top-ad
১৬ই এপ্রিল, ২০২৪, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১
banner
১৬ই এপ্রিল, ২০২৪
৩রা বৈশাখ, ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়াচ্ছে গ্যাসের চুলা

নিউইয়র্ক ডেস্ক : রান্নার কাজে সারা বিশ্বেই গ্যাসের ব্যবহার রয়েছে। তবে রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে সমপ্রতি উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাসের চুলার ব্যবহার বন্ধ নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়ে গত ১৭ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। গত ৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংস্থা কনজ্যুমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশনের (সিপিএসসি) অন্যতম কমিশনার রিচার্ড ট্রুমকা জুনিয়র জানান, তারা গ্যাস হাব নিষিদ্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এটিকে ‘গোপন বিপদ’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার এই মন্তব্যে ফুঁসে ওঠেন রক্ষণশীলরা। অনেকেই এর জন্য সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন। টেক্সাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান রনি জ্যাকসন টুইটারে ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের উন্মাদরা যদি চুলা কেড়ে নিতে আসে, তারা আমার মৃতের মতো ঠাণ্ডা হাত থেকে সেটি ছিনিয়ে নিতে পারে। এসো, নিয়ে যাও!’ অ্যান্ড্রু নামে টেলিভিশনের এক তারকা শেফ ওই পরিকল্পনার প্রতিবাদে টেপ দিয়ে নিজেকে চুলার সঙ্গে বাঁধেন। এমনকি কিছু ডেমোক্র্যাটও ক্ষোভপ্রকাশ করেন। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সিনেটর জো মানচিন এই নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনাকে ‘বিপর্যয়ের রেসিপি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু কেন গ্যাসের চুলা যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতির যুদ্ধের অংশ হয়ে গেল – এবং গ্যাসের চুলা আসলেই বন্ধ করা হবে কি না?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৮ শতাংশ পরিবারে গ্যাসের চুলা রয়েছে। যদিও রাজ্যভেদে এর হার ভিন্ন হতে পারে। অনেকের মতে, এগুলো বৈদ্যুতিক চুলার তুলনায় সস্তা এবং বেশি কার্যকরী, এমনকি গ্যাসের চুলায় রান্না করা খাবারের স্বাদও নাকি বেশি ভালো। ১৯৩০-এর দশক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিজ্ঞাপনে ‘কুকিং উইথ গ্যাস’ (গ্যাস দিয়ে রান্না)। এটি মার্কিনিদের মনে পাকাপোক্ত আসন করে নিয়েছে। আমেরিকান গ্যাস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি বাণিজ্যিক সংগঠন কুকিং উইথ গ্যাস ডট অর্গ ওয়েবসাইটে নিয়মিত রেসিপি প্রকাশ করে থাকে। স্পনসর করা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দেশটির ইনফ্লুয়েন্সাররাও তাদের গ্যাসের চুলা নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন। কিন্তু সমস্যা হলো, এসব চুলা নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডসহ বিভিন্ন দূষণকারী পদার্থ নির্গত করে এবং হাঁপানিসহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত নানা ঝুঁকি তৈরি করে। ভেন্টিলেশন বা বায়ু চলাচলের উন্নত ব্যবস্থা থাকলে এসব বিপদের ঝুঁকি হয়তো কিছুটা কমানো সম্ভব। কিন্তু তাতেও অভ্যন্তরীণ দূষণ খুব একটা কমে না। জ্বলন্ত গ্যাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনসহ নানা গ্রিনহাউস গ্যাসও নির্গত হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রাহকদের গ্যাসের চুলার পরিবর্তে বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহারের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে ৮৪০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু দেশটিতে যেহেতু ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎই গ্যাস ও কয়লা পোড়ানোর মাধ্যমে উত্পাদিত হয়, তাই গ্যাসের চুলার বিকল্পও পুরোপুরি সবুজ বা নিরাপদ থাকছে না। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর চেষ্টায় বেশ কিছু ডেমোক্র্যাট-শাসিত সিটি কাউন্সিল গ্যাসের ব্যবহার সীমিত করতে আইন পাস করেছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শহর হিসেবে নতুন ভবনগুলোতে হিটিং ও রান্নার কাজে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বার্কলে। সে সময় ক্যালিফোর্নিয়ার রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করেছিল (পরে এক বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন)।
চলতি বছর নিউইয়র্ক সিটিতে কিছু নতুন ভবনে গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের জন্য প্রস্তাবিত অনুরূপ পরিকল্পনাটি গত বছর আইনসভায় পাস হতে ব্যর্থ হয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২০টির বেশি রাজ্য স্থানীয় নিষেধাজ্ঞাগুলো আটকানোর জন্য আইন চালু করেছে। এসব রাজ্যের মধ্যে বেশিরভাগই রিপাবলিকান-শাসিত এবং কিছু রাজ্য গ্যাস উত্পাদকও। আপাতত মার্কিনিদের রান্নার অভ্যাসে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী নয়। গত ১১ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, এই মুহূর্তে বাইডেন প্রশাসনের গ্যাসের চুলা নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই। স্বাধীন সংস্থা সিপিএসসি-ও ‘কারো গ্যাসের চুলা কেড়ে নিতে আসছে না’ বলে টুইটারে জানিয়েছেন কমিশনার ট্রুমকা।
এরপরও জাতীয়ভাবে যদি কখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, সেটি হতে পারে বড়জোর নতুন কুকারের ওপর, পুরোনো গ্যাসের চুলায় নয়। সিপিএসসি’র বর্তমান অগ্রাধিকার হলো নতুন পণ্যের মান উন্নত করা। এটি গ্যাসের চুলা ‘রক্ষাকারীদের’ কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া উচিত।

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় খবর