বাংলাদেশীদেরকে ভিসা দিচ্ছে না ভারত, সুযোগ নিচ্ছে চীন

0
32

ভারত বাংলাদেশকে স্বাভাবিক হারে মেডিক্যাল ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতি চীনের জন্য বিরল এক সুযোগ তৈরি করেছে। তারা বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণ এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার সুযোগ পাচ্ছে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশীদের জন্য ভারতের দেয়া ভিসার বেশিরভাগই ছিল মেডিক্যাল ভিসা। কারণ তারা সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা এবং বাংলা ভাষাভাষী হাসপাতাল কর্মীদের সুবিধা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারত এই ভিসার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে, যা বাংলাদেশীদের চীন ও থাইল্যান্ডের মতো অন্যান্য দেশে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে।

আগস্ট থেকে ভারত প্রতিদিন হাজারেরও কম মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে, যা আগে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজারের মতো ছিল। এই সীমাবদ্ধতার পেছনে ভারতের পক্ষ থেকে কর্মী সঙ্কট এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের যুক্তি দেখানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের সাথে সম্পর্কের শীতলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাই এর মূল কারণ।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শীতলতা লক্ষ্য করা গেছে। শেখ হাসিনার সরকার ভারত-বান্ধব হলেও নতুন সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে পদচ্যুত হওয়ার পর তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফেরানোর অনুরোধ করলেও ভারত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

২০২৩ সালে ভারত ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশীকে ভিসা দিলেও মেডিক্যাল ভিসার সংখ্যা কমানো চীনের জন্য এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, বাংলাদেশীদের জন্য চিকিৎসা পর্যটনের নতুন বাজার খুলতে চীন আগ্রহী। ইতোমধ্যেই একদল বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য চীনের ইউনান প্রদেশ সফর করেছেন, যেখানে চীন বাংলাদেশীদের চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে। চীনের কমপক্ষে ১৪টি কোম্পানি বাংলাদেশে ২৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশের কার্যত প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূস চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে আলোচনার জন্য শিগগিরই বেইজিং সফর করবেন।

ভারত যদিও চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে, তবে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চীন ইতোমধ্যেই ঢাকায় একটি নতুন হাসপাতাল খোলার কথা বিবেচনা করছে এবং বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সহযোগিতা কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয় এবং বাইরের কোনো প্রভাব এতে বাধা সৃষ্টি করবে না।

ভারত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারত বলছে, ঢাকায় তাদের দূতাবাসে কর্মী সঙ্কট এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভিসা সংখ্যা কমানো হয়েছে।

ভারতীয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরলে তারা পুনরায় ভিসার সংখ্যা বাড়াবে। তবে তারা দাবি করেছে, কিছু লোক মেডিক্যাল ভিসার সুযোগ নিয়ে অন্য কারণে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, যা এই সীমাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।

এদিকে, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক আরো গভীর হচ্ছে। চীনের আমন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিরোধী দলের এক প্রতিনিধিদল বেইজিং সফর করেছে, যা দুই দেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত দেয়।

এই সপ্তাহে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন দেখা করেন এবং আলোচনার সময় শীর্ষ সৌরশক্তি সরবরাহকারী লংগি গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশে একটি অফিস স্থাপন এবং উৎপাদনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ চীনের জন্য তার বাজার আরো উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত।

ওয়েন ‘পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়’ নিয়ে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার সাথেও আলোচনা করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

অন্যদিকে, আগামী মাসে থাইল্যান্ডে একটি সম্মেলনের ফাঁকে ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দু’টি ভারতীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

একজন ভারতীয় বিশ্লেষকের মতে, চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া একটি বড় কৌশলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে চীন অন্যতম বৃহৎ খেলোয়াড় হয়ে উঠছে।’

তিনি আরো যোগ করেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে ভারতের ঐতিহ্যবাহী প্রাধান্য এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।’

সূত্র : রয়টার্স

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here