গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভে তুলকালাম, সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন, দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ

0
30

রাজধানীর মিরপুর-১৪ ও কাফরুল এলাকায় শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মৌসুমি গার্মেন্টের শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপরই আশপাশের কারখানার শ্রমিকরাও বিক্ষোভ শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সংঘর্ষে তুলকালাম কান্ড ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলিবর্ষণ করা হয়। ঘটনার সময় বিক্ষুব্ধ গার্মেন্ট শ্রমিকরা প্রথমে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও পরে আগুন দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে লাগা আগুন নেভান। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। এতে আল আমিন হোসেন (১৭) ও মোছা. ঝুমা আক্তার (১৫) নামে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঝুমা আক্তারের ডান পায়ে ও আল আমিনের পিঠে গুলি লেগেছে। তারা দুজনই সেন্টেক্স ফ্যাশনস লিমিটেডের কর্মী। আহত আল আমিন জানান, বাড়ি ফেরার সময় মিরপুর-১৪ এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ঝুমার বড় বোন মর্জিনা বেগম জানান, তার বোনের পায়ে গুলি লেগেছে। সেন্টেক্স ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিক কবির হোসেন জানান, সংঘর্ষের একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছোড়ে। এতে কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। আহত আল আমিনের বাবা আবদুর রহমান ও সহকর্মী লিপা আক্তার বলেন, সকালে গার্মেন্টকর্মীরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ অবস্থায় তাদের গার্মেন্ট শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেয়। পরে তারা গার্মেন্ট থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছোড়া শুরু করে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আল আমিন ও ঝুমা গুলিবিদ্ধ হন। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম মোস্তফা জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ভাঙচুরের পরে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গার্মেন্টের কয়েক শ শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেত সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করেন। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষ মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিরপুর-১৪ নম্বর সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা গেছে, তিন দিন আগে মৌসুমি গার্মেন্টে এক নারী শ্রমিককে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে একজন পুরুষ শ্রমিককেও মারধর করা হয়। গতকাল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে গিয়ে গার্মেন্ট বন্ধ দেখতে পান। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ও গার্মেন্ট বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ শুরু করেন। সেন্টেক্স ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা জানান, মৌসুমি গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ বুধবার রাতে হঠাৎ করেই কারখানা বন্ধ করে দেন। সেজন্য আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে আশপাশের সব কারখানাও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তখন সবাই একসঙ্গে রাস্তায় অবস্থান নেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আল আমিন ও ঝুমা গুলিবিদ্ধ হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here