নায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে পরীমণি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন আদালত। একই সাথে পরীমণি ও জুনায়েদকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে।
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলাম গতকাল এই আদেশ দেন। সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার সিজেএম আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: সাহাদাত হোসেন।
পিবিআই প্রতিবেদনে বলা হয়, বোট ক্লাবে সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ নেন নায়িকা পরীমণি, পার্সেল না দেয়ায় তাণ্ডব চালান। ক্লাবে তাদের খাওয়া দুই বোতল বøু লেবেলের দাম ও পার্সেলে নেয়া দুই বোতল ওয়াইনের দাম পরিশোধ না করেই তারা ক্লাব থেকে চলে যান। এই চারটি বোতলের দাম ৮৭ হাজার ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া ক্লাবের বারের ভেতরে গøাস, অ্যাশট্রে, বোতল ভাঙচুর করায় আনুমানিক ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকী অমির সাথে জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে মাঝে মধ্যে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ হতো এবং একে অপরের বাসায় আসা যাতায়াত ছিল। ২০২১ সালের ৮ জুন পরীমণির অনুরোধে অমিসহ তারা চারজন অমির কালো রঙের জিপ গাড়িতে করে রাত ১২টা ২২ মিনিটে ঢাকা বোট ক্লাবে আসেন। গাড়ির পেছনে পরীমণির সাদা রঙের খালি জিপগাড়ি বোট ক্লাবে প্রবেশ করে।
ক্লাবের দোতলায় উঠে প্রথমে পরীমণি ও ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি বারের সামনে থাকা টয়লেট ব্যবহার শেষে বারের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং টিভির সামনের টেবিলে বসেন। টেবিলে সাক্ষী অমিও বসেন। সৌজন্যের খাতিরে অমি তাদেরকে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার নিজ খরচে পরিবেশন করে আপ্যায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরীমণি একটি এক লিটারের বøু-লেবেল মদের বোতল অর্ডার করেন।
পরীমণি ও তার সাথে থাকা জিম ও বনি নিমিষেই সেই বোতলের অ্যালকোহল পান করে বোতল খালি করে ফেলেন এবং অনুরূপ আরেকটি বোতলের অর্ডার করেন। তারা ওই বোতলের আংশিক মদ পান করেন। একপর্যায়ে তাদের ২-৩ টেবিল পেছনে বোট ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাছির উদ্দিন মাহমুদকে আরো দুজন ব্যক্তির সাথে বসা দেখতে পান অমি। তখন অমি পরীমণিকে নিয়ে নাছির মাহমুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং পুনরায় তাদের টেবিলে এসে বসে মদ্যপানসহ গল্পগুজব করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর ড্রিংকস শেষে পরীমণি ওয়েটারকে আরো এক লিটারের তিনটি বøু লেবেল মদের বোতলসহ দুই বোতল ওয়াইন পার্সেল দেয়ার জন্য অর্ডার করেন।
ওয়েটার তখন পরীমণিকে দুই বোতল ওয়াইন পার্সেল দিলেও বøু লেবেল মদের বোতল স্টকে না থাকায় পার্সেল দিতে পারেননি। কিন্তু পরীমণি জোর করে ওই বোতল নিতে চান এবং টেবিলে হট্টগোল করতে থাকেন। তখন পরীমণি বনিকে থাপ্পড় মেরে বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মাতাল মনে হয়?’ পরীমণির সাথে থাকা জিম তাকে শান্ত করতে গেলে তাকেও পরীমণি থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পরীমণি খুবই উত্তেজিত হয়ে টেবিলের ওপর থাকা গøাস, অ্যাশট্রে, বোতল ফ্লোরে এ দিক-ও দিক ছুড়তে থাকেন। তখন নাছির মাহমুদ ক্লাবের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পরীমণিকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে পরীমণি আরো ক্ষেপে গিয়ে একটি অ্যাশট্রে নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারেন। যা তার ডান কানের ওপরে মাথায় লাগে।
তখন জিম তেড়ে এসে বাদি নাছির মাহমুদকে গালমন্দ করতে করতে ২-৩টা কিলঘুষি মারেন। এরপর আবারো পরীমণি বারের ভেতরে যত্রতত্র গøাস ছুড়ে ভাঙচুর করতে থাকেন। একটি গøাস নাছির মাহমুদের বুকে লাগলে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন নাছির মাহমুদ বোট ক্লাব ত্যাগ করে চলে যান।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো: মনির হোসেন বলেন, মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে সচেতনতার সাথে কাজ করেছি। বাদির অভিযোগের বিষয়ে নিবিড় তদন্ত করে এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি। ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী আছে, মেডিক্যাল রিপোর্ট আছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদি হয়ে পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন, পরীমণির সহযোগী ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিম।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জুনায়েদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসিরকে মারধর করার অভিযোগের সত্যতা তদন্তে পেয়েছে পিবিআই। অপর দিকে পরীমণির ছোড়া মদের গøাসে নাসিরের আঘাত লাগার ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে।