নিউইয়র্কের ব্রংকসে ডেমোক্রেট প্রাইমারি ইলেকশন সমাবেশে কালোটাকার বিরুদ্ধে গণমানুষের অবাধ সমর্থনের পক্ষে বয়ে গেছে নতুন এক ঝড়। কংগ্রেসম্যান জামাল বোম্যান এর পক্ষে ইলেকশন সমাবেশে এক ঝড়ো বক্তব্য রেখেছেন মার্কিন কংগ্রেসের তুমুল জনপ্রিয় নেতা আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থৗ প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ বার্নি সান্ডার্স। ওই সমাবেশে ১৪ দফা এজেণ্ডা নিয়ে উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্রেট সংগঠন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিবাসন প্রত্যাশী সকল অভিবাসীর স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দান, সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে যথাযথ কাজে লাগানো এবং প্যালেস্টাইন ইস্যুতে নিজেদের মতামত প্রকাশ করায় ইউনিভার্সিটি থেকে বহিস্কৃত ছাত্রছাত্রীদেরকে শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার করা, কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা ও ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেয়াসহ ১৪ দফা এজেণ্ডা সামনে এনেছে পিপল আপ। নির্বাচনী সমাবেশ শেষে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ সৌজন্য বিনিময় করেন কংগ্রেস ওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ, জামাল বোম্যান ও মার্কিন কংগ্রেসের সিনিয়র সিনেটর বিশ্বখ্যাত সমাজতান্ত্রিক নেতা বার্নি সাণ্ডার্স এর সঙ্গে। পুরো আয়োজনটি ছিল ডেমোক্রেটদের অভূতপূর্ব এক মিলন উৎসব।
অগ্রীম নির্বাচনের একদিন আগে ২২ জুন, শনিবার ব্রংকস এর নির্বাচনী সমাবেশে ছিল আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও এবং জামাল বোম্যানের পক্ষে ডেমোক্রেট সমর্থকদের উৎসবমুখর উপস্থিতি। তীব্র গরম ও রোদ্দুরের ভেতর পার্কের শীতল পরিবেশ ছাপিয়ে খোলা জায়গার সমাবেশ হয়ে ওঠে উত্তাপে পূর্ণ। সেখানে উত্তাপ ছড়ান উপস্থিত ডেমোক্রেট নেতা ও নির্বাচিত কর্মকর্তারা। টাকার চেয়ে জনগণের শক্তি কত শক্তিশালী হতে পারে, গণহত্যা ও যুদ্ধের বিপক্ষে শান্তির প্রত্যাশা কত গণমুখি হতে পারে, সাধারণ মানুষ কোথায় দাঁড়িয়ে তাদের সুখ ও শান্তি অন্বেষণ করছেন, সে বিষয়গুলোই উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্য, শ্লোগানসহ নানা ভঙ্গিমার ভেতর দিয়ে।
আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ বলেন, ওয়ার্ল্ড স্ট্রীটকে ছুড়েঁ ফেলে দেয়ার জন্য কি আমরা প্রস্তুত ? কারণ আমরা রীতিমতো ক্লান্ত কর্পোরেট লবিষ্টদের দৌরাত্মে। চীন আমাদের কমিউনিটিকে কিনে ফেলছে এবং সর্বাধিক ঋণগ্রস্থ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি আমরা। আমরা জানি, কেন আমরা এখানে , আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্র এখন কোথায় দাড়িঁয়ে । আমাদের এখানে বিশাল বর্হি:বিশ্বের প্রভাব রয়েছে । চীন আমাদের প্রতিনিধিত্ব কেনার চেষ্টা করছে কারণ তারা আমাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে পছন্দ করে না। কিন্তু আমরা জানি যে নিউ ইয়র্ক সিটির ১৬তম জেলা প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন জামাল। জামাল বোম্যান।
এ ওসি বলেন, আমাদের ভাবনা ভিন্ন, এখানে কেউ আমাদের এগিয়ে যাবার পথে বাধাঁ হয়ে দাড়াতেঁ পারবে না। আমরা জানি রাজনীতিতে দখরদারিত্ব কি, হস্তক্ষেপ কি ! আমরা জানি কষ্ট কি ! কেন আমরা এতো পরিশ্রম আর একত্মতার পরও এগিয়ে যেতে বাধাঁ গ্রস্থ হচ্ছি । জামাল দক্ষিণ ব্রঙ্কসের একজন শিক্ষক ছিলেন । তিনি আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন বর্ণবাদ, রাজনৈতিক দুর্নীতি আর অর্থ জালিয়াতদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে। জামাল ব্যোমান প্যালেস্টাইনদের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি প্রথম কংগ্রেস ম্যান যিনি গাঁজায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলেছেন। তিনি করপোরেট লবিষ্ট আর অসৎ অর্থকে ভয় পাননি, গ্রহণও করেনি। কোন ওয়ার্ল্ডস্ট্রীট নয়, কোন আবাসন খাত নয় , কোন এপিক নয় , এ কারণে তাকে বের করে দেবার পায়ঁতারা চলছিল। কিন্তু সেগুলো কাজে আসে নি । কেননা তিনি জানেন তার দায়িত্ব কি। ব্রংকস এর মানুষের প্রতি তার দায়িত্বে তিনি শতভাগ অবিচল। জামালের বিরুদ্ধে এখন ২০ মিলিয়নের বেশি অর্থ খরচের চেষ্টা চলছে। যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইমারি ভোট নিবার্চনের পেছনে ব্যয় হতে যাওয়া সবোর্চ্চ কালো টাকা । এই ২০ মিলিয়ন ডলার কেবল এসেছে তাদের কাছ থেকে, যারা অনেক বেশি শক্তিশালী এবং তারা আমাদের জনগনের কথা ভাবে না। ওয়ার্ল্ড স্ট্রীট যারা পরিচালনা করে, যারা আবাসন খাত পরিচালনা করে। তারা আমাদের মৌলিক চাহিদার কথা ভাবে না।
তিনি বলেন, এটি আমাদের শেষ লড়াই । আমাদের এখন যুদ্ধ সম্পদশালী বনাম সাধারণ মানুষের। এই নির্বাচনে আমাদের বার্তা দিতে হবে, কালো টাকা, বর্ণবাদ, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও ক্ষতিকর মাদকের বিরুদ্ধে। আপনারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমৃদ্ধশালী করতে এগিয়ে আসুন।
মার্কিন কংগ্রেসম্যান জামাল বোম্যান তার দৃঢ় বক্তব্য ও উপস্থাপনায় মঞ্চে আলাদা এক আবহ ছড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। এটি এখন সবার কাছে পরিস্কার আমরা কারা? আমাদের পরিচয় কি? আমরা যখন সবকিছু পিছনে ফেলে মিলেমিশে কাজ করবো তখন আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা এখন আমেরিকার ইতিহাসে এমন এক জায়গায় আছি যেখানে সকল ধরনের ভাল কাজ সমাজকে কেন্দ্র করে যা, তা আমরা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। আমরা ন্যায়ের পক্ষে কাজ করছি , আবাসনের পক্ষে কাজ করছি , মানবাধিকারের অংশ হিসাবে আমরা দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবা , আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি। কোন অবৈধ অর্থ সংগ্রহে নয়, পেশী শক্তি প্রদর্শনে নয়। আমাদের কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না। আমরা শিক্ষা খাতে সবোর্চ্চ ব্যয় করবো। আমরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিব না। আমরা কোনো দুর্নীতিবাজদের কাছে হার মানবো না । প্যালেস্টাইনের পক্ষে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তা চালিয়ে যাবো। জনগণ ও ন্যায়ের পক্ষে আমাদের অবস্থান পরিস্কার।
প্রখ্যাত গণতান্ত্রিক সমাজবাদি নেতা, মার্কিন কংগ্রেসের সিনিয়র সিনেটর বার্নি সান্ডার্স ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জামাল বোম্যানকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাকে নিবার্চিত করার মাধ্যমে বার্তা দিতে হবে যে ইসলায়েল গাজাঁয় যা করছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গাজাঁয় হাজার শিশু অপুষ্টিহীনতার সাথে লড়াই করছে , যুদ্ধ করছে , এবং ক্ষুধায় নিমজ্জিত হচ্ছে । অ্যামিরকান নাগরিকরা কখনো তা চায় না, ডেমোক্রাটরা তা চায় না। জামাল এটা অনুভব করে যে , গাজাঁয় ৭০ শতাংশ বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা ইসরায়েলের কোন অধিকার নেই। গাজাঁয় কোন খাবার নেই, হেলথ কেয়ার সিস্টেম নেই , কোন বিদ্যুৎ নেই । আমাদের প্রয়োজন টু স্টেট পলিসির বাস্তবায়ন। আমাদের এই নিবার্চন খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি বলেন, এই প্রাথমিক ইলেকশন ক্যাম্পেইনকে কেন্দ্র করে বহু পেশি শক্তি অর্থের খেলায় নিমজ্জিত হয়েছে এরই ভেতর। তাদের জানিয়ে দিতে হবে যে তারা চাইলেও আমেরিকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে দেয়া হবে না। গণতন্ত্র এক শতাংশ বিলিনিওয়রদের ভোট নয়। আপনাদের জানাতে চাই , এই সিলেকশন কেন জাতীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ন । তারা যদি কোনা ভাবে জামালকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় তাহলে প্রতিটি সদস্যের প্রতিনিধিত্ব দেখবে ড্র্যাগ কোম্পানিতে, যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস করে এমন সব কোম্পানিতে যারা জলবায়ুর ঝুকিঁ আরো বাড়িয়ে দেবে বড় বড় কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে, কার্বণ নি:সরনের মাধ্যমে।