ঢাকা : পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর তা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশ সীমান্ত ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গত দুই-তিন দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাংক লুট হয়েছে, থানা আক্রমণ হয়েছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! এখন পর্যন্ত আমাদের সরকার বলতে পারছে না যে, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অনেকে বলেছেন যে, মিয়ানমারের কট্টর সংগঠন, কেউ কেউ বিরোধী দলের দিকে ইঙ্গিত করে বলছে যে জঙ্গিরা এর সঙ্গে জড়িত। যখন কোনো কিছু করতে পারে না, বের করতে পারে না তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে হয়। তখন জঙ্গি খুঁজে বের করা হয়। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা কত ভঙ্গুর।
সরকার ভারতের সাথে পানি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারেনি, মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারেনি উল্লেখ করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী বলেন, এরা (সরকার) সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। এরা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে, এরা জনগণকে পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ চরমভাবে ভেঙে পড়েছে, শিক্ষাব্যবস্থাকে তারা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসের কবলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। একটা মাত্র বাকি আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট। সেটির ওপরেও তারা হিংস্ররূপ ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ছাত্ররাজনীতির বিরোধী নই। আমরা ছাত্ররাজনীতি করে এসেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, তার আগে ভাষা আন্দোলনে সবকিছুই ছাত্ররা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি করেছে । ছাত্র লীগ হত্যা-খুন সবকিছু চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তরুণ-য্ ুসমাজকে জেগে ওঠার আহŸানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, তরুণসমাজকে বলব, আর কতকাল তোমরা এভাবে নির্যাতিত হবে। কতদিন আর আমাদের এই দৃশ্য দেখতে হবে যে, মা তার ছেলের জন্য কাঁদছে, ছোট্ট শিশু তার বাবাকে দেখতে চায়। আমাদের তো বয়স শেষ দিকে, এখন তো আমাদের রাস্তায় নেমে কাজ করা সম্ভব নয়। এখন যুবকদের-তরুণদের প্রতিজ্ঞা নিয়ে আসতে হবে যে, আমরা দেশমাতৃকাকে মুক্ত করব, আমরা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনব।
তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি। আমরা সবাই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আছি; কিন্তু এই দুঃখ-কষ্টকে আমাদেরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। মানুষের জন্য আমরা সংগ্রাম করব, আন্দোলন করব, বিজয়কে ছিনিয়ে আনব ইনশাআল্লাহ।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ(এ্যাব)-এর উদ্যোগে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া মাহফিল এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আ ন হ আখতার হোসেন এবং এ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী হাছিন আহমেদ, এ্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা জামাল সেলিম, আসাদুজ্জামান চুন্ন, নূরে আলম ভূঁইয়া, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল মতিন খান, মো: হানিফ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাম্মী আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে নিহত ৪০ নেতাকর্মী পরিবারের সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।