আবারো মোদিই থাকছেন গদিতে

0
80

বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংসতা ও গন্ডগোল হলেও গতকাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে লোকসভার সপ্তম ও শেষ দফার ভোট। এদিন ৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৫৭টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসন। ভারতের লোকসভার মোট আসন ৫৪৩টি। ভোট শেষ হওয়ার পর এখন আলোচনা নরেন্দ্র মোদিই কি ক্ষমতায় থাকছেন। নাকি দিল্লির গদিতে বসবেন অন্য কেউ? বুথফেরত জরিপ বলছে, তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকছেন মোদিই।
ভোট শুরুর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গা থেকে সহিংসতার খবর আসে। যাদবপুরে দুই দলের লোকদের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। কোথাও ইভিএম পানিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ঘিরে বিক্ষোভ, ‘ফিরে যাও’ স্লোগান, বিরোধীদলের কর্মী-সমর্থকদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া, আবার কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন বিরোধী দলের প্রার্থী। এরকম নানা ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত ছিল পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ময়দান।
এদিকে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ভোট গণনার দিন মঙ্গলবার ভারতে নতুন সূর্য উদয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি লেখেন, ‘কেন্দ্রের সরকার অহংকার এবং অত্যাচারের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাই, আগামী ৪ জুন মঙ্গলবার সূর্য দেশের জন্য নতুন ভোর বয়ে আনবে।’ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা শনিবার ভোট দিয়ে তার দল নির্বাচনে জিতে তৃতীয়বারের জন্য বিজেপি সরকার গঠন করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের মধ্যে ৩০টা বিজেপি দখল করবে, ওড়িশায় ২১টার মধ্যে ১৮টা দখল করবে। ঠিক একইভাবে তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ুতেও আমাদের খুব ভালো ফল হবে। কেরালায় আমরা বেশ কিছু আসনে জয় পাব। প্রত্যেকটা জায়গায় আমাদের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার বাড়বে।’ শনিবার দিল্লিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন বিরোধী দল ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা। মূলত ৪ জুন নির্বাচনি ফলাফলে পর জোটের রণকৌশল স্থির করতেই এই বৈঠক। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কংগ্রেস, সিপিআইএম, সমাজবাদী পার্টি, সিপিআই, ডিএমকে, জেএমএম, আম আদমি পার্টি, এনসিপিসহ জোটের শরিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নেত্রী মেহেবুবা মুফতি অনুপস্থিত ছিলেন।
জরিপে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসছে বিজেপির জোট : ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফা ভোট গ্রহণের পরপরই চালানো হয় এক্সিট পোল এক্সিট পোল (বুথ ফেরত জরিপ)। সর্বভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি একাধিক বেসরকারি সংস্থাও এই এক্সিট পোল চালায়। একাধিক জরিপে দেখা যায়, আবারও ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট’ (এনডিএ)। লোকসভার আসন ৫৪৩টি। ম্যাজিক ফিগার অর্থাৎ সরকার গড়তে গেলে প্রয়োজন ২৭২টি আসন।
রিপাবলিক টিভি-পি মার্ক-এর এক্সিট পোল অনুসারে এনডিএ পেতে চলেছে ৩৫৯ আসন, বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (ইন্ডিয়া) জয় পেতে পারে ১৫৪ আসনে, অন্যরা ৩০ আসনে জয় পেতে পারে। তাদের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭২ শতাংশ মুসলিম ভোট গেছে কংগ্রেসের পক্ষে, ৪৯ শতাংশ নারী ভোট গেছে বিজেপির পক্ষে। নিউজ নেশন-এর জরিপ অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ৩৪২-৩৭৮ আসন, ইন্ডিয়া পেতে পারে ১৫৩-১৬৯ আসন এবং অন্যরা পেতে পারে ২১-২৩ আসন। ইন্ডিয়া নিউজ-ডি ডাইনামিক্স যৌথ জরিপ অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ৩৭১ আসন, ইন্ডিয়া পেতে পারে ১২৫ আসন, অন্যরা পেতে পারে ৪৭ আসন।
রিপাবলিক ভারত-ম্যাট্রিজ যৌথ জরিপ অনুযায়ী এনডিএ জোট পেতে পারে এনডিএ জোট পেতে চলেছে ৩৫৩-৩৬৮ আসন, বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়া জয় পেতে পারে ১১৮-১৩৩ আসন, অন্যরা ৪৩-৪৮ আসনে জয় পেতে পারে। জন কি বাত-এর জরিপ অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ৩৬২-৩৯২ আসন, ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১৪১-১৬১ আসন, অন্যরা পেতে পারে ১০-২০ আসন। দৈনিক ভাস্কর-এর জরিপ অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ২৮১-৩৫০ আসন, ইন্ডিয়া পেতে পারে ১৪৫-২০১ আসন, অন্যরা পেতে পারে ৩৩-৩৯ আসন। এনডিটিভি-এর ‘পোল অব পোলস’ অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ৩৫৮ আসন, ইন্ডিয়া পেতে পারে ১৪৮ আসন, অন্যরা পেতে পারে ৩৭ আসন। শেষবার ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫৩ আসনে জয় পায় এনডিএ জোট, এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৩ আসনে জয় পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট’ (ইউপিএ) ৯১ আসনে জয় পায়। এর মধ্যে কংগ্রেস এককভাবে ৫২টি আসনে জয় পায়। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, গত নির্বাচনের মতো এবারও কর্ণাটক (মোট আসন ২৮), উত্তরপ্রদেশ (৮০), বিহার (৪০), হরিয়ানা (১০), মধ্যপ্রদেশ (২৯), অসম (১৪), রাজস্থানে (২৫), গুজরাট (২৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (২৫), ঝাড়খন্ড (১৪), ছত্তিশগড় (১১), ওড়িশা (২১), হিমাচল প্রদেশ (৪), মহারাষ্ট্র (৪৮) এর মতো একাধিক রাজ্যে ভালো ফল করতে চলেছে এনডিএ। ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসভার আসন উত্তরপ্রদেশে। দেশটির রাজনীতিতে কথিত আছে, উত্তরপ্রদেশ যার, ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাও তার। এই রাজ্যে মোট লোকসভার আসন ৮০টি। রিপাবলিক টিভির এক্সিট পোল অনুযায়ী এনডিএ পেতে পারে ৬৯ আসন, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া পেতে পারে ১১টি আসন।
অন্যদিকে একাধিক সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভালো ফল করতে পারে তামিলনাড়ু (৩৯), কেরালা (২০), তেলেঙ্গানার (২৮) মতো রাজ্যগুলোতে। বিভিন্ন সংস্থার এক্সিট পোল অনুযায়ী দিল্লিতে এবারও ভালো ফল করতে চলেছে এনডিএ। জি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী লোকসভার সাতটি আসনের মধ্যে প্রতিটিতে জয় পেতে চলেছে বিজেপি। ইন্ডিয়া টিভি-সি ভোটারের এক্সিট পোল অনুযায়ী বিজেপি পেতে পারে ৬-৭ আসন, কংগ্রেস পেতে পারে ১টি আসন। পশ্চিমবঙ্গে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতানৈক্য থাকায় এই নির্বাচনে আলাদাভাবে লড়েছে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দুই শরিক দল কংগ্রেস ও তৃণমূল। এ রাজ্যে ৪২টি লোকসভার আসন রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার এক্সিট পোল অনুযায়ী এই নির্বাচনে ভালো ফল করতে চলেছে বিজেপি। সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল জি নিউজ-সি এনএক্স-এর এক্সিট পোল অনুযায়ী বিজেপি পেতে পারে ২১-২৫ আসন, তৃণমূল পেতে পারে ১৬-২০ আসন। রিপাবলিক টিভি-পি মার্ক-এর জরিপ অনুযায়ী ২২ আসনে জয় পেতে পারে বিজেপি, ২০ আসনে জয় পেতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস, সেক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং সিপিআইএমকে খালি হাতেই ফিরতে হতে পারে। রিপাবলিক ভারত-ম্যাট্রিজ যৌথ জরিপ অনুযায়ী বিজেপি জয় পেতে পারে ২১-২৫ আসনে, তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ১৬-২১ আসন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে তৃণমূল জয় পায় ২২টি আসনে, বিজেপি পায় ১৮টি আসনে। কংগ্রেস ২টি আসনে জয়লাভ করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here