ক্ষমতায় গেলে প্রথম শিক্ষা সংস্কার করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আল্লাহ যদি আমাদেরকে কোনো দিন এ দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, তাহলে প্রথম দায়িত্ব হবে শিক্ষার সংস্কার করা।’
রোববার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের আয়োজনে শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘শিক্ষকদের অনুরোধ করবো আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর তাই এটাকে সৎভাবে পালন করেন। তাহলে সমাজের চাকাও সৎ পথে চলবে। তবে এখন বলতে পারেন পেটে ক্ষুধা থাকলে কিভাবে এটা করব। আমি বলব, এই ক্ষুধা মেটানো জাতির দায়িত্ব। কারণ শিক্ষকদের যদি ন্যায্য দাবি আদায়ে রাজপথে থাকতে হয় তাহলে এটি জাতির জন্য দুঃখজনক। সমাজে আজ আদর্শ শিক্ষকের বড়ই প্রয়োজন। তবেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ পাবো।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ছাত্রদের সামনে তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন। কারণ শিক্ষকরা যাদের কাছে দাবি আদায়ের জন্য অনুরোধ করছেন, তারাই একদিন এই শিক্ষকদের ছাত্র ছিলেন। তাহলে আজকে কেন শিক্ষকদের তাদের ছাত্রদের সামনে অসহায়ের মতো আন্দোলন করতে হচ্ছে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আপনি আজকে যত বড় সচিব, সেনা কর্মকর্তাসহ যেই হন না কেন, একদিন কিন্তু আপনারা এই শিক্ষকদের ছাত্র ছিলেন। আজকে মানুষের মতো মানুষ না হয়ে এ দশার কারণ কি? কারণ একটাই শিক্ষাটা ভালো ছিল না। তাই সামনে এ শিক্ষাকে ঠিক করতে হবে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যে শিক্ষা নৈতিক শিক্ষা আমরা সেটিকে সমর্থন করব। ৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে শিক্ষা হতে হবে ইসলামী চেতনার শিক্ষা। এটি ছাড়া সমাজ ভালোভাবে চলবে না, যেটি প্রমাণিত। সমাজে নৈতিক শিক্ষা নেই বলেই আজকে মাগুরায় নিজ স্বজনের কাছে শিশুর এমন অবস্থা হয়েছে। এই স্বজনরা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। তাই বলতে চাই, ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার জন্য এগিয়ে যেতে চাই। আর মহান শিক্ষকদের দুর্দশা যেন এই জাতিকে আর দেখতে না হয়। এজন্য শিক্ষকদের সাথে জামায়াতে ইসলামী সব সময় পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, সেখানে ছাত্ররা অংশ নিলেও শিক্ষকরা তাদের পেছন থেকে সাহস যুগিয়েছেন। তাই বলতে চাই শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে শিক্ষকদের অবস্থা আমাদের দেশে এমন কেন? বিগত সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এমনকি তারা পাঠ্য পুস্তকে সমকামীতার মতো বিষয়ও সংযোজন করেছিল। বিগত সময়ে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বহু চেতনার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। তবে আমাদের কথা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা হবে ইসলামি চেতনার ভিত্তিতে।’
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য কেন আজকে তাদের রাজপথে থাকতে হচ্ছে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো শিক্ষকদের সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষকদের চরিত্র হরণ করেছিল। শিক্ষকরা ভোটের সময় ডিউটি করেছিল, তাদের দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা ভোট গণনা করতে বাধ্য করেছিল।’
বালাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. এম কোরবান আলীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জামায়াত ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া নয়টি শিক্ষক পরিষদের সভাপতি জি এম আলাউদ্দীন, অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসাইন, অধ্যাপক মনজুরুল হক, অধ্যক্ষ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক নুর নবী মানিক, অধ্যাপক ড. মাওলানা শাহজাহান মাদানি, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম পাটওয়ারী, অধ্যাপক ড. উমার আলী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক আবদুল মালেক, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন, কামরুল হাসান মিলন, অধ্যাপক জাহিদ, আজিজুর রহমান সরকার, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ড. আলমগীর , বিশ্বাস, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক নজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট আজমল হোসাইন, আবুর রহিম, অধ্যাপক আহসান উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।