ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলে রাশিয়া কি ভেঙে যাবে?

0
220

ইউক্রেন যুদ্ধ এমন এক জটিল সময়ে প্রবেশ করেছে যে কোনোভাবেই এই যুদ্ধ বিজয় অর্জন করা ছাড়া বন্ধের কথা ভাবতে পারছেন না পুতিন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এটা ভাবতে পারছেন না যেখানে এই যুদ্ধ থেকে রাশিয়ার যা অর্জিত হয়েছে তার চেয়ে ক্ষতির হিসাব দৃশ্যত অনেক বড়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়া যদি এই যুদ্ধে হার মেনে নেয় তাহলে কেবল রাশিয়ান ফেডারেশনই নয় বরং রুশ জাতিই ভেঙে পড়তে পারে। তখন মস্কো এবং পশ্চিম উভয়পক্ষের ভাষ্যকাররাও ধারণা করেছিলেন যে, পুতিন নিজের কথা বলার পরিবর্তে একটি প্রচারণার অনুশীলনই আসলে করছিলেন। তারা মনে করেন না যে, ইউক্রেনে হেরে গেলেও রাশিয়া ভেঙে পড়বে এবং পুতিনও সেইভাবে চিন্তা করেন (Polit.ru, নভেম্বর ২৫, ২০২২)।

কিন্তু এখন বিষয়টি সেরকম মনে হচ্ছে না। পুতিন আসলেই বিশ্বাস করেন যে, রাশিয়ার এই যুদ্ধে জয় ছাড়া নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিকল্প কোনো সুযোগ নেই। আর রাশিয়ার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীও সেই ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করে না। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতি নানা ধরনের দুর্ভোগের পরও ব্যাপক জনসমর্থন সেটিরই ইঙ্গিত দেয়। লেভান্ডা, রাশিয়ান ফিল্ডের প্রকাশ করা এই জনমত জরিপে দেখা যায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ অভিযান’কে সমর্থন করেন কি না মর্মে প্রশ্নের জবাবে ৮০ শতাংশ রাশিয়ান হ্যাঁ-সূচক জবাব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি দৃঢ়তার সাথে এই সমর্থন জানিয়েছেন। অন্য দিকে যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন মাত্র ১৫ শতাংশ রাশিয়ান।

বিস্ময়কর বিষয় হলো, কিয়েভে আবার নতুন কোনো রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ৫৯ ভাগ জানিয়েছেন, হ্যাঁ। ২৬ শতাংশ রাশিয়ান নতুন করে হামলার বিরোধিতা করেছেন। পুতিনের শর্তে শান্তি চুক্তিতে সমর্থন জানিয়েছেন ৬৬ শতাংশ আর ২৪ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন। (geopoliticalfutures.com/russians-attitudes-toward-the-war, ৩ মার্চ ২০২৩) জনমত জরিপের এই প্রবণতায় বয়স বা আয় নির্বিশেষে রাশিয়ানদের মধ্যে মনোভাবের বড় ধরনের কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।

সাধারণভাবে দেখা যায়, শাসকদের ধরন যাই হোক না কেন অভ্যন্তরীণ জনমত যুদ্ধের মতো কোনো বিষয়ে জড়িত হওয়া বা তা বন্ধ করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাশিয়ায় পশ্চিমা বিশ্বের আরোপিত বিধিনিষেধের পরও যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে পুতিনের প্রতি এই ব্যাপক সমর্থন রাশিয়াকে অদূরভবিষ্যতে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে নেতিবাচক কোনো শর্ত মানতে বাধ্য করবে এমনটি মনে হয় না।

একসময় প্রচারণার স্বার্থে রাশিয়া ভেঙে যাবার কথা পুতিন বলছেন বলে বিশ্বাস করার নানা কারণ ছিল। এ ধরনের ধারণার অন্যতম কারণ হলো, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায় রাশিয়া এখন অনেক বেশি জাতিগতভাবে সম-মনোভাবাপন্ন এবং এখন যেকোনো বিচ্ছিন্নতার জন্য জাতিগত রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে অ-রাশিয়ানদের পরিবর্তে রাশিয়ানদের সেট করতে হবে (Vz.ru, ১৩ জুলাই, ২০২২)। মিখাইল গর্বাচেভ শেষবার যখন দেশের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয় তখন ক্রেমলিন রাশিয়ান ফেডারেশনের সীমানার মধ্যে অ-রুশদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নেয় (Holod.media, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩)। উপরন্তু, এমনকি বেশির ভাগ রাশিয়ান বিরোধী দলও দেশটির মধ্যে যেকোনো বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে রয়েছে আর তারা সতর্ক করে দেয় যে, এই ধরনের লক্ষ্য ঘোষণা করা হবে তাদের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক (Echofm.online, মার্চ ১, ২০২৩)। তদুপরি, রাশিয়ানদের মধ্যে যারা পুতিন এবং ইউক্রেনে তার যুদ্ধের বিরোধিতা করেন তাদের মধ্যেও দেশের সম্ভাব্য ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে (Business-gazeta.ru, জানুয়ারি ৩, ২০২৩)। প্রকৃতপক্ষে, তাদের মধ্যে অনেকেই এবং অন্যরাও দীর্ঘদিন ধরে পুতিনকে সমর্থন করেছেন কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে, তিনি চেচনিয়ায় তার নৃশংস যুদ্ধের মাধ্যমে দেশের সম্ভাব্য ভাঙনের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন (Graniru.org, এপ্রিল ১৫, ২০২২)।

এভাবে পুতিনের কাছে যথেষ্ট কারণ রয়েছে, রাশিয়া এবং রুশ জাতির বিচ্ছিন্নতার আভাসকে উত্থাপন করার ক্ষেত্রে এটিকে প্রচারের একটি হাতিয়ার হিসাবে নেয়ার যাতে তিনি নিজের প্রতি এবং তার নীতিগুলোর প্রতি জনগণের সমর্থন অর্জন করতে পারেন। বিশেষত যখন এ জাতীয় ধারণাগুলোকে পশ্চিমা নীতির লক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপন করা হয় তখন তিনি এই কৌশল নিতে পারেন বলে মনে করা হয়। আর বাস্তবেও এটি নিশ্চিত যে, রুশ নেতা তার মন্তব্য করার সময় এসব বিবেচনা করেছিলেন।

তবে একই সময়ে, রাশিয়ান ভাষ্যকার আলেক্সান্ডার স্কোবভের মতে, বাস্তবতা হলো, পুতিন পূর্ববর্তী রাশিয়ান শাসকদের থেকেও বেশিভাবে আশঙ্কা করেন যে, ইউক্রেনে হার বা সেখান থেকে দূরে সরে আসা হবে ‘একটি অতল গহবর’ যা তার শাসনকে ছাপিয়ে যাবে এবং সাম্রাজ্যিক কাঠামো হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ভেঙে পড়তে পারে এতে।

স্কোবভের বিশ্লেষণে বলা হয় যে, অন্যান্য সাম্রাজ্যের মতো, রাশিয়ান সাম্রাজ্য সর্বদা বিভিন্ন অঞ্চল এবং জনগণের সংমিশ্রণ ছিল। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এটিকে একত্রিত রাখা হয়েছে। একটি ‘উল্লম্ব’ প্রশাসনের অধীনস্থ করার জন্য, এর শাসক শ্রেণী সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে আনুভূমিক সম্পর্কের স্বাভাবিক উত্থানে (Kasparov.ru, মার্চ ৬)। তবে একই সাথে রাশিয়ান জাতিকে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বোধ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাশিয়ান রাষ্ট্রের এই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র এবং সামাজিক সম্পর্কের পুরো ব্যবস্থায় প্রসারিত কর্তৃত্ববাদী ঐতিহ্যের জৈব সংযোগ সুস্পষ্ট এবং এটি রাশিয়ান ব্যবস্থাকে ‘পশ্চিমাবাদ বিরোধী’ হিসাবে তৈরি করতে সহায়তা করে। পুতিনের মস্তিষ্ক হিসাবে খ্যাত আলেক্সান্ডার ডুগিন এটিকে একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন তার ইউরেশিয়া মতবাদের ধারণায়। এখন রাশিয়ার তাত্ত্বিকরা ও নেতৃত্ব দু’পক্ষই মনে করে, রুশ রাষ্ট্র ও জাতি উভয়ের জন্য পশ্চিম হুমকিস্বরূপ।

এর ফলস্বরূপ, রাশিয়া অনায়াসে ‘অবরোধিত দুর্গ’ হওয়ার অবস্থা থেকে ‘একটি ক্রুসেড’-এর দিকে চলে যায় যাকে ‘পাপী ও মন্দ পশ্চিম’কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি নীড় হিসাবে দেখা হয় (কধংঢ়ধৎড়া.ৎঁ, মার্চ ৬, ২০২৩)। আর এইভাবে, রাশিয়ান অভিজাতরা স্বাভাবিকভাবেই একটি দুষ্ট বৃত্ত তৈরি করে সেই বিপদের মোকাবিলা করতে চায়, যেখানে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় কর্তৃত্ববাদ এবং পাশ্চাত্য-বিরোধিতা উভয়কেই শক্তিশালী করে। আর সেই ধরনটার অর্থ হলো : ‘একটি রাশিয়ান সাম্রাজ্য উদার হতে পারে না এবং এটি পশ্চিমা সভ্যতার বা সম্প্রদায়ের অংশ হতে পারে না।’ রাশিয়া ও রুশ জাতির ভেঙে পড়া সম্পর্কে পুতিনের ভয় এইভাবে পশ্চিমের প্রতি তার ঘৃণার অচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়।

এর ফলে, পুতিন এই আশঙ্কাও করছেন যে, একটি কর্তৃত্ববাদী শক্তির সমর্থন ছাড়া তার রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যিক পরিচয় সহজেই আঞ্চলিক পরিচয়ে বিভক্ত হবে। আর তারপর ‘অভিশপ্ত পশ্চিম’ অংশে অংশে রাশিয়াকে নিজের মধ্যে শুষে নেবে’ (Kasparov.ru, মার্চ ৬, ২০২৩)। রাশিয়ার ভেঙে যাওয়ার ভয়ের যে কথা পুতিন বলেছিলেন তা জনগণকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে বলা কোনো কিছু নয়। আসলে এটি পুতিনের নিজের মধ্যকার একটি প্রকৃত এবং গভীর উদ্বেগ। আর এখানে একটি সভ্যতা হিসাবে পশ্চিমের প্রতি তার ঘৃণা সৃষ্টি করে যে পশ্চিমারা রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরের অধিকার প্রত্যাখ্যান করে।

পুতিনের পশ্চিমের প্রতি শত্রুতা এবং গভীরভাবে আন্তঃসম্পর্কিত বিচ্ছিন্নতার ভয় স্কোবভ একা দেখেননি। তাতারস্তানের বিজনেস অনলাইন পোর্টালের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ভ্লাদিমির মারচেনকো বলেছেন যে, এই বিষয়টি যেভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে সে সম্পর্কে পুতিনের উপলব্ধি ইভান ইলিনের প্রভাব থেকে এসেছে, যিনি ক্রেমলিন প্রধানের প্রিয় দার্শনিক হিসাবে চিহ্নিত। কাজান বিশ্লেষকের মতে, পুতিন ইলিনের প্রশংসা করার আসল কারণ, ফ্যাসিবাদের প্রতি ইলিনের প্রতিশ্রুতি নয়। বরং, এটি রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে তাদের ভাগ করা আবেশ এবং এটি প্রতিরোধ করার জন্য যা কিছু করা দরকার তা করার জন্য তাদের সাধারণ প্রতিশ্রুতি (Kasparov.ru, অক্টোবর ২, ২০২২)। স্কোবভের মতো মার্চেঙ্কোর জন্য পুতিনের কর্তৃত্ববাদ, তাই প্রাথমিক নয় বরং এই ভয়ের প্রতিফলন, যা উভয়কে অন্য রাশিয়ান চিন্তাবিদদের থেকে আলাদা করে যারা ফ্যাসিবাদের সাথে ফ্লার্ট করেছে। উপরন্তু, এতে এই ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়, কেন পুতিন রাশিয়ায় বিভক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এমনকি ভেঙে পড়া রোধ করার জন্য শক্তি ব্যবহার করতে দ্বিধা করছেন না।

আরেক রাশিয়ান বিশ্লেষক ভ্লাদিমির পাস্তুখভ পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, এমনটি ইতিহাসে এর আগে কখনো হয়নি। সারা বিশ্বে এবং সেই সাথে রাশিয়াতেও এত বেশি মানুষ এই সম্ভাবনার প্রতি মনোযোগী হয়েছে যে, রাশিয়া ভেঙে যেতে পারে। এর আগের বছরগুলোর তুলনায় এটি তীব্রভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। ১৯১৭ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন যখন হয় তখন খুব কমই আমূল পরিবর্তনের প্রত্যাশা করা হয়েছিল (Polit.ru, 3 Ryb, ৩ জুন, ২০২২)। এখন রাশিয়ার অস্তিত্বের ভয় পুতিনের নীতিগুলোকে চালিত করছে। এ কারণে বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে পুতিনের কথাগুলোকে অনেক বেশি গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত বলে মনে হয়।

একসময় কিছু পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, যুদ্ধের পরিণতিতে এক বা দুই বছরের মধ্যে রাশিয়ার পতন হবে। রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ বলেছেন যে, সংস্কারমূলক শক্তির উদ্ভবের সাথে ইতিবাচক পরিবর্তনের সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও, রাশিয়ান ফেডারেশনের অনেকগুলো নতুন রাজ্যে বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যরা রাশিয়ার যেকোনো আসন্ন শাসনের পতন সম্পর্কে কম আত্মবিশ্বাসী। রাশিয়া এবং ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ড. জোয়ানা সজোস্টেক বলেছেন, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ দমনে পারদর্শী এবং দমন-পীড়নের ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, গণবিক্ষোভ সাধারণভাবে শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণীর মধ্যেও বিভাজন থাকলেই একটি আবদ্ধ কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য একটি প্রকৃত হুমকি সৃষ্টি করে। ((Chathamhouse.org/2023/02/seven-ways-russias-war-ukraine-has-changed-world, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩)।

রাশিয়ার জনমতের যে উল্লেখ লেখার শুরুতে রয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, জাতিগতভাবে দেশটির ভেঙে পড়ার জোরালো আশঙ্কা নেতৃত্ব ও জনগণ উভয় পর্যায়েই রয়েছে। চ্যাথাম হাউজের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পশ্চিমের মধ্যে তেমন আকাঙ্ক্ষা যে রয়েছে তা নানা সময় প্রকাশও পেয়েছে। ফলে পুতিন সহজেই যুদ্ধ বন্ধ করবেন এমনটি প্রত্যাশা করা যায় না। প্রশ্ন হলো, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে? মধ্যপ্রাচ্যের দুই বিবদমান শক্তি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদের অবসান ঘটানোর ব্যাপারে বেইজিংয়ের সাফল্য দেশটির নেতা শি জিনপিংকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করতে উৎসাহিত করতে পারে। তেমন ইঙ্গিত এর মধ্যে তিনি দিয়েছেন।

এ কথা ঠিক যে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ থেকে স্বল্পমেয়াদে সবচেয়ে লাভবান রাষ্ট্রটির নাম চীন। কিন্তু এই লাভ মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিও নিয়ে আসতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিপর্যয় এড়ানোর জন্য মস্কোর জন্য চীনা সামরিক সহায়তা প্রয়োজন অনেক বেশিভাবে অনুভব করছে ক্রেমলিন। আর এই সামরিক সহায়তার অর্থ দাঁড়াবে, চীনের পশ্চিমের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া। রুশ নিষেধাজ্ঞার মতো এই ধরনের নিষেধাজ্ঞায় চীনের পাশাপাশি পশ্চিমের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়বে। কিন্তু এর পরও ভিন্ন কোন রাস্তা থাকবে না আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য। বেইজিংয়ের জন্য বড় বিপদ হবে, এতে তার উত্থান পরিকল্পনায় বড় আকারের ব্যত্যয় সৃষ্টি হবে, যেটি কোনোভাবে সময় আসার আগে কামনা করবে না চীন। এ কারণে বেইজিং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে মনে হয়।

প্রশ্ন হলো, কোন শর্তে এই যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি হতে পারে? বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো পক্ষের এককভাবে শর্ত পূরণের মতো যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। এই সময়ে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি হতে হলে তা হবে দু’পক্ষের মধ্যবর্তী একটি অবস্থান নেয়ার মধ্য দিয়ে। সেটি কি হবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ চীন এবং রাশিয়া-ইউক্রেনকে সম্মত হতে হবে যার মধ্যে ইউক্রেনের ভূমি ছেড়ে দেয়া, দেশটির ন্যাটোভুক্ত না হওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ও স্থান পেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সহজ কোনো সমীকরণ কোনো পক্ষের সামনে দৃশ্যমান নেই।

মাসুম খলিলী, লেখক ও গবেষক

mrkmmb@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here