নির্বাচন কমিশন গঠনে দ্রুতই সার্চ কমিটি: মাহফুজ আলম

0
11

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে দ্রত সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচন কমিশনার কারা হবেন-তা এই কমিটি ঠিক করবে। কমিশনাররা এসেই নির্বাচনের পরবর্তী কাজ শুরু করবেন। তবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সবকিছু গঠিত হবে।
শনিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। এদিন অংশীজনদের সঙ্গে চলমান সংলাপের অংশ হিসাবে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মাহফুজ আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দ্রæতই সার্চ কমিটি গঠিত হবে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ীই এটি গঠিত হবে। বিধি অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে ৬ সদস্য থাকার কথা। বিধিমালা অনুযায়ী যা যা করার দরকার করা হবে। ইলেকশন কমিশন পুনর্গঠন পরবর্তীতে কবে কীভাবে ইলেকশন হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা থেকে শুরু করে প্রসিডিউর অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সমান্তরালে কমিশনগুলো কাজ করে যাবে।
তিনি বলেন, অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়। রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং আর্থিক অপরাধ ও গণহত্যার বিচার কার্যক্রম নিয়ে কথা হয়েছে। ১৪ দলের যারা আওয়ামী লীগের হাত শক্তিশালী করেছে, গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে, তাদের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি কী হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলেছে।
এছাড়া গার্মেন্টস, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংলাপে আবারও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা এসেছে। তাদের শরিক দলগুলোকেও নিষিদ্ধ করার দাবি এসেছে। অনেকে বলেছে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪’-এই তিনটি সংসদ নির্বাচন অবৈধভাবে হয়েছে।
এটাকে কীভাবে অবৈধ ঘোষণা করা যায়-এ বিষয়ে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। গণপরিষদের বিষয়েও একটি দল কথা বলেছে। প্রধান উপদেষ্টা সরকারের জায়গায় থেকে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গার্মেন্টস পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ও সংস্কার সমান্তরালে চলবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, সার্চ কমিটি ঠিক করবে, ইলেকশন কমিশনার কারা হবেন। গত তিনটি নির্বাচনে তরুণরা ভোট দিতে পারেননি। বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাসহ অনেকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত ইলেকশন কমিশন এসব ঠিক করবেন।
এরপর দেখবেন সবকিছু রোডম্যাপ অনুযায়ী চলছে। এটা অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করেই হবে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি ও ইলেকশন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক চাপ বা কোনো আতাত হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অবস্থান বজায় থাকবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা তিনটি ইলেকশনে অংশ নিয়েছে, এদের ব্যাপারে অনেক আগেই অবস্থান আছে, তারা অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণে অবশ্যই বাধা তৈরি করবে। এ বাধাটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটা আপনারা দেখতে পাবেন।
এটার আইনি দিক আছে, প্রশাসনিক দিক আছে, আপনারা অচিরেই দেখতে পাবেন। আর যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে তখন এগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নিষিদ্ধ বা শরিক অনেকগুলো দল আছে যেমন জাতীয় পার্টিকে ডাকছি না এখন।
তারা (জাতীয় পার্টি) কিন্তু নীরবে সমর্থন করে গেছে এবং অবৈধ নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। সরকার একা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে।
৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে কাদের সহযোগিতা ছিল-এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। কেন, কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলেন তা নিয়ে সরকার তদন্ত করছে। একটা বিষয় স্পষ্ট তা হলো ৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না।
প্রায় এক সপ্তাহের মতো পুলিশ ধর্মঘটে ছিল, ফলে অনেক ক্ষেত্রে শুনছেন যে লোকটা পালাচ্ছেন, কিন্তু পুলিশ দিয়ে ধরতে হবে, সেই জায়গায় ওই সময় একটা গ্যাপ ছিল। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তাদের গ্রেফতার করা, এখনো চেষ্টা করছি যারা বাংলাদেশে আছেন তাদের গ্রেফতার করতে। তারা কীভাবে পালাল তা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
৫ আগস্ট পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পালানোর বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে-এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ওই সময় তো আমাদের সরকার ছিল না। তবে আমরা সামগ্রিকভাবে সব বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি।
একাধিক রাজনৈতিক দলগুলো উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বৃদ্ধি ও বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সরকার কী ভাবছে- এমন প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি এ বিষয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সবাইকে অবহিত করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here