জন্মভূমি প্রতিবেদক : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রী হরি মন্দির ব্যক্তিমালিকানা থেকে অবমুক্ত হয়ে তাদের প্রিয় সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীহরিচাঁদ গুরুচাঁদ মতুয়া মিশনের নামে হস্তান্তরিত হয়েছে।
জানা যায়, গত ২রা জুলাই সোমবার নিউইয়র্ক রাজ্যের আইন-কানুন মেনে আইনবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে নেতৃস্থানীয় মতুয়া ভক্ত সহ শ্রীহরি মন্দিরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই উপস্থিত ছিলো। সমস্বরে ধ্বনি দিয়ে সকলে এই মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
উল্লেখ্য এতোদিন শ্রীহরিমন্দির ব্যক্তিমালিকানায় ডা. সমীর সরকারের নামে ছিল। আআনি জটিলতায় মন্দির কেনার সময় আর্থিক সুবিধা পেতে ও ব্যাংকের লোন নিতে গ্যারেন্টার প্রয়োজন ছিল। সেই সময় মতুয়া ভক্ত ডা. সমীর সরকার স্বপরিবারে এগিয়ে আসেন এবং তার নামেই মন্দিরের বাড়িটি ক্রয় করা হয়। ক্রয়ের পর থেকেই মতুয়া সম্প্রদায় শ্রীহরিমন্দিরের কার্যক্রম শুরু করে। সেই থেকেই নিউইয়র্ক প্রবাসী কিছু সম্প্রদায় জেনে আসছে এটি মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্রয় করা নিজস্ব মন্দির। কাগজপত্রে মতুয়া সংগঠনের নাম হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশনের। ক্রয় করার সময়ই ডা. সমীর সরকারের নামে ব্যক্তিমালিকানা থেকে সংগঠনের নামে হস্তান্তরের জন্য বিধিবিধান রাখা হয়।
মন্দির ক্রয়ের পর থেকেই প্রবাসী মতুয়া সম্প্রদায় আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকে। দেশের মতুয়া সম্প্রদায়ও নিউইয়র্কের হরিমন্দির নিয়ে গর্ববোধ করে। কালক্রমে নিউইয়র্ক মতুয়া সম্প্রদায়ের শ্রীহরি মন্দির দেশে বিদেশে মতুয়া সম্প্রদায়ের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোতে রিচমুÐহীলের ১২৭ নম্বর সিটি-এ আকর্ষণীয় এই মতুয়া মন্দির অবস্থিত। শুরু থেকেই মতুয়া সম্পদ্রায়ের গুরু হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে গোপাল বাড়ের ওড়াকান্দি মন্দিরে আদলের আদলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঠাকুরের জন্মজয়ন্তি, মহাবারুণাসহ মতুয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পার্বণ সাথে সাথে সনাতন ধর্মের প্রধান প্রধান পূজাপার্বণ যেমন দুর্গোৎসব, সংকীর্তন, শিবরাত্রি, কালি পূজা, নববর্ষও চলতে থাকে।
মন্দির ক্রয়ের অব্যাহতির পরই আস্তে আস্তে আত্মকলহ, পদ-পদবীর গ্যাড়াকল, কয়েক দফায় সংগঠনের কমিটি বদল এমনকি দু’গ্রæপের দু’কমিটি সমান্তরাল চলে। একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার সোসাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ পুলিশের হস্তক্ষেপও কোর্ট-কাচারী পর্যন্ত দৌড়াতে হয়। সংকট মুছনে দীর্ঘ ক’বছর মধ্যস্থতায় কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও কলকাতার ঠাকুরবাড়ীর দাদু প্রচেষ্টা চালায়। মধ্যস্থতার ফল পুরাপুরি কাজ না করলেও প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিয়ে অনেক সাহায্য করেছে।
শ্রীহরিমন্দিরে ব্যক্তিমালিকানা যখন ডা. সমীর সরকারের উপর ছিল তখন আত্মকলহ ও সোসাল মিডিয়ায় আলোচিত বিষয় নিয়ে তিনি বরাবরেই নীরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে পরস্পরের মাঝে দূরত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে। একসময় মন্দিরটি প্রায় প্রাণহীন হয়ে যায়। ভক্তদের আগমন কমতে থাকে। ক্ষোভ ও বেদনা বাড়তে থাকে। অনেকের মুখ দেখাদেখিও পর্যন্ত হয়নি।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য নিউইয়র্ক তেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জন্মভূমি ক’বছর আগে ডা. সমীর সরকারের কাছে মন্দির মতুয়া মিশনের নামে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া জানতে চায়। সেই সাক্ষাৎকারে ডা. সমীর সরকার অকপটে বলেছিলেন সময় ও সুযোগ হলেই আমি শ্রীহরি মন্দির মতুয়া মিশনের নামে হস্তান্তর করবো।
অবশেষে নিউইয়র্কের মতুয়া আকাশে বিলম্ব হলেও নতুন সূর্যের উদয় হলো। ডা. সমীর সরকার নীরবতা ভেঙ্গে কালক্ষেপণ না করে আরও আগে হস্তান্তর হলে রাস্তা আরও সহজ হতো। দীর্ঘ = ও সংগঠনের পথ চলার বাঁকে বাঁকে নাটকীয়তায় ভক্তদের মাঝে বিশ্বাসহীনতার চিড় ধরেছে।
বেলা শেষের খবর সকল মতুয়া ভক্তদের জন্য অশেষ সম্পদ। মন্দির ক্রয় থেকে এই পর্যন্ত এ মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য ডা. সমীর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা ভক্তদের উচিত।