জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের কাজ শুরু, উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ

0
35

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, নৃশংসতা ও হত্যার ঘটনাগুলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসঙ্ঘের একটি তথ্যানুসন্ধান মিশন গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে।
এই মিশন প্রায় এক মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে নিহতদের পরিবার, আহত, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করবে। মিশনটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ, সহিংসতার মূল কারণের ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারসহ বাংলাদেশ সরকারের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপের সুপারিশ করবে।
জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছে। গত জুলাই ও আগস্টের নৃশংসতার ঘটনাগুলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তে সহায়তা দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের হাইকমিশনার ভালকার তুর্ককে অনুরোধ করেছিলেন। তথ্যানুসন্ধান মিশন ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ তদন্ত করবে।
জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা কাজ শুরু করছে। তাদের কোনো সহায়তার দরকার হলে আমরা দেবো। আমরা চাই তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক। তাদের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করব না। উপদেষ্টা বলেন, তথ্যানুসন্ধান মিশন কোনো প্রচার চায় না। এটা হলে তাদের কাজে বিঘœ সৃষ্টি হবে।
এ দিকে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয় চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভের কারণে উদ্ভূত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করছে। তথ্যানুসন্ধান মিশন সত্য উদঘাটন, দায়-দায়িত্ব চিহ্নিতকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণ এবং এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তিরোধে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে। আলোচ্য সময়ে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য দেয়া জন্য সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংস্থাকে মিশন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। মিশন সেসব তথ্যের জন্য অনুরোধ করছে, যা বর্তমানে সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাবে না এবং প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়নি। ঙঐঈঐজ-ঋঋঞই-ংঁনসরংংরড়হং@ঁহ.ড়ৎম-এই ই-মেইলে তথ্য জমা দিতে হবে।
বিবৃতিতের বলা হয়, তথ্যানুসন্ধান মিশনের কাজ কোনো অপরাধ অনুসন্ধান বা আইনি তদন্ত নয়। এটি যেকোনো জাতীয় ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। মিশন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। ঘটনাস্থলে পরিচালিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উপাত্ত বিশ্লেষণের পর জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কার্যালয় তথ্যানুসন্ধান মিশনের ফলাফল, উপসংহার ও সুপারিশসহ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তবে তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে গোপনীয়। তদন্ত চলাকালে মিশনের সদস্যরা কোনো গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেবে না।
হাসিনার ভারতে অবস্থানের অফিসিয়াল স্ট্যাস্টাস জানা নেই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের অফিসিয়াল স্ট্যাটাস আমাদের জানা নেই। আমি অফিসিয়ালি তাদের কিছু বলিনি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। এর ৪৫ দিন পরও তিনি কোন স্ট্যাটাসে ভারতে অবস্থান করছেন জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সব কিছু শুধু আইন দিয়ে চলে না। ভারত সরকার তাকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি সেখানে থাকছেন। এটি আমাদের সেভাবেই দেখতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কাদের বৈঠক হবে, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here