জয়ের জন্য ইতিহাস গড়তে হতো বাংলাদেশকে। ভাঙতে হতো টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার পুরনো সব রেকর্ড। তবে তার ধারে কাছেও যেতে পারল না টাইগাররা। হেরেছে ১৩৩ রানের বড় ব্যবধানে।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আজ ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। যেখানে টসে জিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে ৭ উইকেটে ১৭০ রান পর্যন্ত করতে পারে বাংলাদেশ। যা সিরিজে টাইগার্দের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
অবশ্য যেখানে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২১৫, সেখানে ২৯৮ রানের লক্ষ্য! কঠিনই বটে। তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলের সেরা সংগ্রহ যেখানে ২৪৫, দ্বিতীয় ইনিংসে যা কমে দাঁড়ায় ২২৫ রানে। ফলে বাংলাদেশকে করতে হতো অবিশ্বাস্য কিছুই।
হায়দরাবাদে ইতিহাস গড়েই থামে ভারত। ভেঙে দেয় আগের সব রেকর্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তুলে স্কোরবোর্ডে, ভারতের ইতিহাসে যা সবার সেরা। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মাঝেও সর্বোচ্চ।
এদিন টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে অভিষেক শর্মা আর সাঞ্জু স্যামসন মিলে ২ ওভারে যোগ করেন ২৩ রান। তৃতীয় ওভার বল করতে এসে প্রথম বলেই অভিষেককে (৪) ফেরান তানজিম। এরপরের গল্পটা কেবল ভারতের। পাওয়ার প্লেতে আসে ৮২ রান।
সপ্তম ওভারে মাত্র ২২ বলে ফিফটি পূরণ করেন সাঞ্জু স্যামসন। এরপর যেন আরো বেশি ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেন তিনি। সূর্য কুমারের সাথে মাত্র ৪৩ বলে শতরানের জুটি গড়েন তিনি। তাতে মাত্র ১০ ওভারেই ভারত পেরিয়ে যায় দেড় শ’ রানের গণ্ডি।
খানিক বাদেই প্রথম আন্তর্জাতিক শতকের স্বাদ পেয়ে যান সাঞ্জু। মাত্র ৪০ বলে স্পর্শ করেন তিন অংকের ঘর। যা ভারতের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ষষ্ঠ দ্রুততম শতক। শেষ পর্যন্ত থানে ১১ চার ৮ ছক্কায় ১১১ রানে।
১৩.৪ ওভারে সূর্যর সাথে গড়ে তুলা ৭০ বলে ১৭৩ রানের জুটি ভেঙে ফেরেন সাঞ্জু। মোস্তাফিজ থামান তাকে। পরের ওভারেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পান তার শেষ টি-টোয়েন্টি উইকেটের দেখা। ফেরান ৩৫ বলে ৭৫ রান করা সূর্য কুমারকে।
এরপর রান উৎসবে যোগ দেন রিয়ান পরাগ ও হার্দিক পাণ্ডিয়া। তাদের মাত্র ২৬ বলে ৭০ রানের জুটিতে ভর করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ রানে পৌঁছায় ভারত।
পরাগ ১৩ বলে ৩৪ রানে ও হার্দিক থামেন ১৮ বলে ৪৭ করে। অন্যদিকে বল হাতে তানজিম সাকিব ৩ উইকেট পেলেও রান দেন ৬৬। যা বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান ব্যায়ের রেকর্ড।
অন্যদিকে মাত্র ২ ওভারে ৪৬ রান দেন রিশাদ। তাসকিন ৫১, মোস্তাফিজ ৫২ ও শেখ মেহেদী দেন ৪৫ রান।
ভারতের ইতিহাস গড়া পুঁজি তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরুর প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। তবে হয় তার উল্টো, প্রথম বলেই উইকেট হারায় টাইগাররা। এই ম্যাচেও ব্যর্থতার ধারা ধরে রাখেন পারভেজ ইমন, ফেরেন গোল্ডেন ডাক মেরে।
তবে লিটন দাস ও তানজিদ তামিম মিলে পরের ১৮ বলে যোগ করেন ৩৫ রান। তামিম ফেরেন ১২ বলে ১৫ করে। ইনিংস বড় করতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১ বলে ১৪ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। ৫.২ ওভারে ৫৯ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
তবে লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয় মিল খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। হৃদয় দেখেশুনে খেললেও লিটন দাস ছিলেন আগ্রাসী। তবে ২৫ বলে ৪২ রানেই থামতে হয় তার। ১১.৪ ওভারে ভাঙে তাদের ৩৮ বলে ৫৩ রানের জুটি।
শেষবারের মতো টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে৷ দুই অংকের ঘরেও যেতে পারেননি, মায়াঙ্ক যাদবের বলে ফেরেন ৯ বলে মাত্র ৮ রানে। বিদায় বেলাটা খুব একটা সুখকর হলো না অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের।
তবে প্রথম দুই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও হায়দরাবাদে রান পেয়েছেন হৃদয়। ৩৫ বলে তুলে নেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৬৩ রানে। তাতে বাংলাদেশ শেষ ৯ টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার পেরিয়েছে দেড় শ’ রানের গণ্ডি।
রবি বিষ্ণুই ৩ ও মায়াঙ্ক যাদব নেন জোড়া উইকেট।
ফলে ভারত সফরে জয়ের মুখ আর দেখল না বাংলাদেশ। প্রথমে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হবার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ঘটলো একই ঘটনা। সেই সাথে বিদায়ী ম্যাচে জয় উপহার দেয়া হলো না মাহমুদউল্লাহকে।