন্তজুড়ে। গড়ে তোল আপন ভূবন নবীণ সক্ষমতায়। সাজিয়ে দাও পথে রেখা নারীর নারায়ণী শক্তি ও মমতায়। মূর্ত হোক তোমার ক্ষমতা বিশ্বের নান্দনিক শিল্প ও চলচ্চিত্র বিজ্ঞানের অঙ্গনে। সাহস ও কর্মের স্বর্ণালী আভা ছড়িয়ে পড়ুক পূর্বশার প্রান্ত রেখায়। সৃষ্টি হোক নবীণ অধ‍্যায় বাংলা চলচ্চিত্রের হারানো গৌরবের তীর্থভূমিতে।

বাঙ্গালী মেয়ের কর্মের ঝংকারে আজ বিশ্ব আলোড়িত! এগিয়ে চলার দীপ্ত বাণী অনুরণিত হচ্ছে বিশ্ব অঙ্গনে চলচ্চিত্রের মহাআকাশ জুড়ে। বাঙ্গালীর নতুন স্বপ্নের সারথী আজ নবীণা সঞ্চারী দাস! দীপ্ত প্রত‍্যয় আজো বাঙ্গালী মনে দেদীপ‍্যমান। প্রাণবন্ত সঞ্চারী তার প্রমাণ। সুন্দর বর্ণময় কর্মের সাধনা আজো বাঙ্গালী মনে প্রাঞ্জল। যা অহর্নিশি স্বপ্ন আঁকে মনে শত উদ্দীপনায়। সোনালী স্বপ্নের পথ ধরে এ যাত্রা ক্রমাগত বর্ণময় আবির ছড়াবে আরো নতুন জয়ের দিগন্ত রচনায়; আর নতুন অর্জন ভীড় জমাবে আমাদের শ‍্যামল আঙ্গিনয় দেবী লক্ষীতুল‍্যা সঞ্চারীর মত আরো অনেকের হাত ধরে। যে স্বপ্ন সঞ্চারী সাজিয়েছেন মমতায়, কর্মে ও নব উদ্দীপনায় তা আরও অনেকের নতুন স্বপ্ন সাজিয়ে তোলবে বাংলার প্রান্তরে প্রান্তরে আবার। স্বপ্ন সাজাবে সন্ধ‍্যাপূজার তুলসীতলায় মঙ্গল প্রদীপ আলপনায়!

কলকাতার এই মেধাবী তরুণীর আজ অর্জন করেছেন অস্কার আসরের শিরোপা। সঞ্চারীর এই মহৎ অর্জনে সবাই গর্বিত। হাজারো আশির্বাদে সঞ্চারী আজ ধন‍্য। এমনই হোক পথচলা আরো অনেকের নতুন উদ্দীপনায় কর্মের নতুন জগত সাজাতে। সবার অকৃত্রিম আশির্বাদ ও ভালোবাসা এ পথকে প্রসন্ন স্নিগ্ধতায় সাজিয়ে দিবে এই আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে আবার যেন বিজ্ঞানী ডা. সুভাষ মুখার্জীর মত অবস্হা না হয়। যিনি ছিলেন এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বে দ্বিতীয় টেষ্ট টিউব বেবীর জনক। যাকে চরম অবহেলা, নিগ্রহ ও পাহাড়তুল‍্য মানসিক নির্যাতনের মধ‍্য দিয়ে এই বাঙ্গালীরা তাঁকে হত‍্যা করেছে। অথচ তাঁর অবদান স্বীকার করে তাঁকে একটু সহযোগিতা করলে একটা নবেল পুরস্কার আসতে পারতো বাঙ্গালীদের ঘরে। তা না করে তাঁকে চরম মানসিক নির্যাতন করে মেরেই ফেলল এই আত্মঘাতী গুণীজন বাঙ্গালীরা! হায়রে বাঙ্গালী গুণীজন! এত হীনমন‍্যতা? নিজেকে সম্মান দিতে শিখনি? কে দিবে এর উত্তর?

‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারারস’ স্বল্পদৈর্ঘ‍্য তথ্যচিত্রের জন্য সঞ্চারী এ বিরল সম্মান অর্জন করেছেন। শ্রেষ্ট পথ ধরে অগ্রগামী বাঙালী আবারো শ্রেষ্ট আসর সাজাবে বিশ্ব আঙ্গিনায়। নিজের সংস্কৃতি, সাহিত‍্য, সঙ্গীত, ভাষা ও শিল্পকর্মের প্রতি অধিক যত্নশীল হওয়া জরুরী। অতুল সম্ভাবনার রত্নভান্ডার এই বাংলা সংস্কৃতিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সংস্কৃতিকে জ‍্যোতির্ময় পথে নবীণ উদ‍্যমে সগৌরবে আবারো পথচলা শিখিয়েছেন বিশ্ববরেণ‍্য বাঙ্গালী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর অনন‍্য অসাধারণ সংস্কৃতি ভাবনায়। যা মুলত: সংস্কৃতিময় বাঙ্গালী প্রাণের মমতা, ভালোবাসা ও সৌন্দর্য‍্য থেকে উৎসারিত। তাঁর পরম মমতায় সাজানো সংস্কৃতির ভাবনায় বলেছেন “কথায় মাধুর্য‍্য, কর্মে কল‍্যাণবোধের ব‍্যঞ্জণা আর আচরণে সুরুচির সামগ্রিক লাবণ‍্যই সংস্কৃতি।” কি নেই এর মধ‍্যে? মানুষের মননের সাথে আধ‍্যাত্মিক জ‍্যোতিস্নাত ক্ষমতার অপূর্ব মিলন না হলে এমন ভাবনার জন্ম হয় না। সংস্কৃতির এমন নান্দনিক উপস্হাপন আমার জানামতে আর কোন ভাষায় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেই। এখানেই বাঙ্গালী সংস্কৃতির শ্রেষ্টত্ব ও বিশালত্ব। এর মধ‍্যে কি সম্পদ লুকিয়ে আছে যে এ অঙ্গনে বিচরণ করে সেই জানে। অন‍্য ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা করায় কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলা সংস্কৃতি আমাদের অস্হিত্ব। আমাদের প্রাণর স্পন্দন, আমাদের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে উপলব্দির অনুভূতি। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী বোম্বে চলচ্চিত্রে পা রেখেই বলেন আমি বাংলা বলতে পারিনা। এক্ষেত্রে মুখার্জী পরিবার এগিয়ে। এই সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন‍্য বাঙ্গালী সংস্কৃতি বরিষায় আবারো স্নাত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের অস্হিত্বের প্রতি; পরিচয়ের প্রতি অবহেলা করা যাবে না। এর সঠিক যত্ন নিলে অবশ‍্যই আরো সঞ্চারী সৃষ্টি হবে এই সংস্কৃতির অঙ্গনে। শুধু প্রয়োজন পরম শ্রদ্ধায় বাংলা সংস্কৃতির সেবা ও আনুগত‍্য। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বলয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে; মুক্ত রাখতে হবে আমাদের সংস্কৃতিকে। আর মনে সাজিয়ে তোলতে হবে বাংলা সংস্কৃতির বিশালত্বের ছবি। নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত‍্যকে শীর্ষাসনে প্রতিষ্টিত করার মন্ত্রে দীক্ষীত হতে হবে মনে প্রাণে। পরশ্রীকাতরতা থেকে মুক্ত হয়ে প্রতিভার মূল‍্যায়নে ও সম্মান প্রদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রয়াশে শিল্প, সংস্কৃতি এগিয়ে নিয়ে যাবার দীপ্ত বাসনায় উজ্জিবিত হওয়া খুবই জরুরী। যার ফলে আমরা চিনতে ও সম্মান দিতে শিখব নবীণা সঞ্চারী দাস ও অনাদরে হারিয়ে যাওয়া বিজ্ঞানী প্রথম এশিয়ান টেষ্ট টিউব বেবীর আবিষ্কর্তা ডা: সুভাষ মুখার্জীকে।

প্রতিভার সাথে বাঙ্গালীদের প্রাণের মিলন সুদীর্ঘকালের। শুধু প্রয়োজন প্রতিভার যত্ন নেয়া। সমাদরে ও উৎসাহে প্রতিভার কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়া। এর জন‍্য ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা দু’টি গুণের সমন্বয় খুব প্রয়োজন। এ দু’য়ের সমন্বয়ে ভালোবাসার পূর্ণতর রুপের প্রকাশ ও বিকাশ ঘটে। আর এই পটভূমিতে গুণের সমাদর হয় সঠিক তাৎপর্য ও মানে। সাম্রাজ্যবাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে নিজের অজান্তেই আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক সক্ষমতাকে ভুলে গিয়ে অন‍্য পথে পা বাড়িয়েছি বারে বারে। এখানে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে একটু আলোকপাত করা দরকার। কোন একটি দেশের, অঞ্চলের বা জনগোষ্টীর সংস্কৃতি যখন অন‍্য বা অন্যান্য সংস্কৃতি দ্বারা আক্রান্ত হয় বা অন‍্য সংস্কৃতি যখন প্রতিষ্টিত সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে ধ্বংস করে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এবং নিজের সংস্কৃতির স্থান যখন অন‍্য সংস্কৃতি দখল করে নেয় তখন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এই অবস্হাকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বলা হয়। আ যখন প্রতিষ্টিত সাংস্কৃতিক বলয়ে অন‍্য সংস্কৃতি আধিপত‍্য বিস্তার করে তাকে বলা হয় সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ।

এ নেশায় যখন মানুষ একবার হাবুডুবু খায় তখন সে নিজের ঐতিহ্য ও অস্হিত্বকে ভুলে যায়। নিজ কাননে পুষ্ফুটিত কুসুমের সুবাস ভুলে অন‍্যের কৃত্রিম সুগন্ধে বিভোর হয়। ঠিক তেমনিভাবে অনেকক্ষেত্রে আমরা ভুলে গেছি পরধন ও পরসংস্কৃতি কখনও আপন ধন ও আপন সংস্কৃতি হয় না। বেলা শেষে ফিরে আসা আপন আলয়ে। সুখোর্জন বিহীন ক্লান্ত পথিকের মত। শুধু পথি মধ‍্যে সময়ের অপচয়; অনাদরে অবহেলায় পথ চলা। অগ্নিসম তপ্ত এ যন্ত্রনা বাংলা মহাকাব‍্যের কবি মাইকেল মধুসুধন দত্ত ছাড়া কে বা জানে এর মর্মবদনা অন্তর দিয়ে? তাই আসুন আমাদরে এলোমেলো সাংস্কৃতিক পদযাত্রা সমাপ্ত করে বর্ণিল আবেশে পরম আন্তরিকতায় আবারও সাজিয়ে তুলি আমাদের আপন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। উদ্দীপ্ত হই আপন কর্ম ও সধনায়। সত‍্যিকার সাধনার পথ কেউ রুখতে পারেনা। সোনালী অর্জন অবশ‍্যই হাতছানি দিবে স্বপ্ন জয়ের বিশ্বাঙ্গনে। আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা কেউ রুদ্ধ করতে পারবে না। এ প্রচেষ্টা হোক দুই বঙ্গের একত্রে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাঙ্গালীদের সমন্বয়ে। তাহলেই অর্জিত হবে আমাদের সাংস্কৃতিক বিজয়। আর বাঙ্গালী সংস্কৃতি নেতৃত্ব দিবে বিশ্ব সাংস্কৃতিক অঙ্গন। জন্ম নিবে শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত‍্য, সিনেমা ও সঙ্গীত অঙ্গনে মেধাবী সঞ্চারী দাসেরা। আজ থেকে এটিই হোক আমাদের ব্রত।

শৈলেন কুমার দাশ, কলকাতা

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় খবর