নিউইয়র্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম জন্মদিন উদযাপন

0
124

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ১০৪তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। কুইন্সের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়টে আনন্দঘন পরিবেশে এই উদযাপন হয় গত ১ জুলাই। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাইদের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর সবাই মিলে গেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যানথেম। পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও ইমাম মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে আয়োজনকে রাঙিয়ে তোলেন গোলাম মোস্তফা।

WhatsApp Image 2024 07 02 at 16.20.15 b68aed63 edited

অনুষ্ঠানের সিংহভাগজুড়ে ছিল স্মৃতিচারণ। ক্যাম্পাস জীবনের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেনÑফরিদা চৌধুরী, মনজুর চৌধুরী, সিলভিয়া সাবেরিন, মোসা. ওয়াহিদা শামসুন, মো. আবদুল কাইয়ুম, সজল রোশান, লুবানা রশিদ এবং মো. গোলাম মোস্তফা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন দিনগুলো নিয়ে আরও কথা বলেছেনÑকাজী জহিরুল ইসলাম, সুখন গোমেজ, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, এম আরেফিন টুলু, রুবি আরেফিন, ড. মোহাম্মদ মুজিবুল হক, নাজিয়া আহমেদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, ইকবাল মোরশেদ, উমামা সিদ্দিকা এবং রওশন আরা বেগম।
ফরিদা চৌধুরী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে আমি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি ১৯৮১ সালে। ওই সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল অসাধারণ সম্পর্ক। আমরা একটা পারিবারিক আবহে কাটিয়েছি ক্যাম্পাস জীবন। এটি আমাদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
মোসা. ওয়াহিদা শামসুন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশকেই আলোকিত করেননি, প্রবাসের মাটিতেও দেশকে উজ্জ্বল করে চলেছেন। এই প্রতিষ্ঠান হলো আমাদের অনুভূতি আর ভালোবাসার জায়গা। তাই বিদেশের মাটিতে বসে প্রাণের প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে পারাটা ভীষণ আনন্দদায়ক।

WhatsApp Image 2024 07 02 at 16.20.14 140549f1

সিলভিয়া সাবেরিন বলেন, যখন থেকে এই অনুষ্ঠানের খবর পেয়েছি, তখন থেকেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মনের আঙিনায় এখনও ভাসছে সেই টিএসসি, কলাভবন, নীলক্ষেত, মলচত্বর, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের প্রতিটি স্মৃতি।
মনজুর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি খুবই দুষ্টু ছিলাম। এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট ছিল না, যেখানে আমার কোনো বন্ধুবান্ধব ছিল না। সিনিয়র-জুনিয়র সবাই আমাকে খুব আদর করতো। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই জীবনটা আমি খুবই মিস করি। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রাণের এই প্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে যাবে।
মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করিনি। অ্যাকাউন্টিংয়ের ইভিনিং কোর্সে এমবিএ করেছি। তাই আপনাদের মতো আমার হলের কোনো স্মৃতি নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি আমার আবেগ রয়েছে। রেগুলার স্টুডেন্ট না হলেও দেশসেরা এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে সত্য, সুন্দর ও উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্নÑএমন মন্তব্য করে সজল রোশান বলেন, জীবনের অনিবার্য ডাকে আমরা হয়তো ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এসেছি, তবে আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয় কখনো প্রাক্তন হয় না।
লুবানা রশিদ বলেন, আমি পড়েছি ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে, এটাচড ছিলাম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। দারুণ সময় কেটেছে পুরো ক্যাম্পাস জীবন। আমি প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সিনিয়রদের কাছ থেকে প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষকরাও আমাদেরকে দারুণভাবে আগলে রেখেছেন।
সুখন গোমেজ বলেন, আমি আজ আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ভীষণ আবেগের এক জায়গা। আমি আরেকটু বেশি আবেগে আপ্লুত হই এ কারণে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র আন্দোলন শামসুনন্নাহার হল থেকে তৈরি হওয়া শিক্ষার্থী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলাম।

WhatsApp Image 2024 07 02 at 17.14.28 9699b943

জাতিসংঘের কর্মকর্তা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য মেধাবী এবং সফল মানুষের জন্ম দিয়েছে। তবে ইদানীং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সেই প্রশ্ন যে সম্পূর্ণ অমূলক, তাও নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
রওশন আরা বেগম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বসবাস করছি, আমাদের মাঝে কীভাবে আরও সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। শুধু বছরান্তে নয়, আমরা এভাবে মিলিত হতে চাই কিছুদিন পরপর।
ড. মোহাম্মদ মুজিবুল হক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সমর্থ হবো।
মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ভালোবাসি। আর সেজন্যই আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক। কিন্তু পড়াশোনার বিশ্বমান কতটুকু ধরে রাখতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি, সেটা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এম আরেফিন টুলু বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর আমার অনেক বন্ধুকে গায়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সিল লাগানোর জন্য কী চেষ্টাটাই না করতে দেখেছি। সেই জিনিসটা ভাবলে মনে হয়, আমরা ঢাবি শিক্ষার্থীরা আসলেই সৌভাগ্যবান।
রুবি আরেফিন বলেন, শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আমরা আশাকরি, এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও হাজার বছর সগৌরবে টিকে থাকবে। আমরা যেমন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরে গর্ব অনুভব করি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোয় আলোকিত হবে।
নাজিয়া আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের বাতিঘর। এই দেশটির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান।

WhatsApp Image 2024 07 02 at 16.20.12 764639e2 edited

ইকবাল মোরশেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে আসছেন। এই ইতিবাচক কর্মকাণ্ড যদি সমষ্টিগতভাবে করা যায় তাহলে সেটা হয়ে উঠবে অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ।
উমামা সিদ্দিকা বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তার সাবেক শিক্ষার্থীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। বিশ্বের প্রথিতযশা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। নিউইয়র্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্যোশাল ও চ্যারিটি এক্টিভিটি করলেও একই ছাতার নিচে না থাকায় সেগুলো খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাইদের উদ্যোগে নিউইয়র্কে এই আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতিটি আয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এ বছর সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সজল রোশানকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
প্রিয় প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন উদযাপনের অন্যতম অংশ ছিল কেক কাটা। এরপর নির্মল আড্ডা আর গল্প-গুজবে মেতে ওঠেন সবাই। ফটোসেশন পর্বে চলে দলবেঁধে ছবি তোলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here