ডলারের বাজারে বিশৃঙ্খলা

0
144

ডলারের নানা রেট এবং এই সুযোগে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করছে বলে অভিযোগ। আর কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আরো চড়া। সব মিলিয়ে ডলার নিয়ে বাংলাদেশে অনেকটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে।

যদিও রোববার নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

চড়া দামে ডলার বিক্রির অভিযোগে গত বছরের আগস্টে ছয়টি ব্যাংককে চিহ্নিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা ডলারের প্রচলিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করে লাভবান হচ্ছিল।

ওই ঘটনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। এরপর সর্বশেষ ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো: জসিমউদ্দিন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, ‘ডলার বিনিময় হারের নামে ব্যাংকগুলো লুটাপাট চালাচ্ছে।’

তার কথায়, ‘ডলারের দাম বাড়িয়ে লুটের মালের মতো প্রতি ডলারে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা রাখছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সঙ্কট দেখা দেয়ায় তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিভিন্ন রেট করে দেয়। এখন আমদানিতে প্রতি ডলার ১০৬, রফতানিতে ১০৭ এবং প্রবাসী আয়ে ১০৮.৫ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ১০৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে।

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবে আমদানিকারকরা এ রেটে ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছেন না। ডলার সঙ্কটের কারণে এলসির চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত ডলার নেই। এ সুযোগ নিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তারা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। কারণ তারা ডলারের চাহিদা মিটাতে ভিন্ন উৎস থেকেও ডলার সংগ্রহ করে। ব্যাংকগুলো ১১৪ থেকে ১১৫ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। আর কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা।

ডলার সঙ্কটের কারণে যারা ছোট ব্যবসায়ী তারা এলসি খুলতে পারছে না। কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এলসি খুলতে না পেরে তাদের ব্যবসা বন্ধের পথে। কারণ ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ী ও বিশেষ সুবিধা না পেলে ডলার দেয় না। তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। অনেক সময় ব্যংক ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা রাখার শর্ত জুড়ে দেয়।

জানা গেছে, ব্যাংক ও ব্যবসায়ী দু’পক্ষই ওয়ান টু ওয়ান সমঝোতার ভিত্তিতে ডলার দাম নির্ধারণ করে। আবার কেনো কোনো ব্যবসায়ীর অনুরোধে তারা নানা উৎস থেকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ হরে তার ওপর লাভ হিসাব করে বিক্রি করে। ফলে ডলারের দাম আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হারের মধ্যে নেই।

যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: নুরুল আমিন বলেন, ‘আসলে ডলারের বাজারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব দেখা দিয়েছে। ডলারের চাহিদা বেশি, কিন্তু সরবরাহ কম। ফলে কোনো কোনো ব্যাংক এর সুবিধা নিচ্ছে। আর একই ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেটও এক ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অস্বচ্ছতা তৈরি করেছে। প্রবাসী আয়ের রেট বেশি। রফতানি আয়ের কম। তাহলে রফতানি আয়ের ডলার কি খারাপ?’

তিনি বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ীরা ছাড়া ছোট ব্যবসায়ীরা তো এখন ডলার পায় না। তাদের ব্যবসাও চলছে না। বড় ব্যবসায়ীরা তাদের সম্পর্ক এবং প্রভাবে ডলার পাচ্ছে। আর রেট আসলে তারাই নির্ধারণ করে নিচ্ছে। বেশি রেটে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।’

তার কথায়, ‘দেশ থেকে টাকা পাচার হওয়ার কারণেও ডলারের দাম বাড়ছে। কারণ তাদের কাছে ডলারের রেট কোনো বিষয় নয়। তারা ১৩০ টাকা রেটেও ডলার কিনছে।’

পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেট থাকা উচিত না। এটা বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। ফলে বিভিন্ন খাতে ডলারের দামের পার্থক্য যে কিছুটা হবে না তা নয়। যা হবে তা যৌক্তিক।’

তার মতে, ‘মূল সমস্যা হচ্ছে ডলারের সঙ্কট। আর ব্যাংকগুলো তার সুযোগ নিচ্ছে। অর্থ পাচারকারীরাও ডলারের সঙ্কট তৈরি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে ডলার বিক্রি করছে তা অনুচিত। এর কারণে রিজার্ভ আরো কমে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেট আর থাকবে না। বাজারের ওপর ডলারের রেট ছেড়ে দেয়া হবে।’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা যত দ্রুত কার্যকর হয় ততই ভালো।

মো: নুরুল আমিন বলেন, ‘গত আগস্টে ব্যাংকগুলোর বেশি দামে ডলার বিক্রি করার ঘটনা প্রকাশ পায়। তারপর আর কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নেয়নি। ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here