অনিন্দ ইসলাম : নিউইয়র্কে কথিত বইমেলার এবার ৩২ বছর। ঢাকার মুক্তধারার আপত্তির পর নিউইয়র্কে কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা নাম পরিবর্তন করে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন বানায় মামলা মকদ্দমার পর। নিউ ইয়র্কের মুক্তধারা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নতুন নয়। একাধিক মামলায় বিশ্বজিৎ সাহাকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
এ সপ্তাহেই আগামী ১৪ থেকে ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বইমেলার নতুন কমিটির ঘোষণা এলো। ৩২ বছর ধরে নিউইয়র্ক বাংলাদেশী কমিউনিটি দেখছে একটি ১০/১৫ জনের সিন্ডিকেট এই কথিত বইমেলা নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতি বছরের কমিটিতে চক্রাকারে নাম আসে শুধু সন তারিখ ভিন্ন। এই চক্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বলে খ্যাত। প্রবাসে বাঙলা সাহিত্য সংস্কৃতি ও দেশের একুশের পদক-বাংলা একাডেমি,স্বাধীনতা পুরস্কার এসব যোগ্যব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণ করে বলে জনশ্রæতি মেলে।
সম্প্রতি প্রকাশিত মুক্তধারা বইমেলার ৩১ সদস্যের নতুন কার্যকরী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. নূরুন নবী, আহŸায়ক ড. আবদুর নূর, কো-চেয়ারপার্সন নিনি ওয়াহেদ, হাসান ফেরদৌস, ড. নজরুল ইসলাম, সউদ চৌধুরী এবং সহ সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রেজা নূর, কোষাধ্যক্ষ সাবিনা হাই উরবি, প্রকাশনা সম্পাদক আদনান সৈয়দ। প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জল লিটন এবং প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মুরাদ আকাশ।
হায়রে কপাল! নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নছিব খারাপ। উপরে নামের তালিকায় একজন ধর্মীয় সংখ্যালগুর নাম নেই। মুক্তধারা কর্তৃপক্ষ একজন হিন্দু যোগ্যব্যক্তিও খোঁজে পেলেন না ?
পরিসংখ্যান বলে এই নিউইয়র্কে বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় হাফ মিলিয়ন। হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান মিলে ৩০ হাজারের উপর। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মেধায় অগ্রগামী অনেক পেশাদার হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস এই শহরে। আর বই মেলার মুক্তধারা সিন্ডিকেট কাউকে খোঁজে পায়নি!
প্রতিবছর বই মেলায় গিয়ে দেখা যায়Ñ দর্শকের অধিকাংশ ধর্মীয় সংখ্যালগুদের! দেশে কমতে কমতে ধর্মীয় সংখ্যালগু সম্প্রদায় ৯% এ ঠেকলেও মুক্তধারার বই মেলায় এই সংখ্যা ৬০% ভাগের বেশি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের লিষ্ট-এ ওরা হিসেবেই নেই!
বিষয়টি আরও খোলে বললে দাঁড়ায় আজকাল শাড়ী পরে বঙ্গললনার পদচারণা কম, কপালের টিপ তো দৌড়ে পালাচ্ছে, হিজাবের প্রতিযোগিতায় শাড়ী টিপ বিলুপ্তির পথে। হিজাব, হালাল আর শরীয়ত আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করছে। শাড়ী আর টিপ কেবল ধর্মীয় সংখ্যালগু রমণীদেরই দেখা যায়। এক দু’জন মুসলিম রমণীর শাড়ী পড়া আর কপালে টিপে কিছু আসে যায় না।
নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চোখ মেলে তাকালে বিষয় আরও স্পষ্ট হবে। সম্প্রতি ঘটনাই বলি বাংলা নববর্ষ নিয়ে কত লঙ্কাকাÐ ঘটে গেলো। যেখানেও হিন্দুদের ভিড়, রবীন্দ্র উৎসব, বাউল উৎসব, আনন্দ ধ্বনি, প্রকৃতি সব মঞ্চে ও দর্শকসারিতে সেই হিন্দু সম্প্রদায়।
নিউইয়র্কে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিপা থেকে শুরু করে উদীচী, সবখানে মুসলিম সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পী কমছে এর কারণ কী? উদীচীতো প্রায় গুটিয়ে গেছে। প্রবাসে ধর্মীয় সংখ্যালগু সম্প্রদায় বাংলা সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখছে বল্লে কী ভুল হবে?
মুক্তধারার এই নতুন কমিটিতে এমন সব কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক আছে যাঁরা দিনে মুক্তিযুদ্ধ আর রাতে ধর্মযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। ওদের ক’জন আবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করে এসে হাজী হয়েছেন। ওরাই আবার অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মকর্ম করি না বলে হিন্দু বন্ধুদের কাছে দাবি করে! আসলে ওরা ভÐ ও ধান্দাবাজ। মুখোশ পরা এসব ধান্ধাবাজরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লিজ নিয়েছে এটাই জাতির বড় দুর্ভাগ্য। ওদের আরও একটি বড় হাতিয়ার কথায় কথায় বিএনপি-জামাত বলে যতদোষ নন্দঘোষ-এর উপর চাপানো।
এসব তথাকথিত সুশীলসমাজ মাঝে মধ্যে নিউইয়র্কে ডাইবারসিটি প্লাজায় গলায় প্লেকার্ড লাগিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা করে। ওদের অনেক পদবী, প্রবীণ-নবীন আরও কত কি!
মুক্তধারার বইমেলাকে আজকাল প্রবাসীরা শাড়ীর মেলা, গহনার মেলা, চটপটি খাওয়ার মেলা বা প্রকাশনা সংস্থার নামে আদম আনার মেলা বলে কটাক্ষ্য করে। মেলার অন্তরালে অনেক অনিয়ম, বাণিজ্য, তোষামোদ, সরকারী অনুদান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ যোগানোই এই ৩২ বছরের খেলা।
কলকাতা থেকে শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিশারদ বলে কতিপয় তথাকথিত ভারতীয় সুশীলসমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের এই মেলায় এনে মেলাকে হালাল করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ঢাকার ধান্দাবাজ শিল্পসংস্কৃতির কথিত চেতনার সুশীলসমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা পথপানে বসে থাকে নিউইয়র্কের মেলার দিকেÑ কবে যাবে , মিলবে গ্রীনকার্ড ! আহা কী দেখেছি মধুর হাসি!