লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের ঘটনায় ভারতের রাজনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দিল্লিসহ বিভিন্ন অঞ্চল। এদিকে ভোট থেকে সরিয়ে রাখার আশঙ্কায় কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন, ষড়যন্ত্র করে তার স্বামীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে দিল্লির আসন থেকে তিনি (সুনীতা) কেজরিওয়ালের হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতারের পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ইডি হেফাজতে তিহার জেলে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা দায়েরও করা হয়েছে। এদিকে কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই সারা দেশে বিক্ষোভ করছেন আপ সমর্থকরা। এরকম এক বিক্ষোভ সমাবেশে গতকাল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল জেল থেকে পাঠানো কেজরিওয়ালের একটি চিঠি পড়ে শুনিয়েছেন। সুনীতা জানান, ‘চিঠিতে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, জেল থেকেই কেজরিওয়াল সরকার পরিচালনা করবেন।’ সুনীতা আবেগাপ্লুত হয়ে দলীয় লোকদের বলেন, ‘আমি আমার পূর্ববর্তী জীবনে অবশ্যই কিছু ভালো কাজ করেছিলাম, তাই ভারতের মতো একটি মহান দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের একসঙ্গে ভারতকে আবার মহান করতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও এক নম্বর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ভারতকে। ভারতের ভিতরে ও বাইরে অনেক শত্রু রয়েছে, যারা ভারতকে দুর্বল করে দিচ্ছে। আমাদের সচেতন হতে হবে। এ শত্রুদের চিনতে হবে। তাদের পরাজিত করতে হবে।’ এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ভোটের লড়াইয়ে যদি কেজরিওয়ালকে থাকতে না দেওয়া হয় তাহলে তার জায়গায় তিনি (সুনীতা) লড়বেন। আপের দলীয় সূত্র এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এতদিন সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজের স্ত্রী ও পরিবারকে দূরে রেখেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কারণ কেজরিওয়ালের মূল হাতিয়ারই ছিল পরিবারতন্ত্র এবং দুর্নীতির বিরোধিতা করা। অথচ কেজরিওয়াল নিজেই এবার সেই অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন। এমন অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা এখন কেজরিওয়ালের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এমনকি পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতার জায়গাও এখন কাজে লাগবে না।
বিদেশ নীতিতেও প্রভাব : লোকসভা নির্বাচনের মুখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের ঘটনায় শুধু জাতীয় রাজনীতিতেই তোলপাড় অবস্থা তৈরি করেনি, বিদেশেও প্রভাব ফেলেছে। যেমন কেজরিওয়ালের গ্রেফতারে মুখ খুলেছে জার্মানি। গণতান্ত্রিক নীতি এবং বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশটি। যদিও জার্মানির কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি। একই সঙ্গে দেশটিকে ‘বাইরের রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ’ উল্লেখ ‘একে বরদাশত করা হবে না’ বলে জানিয়েছে মোদি সরকার। পাশাপাশি এজন্য ভারতে থাকা জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলবও করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে মামলা : আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেও এখনো মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বরং আপের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে জেলে থেকেই সরকার চালাবেন তিনি। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরিওয়ালকে সরাতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে। মামলায় আবেদনকারী জানতে চেয়েছেন, কোন আইনে গ্রেফতারের পরও মুখ্যমন্ত্রী পদে রাখা হবে তাকে? মামলাকারী দাবি করেছেন, আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এমন একজন ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে রাখা কোনোভাবেই উচিত নয়।’