মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ এবং শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলটির নেতারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সরকার দেশে ‘বাকশাল-টু’ কায়েম করেছে। আর আজকে এই প্রাঙ্গণ (জিয়াউর রহমানের কবর) থেকে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ যে, আমাদের কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে, লড়াই চলতে থাকবে।
গতকাল সকাল ৯টায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ মূল বেদিতে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে সাংবাদিকদের বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আজকে দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে, যে আদর্শ নিয়ে এই দেশের লাখ লাখ মানুষ একাত্তরে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, যে আদর্শের জন্য যুদ্ধ করেছিল তার নাম ছিল গণতন্ত্র এবং তার উদ্দেশ্য ছিল যে, বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটি প্রশ্ন সেই গণতন্ত্র কোথায় গেল? সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায়? একটি সরকার আজকে জোর করে বসে আছে যে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র। তারা বাস্তবে করেছে একদলীয় শাসন। তারা এবার করেছে বাকশাল-টু। এটা আমার কথা নয়।
এটা বিশ্ববাসীর কথা।
ড. মঈন খান বলেন, আজকে আপনারা দেখেছেন কীভাবে এদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে কতো হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে, মেগা উন্নয়নের নামে কীভাবে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য যারা বিরোধী দল তাদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে, তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে আসামি বানানো হয়েছে। এখানে যদি মানুষের ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, এদেশে যদি মানুষের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে তাহলে আজকে যারা কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধা তাদের কাছে প্রশ্ন কেন তারা এদেশ স্বাধীন করেছিলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, যখন সেই ২৫শে মার্চের কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপরে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেইদিন আজকের যে আওয়ামী লীগ যারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বলে দাবি করে তারা সেইদিন কেন পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।
এসময় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবু আশফাক খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াসীন আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি’র নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান শেরেবাংলা নগরে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে ৫৩ বছর পর দেখছি, যে কারণে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি সেই কারণটি এখনো বলবৎ। অর্থাৎ এখনো গণতন্ত্র নাই, মানুষের মৌলিক অধিকার নাই, এখনো মানুষের বাকস্বাধীনতা নাই, এখনো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এখনো মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। লুটতরাজ ও লুণ্ঠনের মধ্যদিয়ে জাতীয় অর্থনীতি অর্থাৎ জাতির অর্থনীতির কোষাগার আজকে খালি হয়ে গেছে এবং আকাশচুম্বী জিনিসপত্রের দামে আজকে মানুষ দিশাহারা।
তিনি বলেন, এই মহান দিনে আমরা এখানে এসেছি, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক এবং যিনি আধুনিক বাংলাদেশ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেছেন সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে এবং তার আত্মার জন্য দোয়া করতে। আজকে এই প্রাঙ্গণ থেকে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ যে, কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে, লড়াই চলতে থাকবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, আমরা সন্তান হারা মায়ের কান্না থামাতে পেরেছিলাম অর্থাৎ স্বামীহারা, বোনহারা এই স্বজনহারাদের ব্যথা আমরা একটি পর্যায়ে কাটিয়ে দেশের দিকে তাকিয়ে, এই স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে সেই দুঃখ, কষ্ট এবং যন্ত্রণা আমরা সেদিন নিরসন করতে না পারলেও এই স্বাধীনতায় অত্যন্ত আপ্লুত ছিলাম এবং আমাদের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দ ছিল। সেটা ক্রমান্বয়ে আজকে ৫৩ বছর পর আমরা কী দেখছি? আমরা দেখছি, যে কারণে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি- সেই কারণটি এখনো বলবৎ।
এসময় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।