ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জনবিচ্ছিন্ন। এ কথা মিথ্যা প্রমাণ করতে জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় নেমে গত কয়েক সপ্তাহে শত শত মাইল ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশায় পরিবর্তন আনতে পারেননি। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যজুড়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে থেকে সুনাক ২০ মাসে কী করেছেন; তার পূর্বসূরি পরপর চার রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রীর পারফরম্যান্স কেমন ছিল, ভোটারদের রায়ে সেসবের মূল্যায়ন ফুটে উঠবে। জনমত জরিপের পূর্বাভাস, নির্বাচনে ভরাডুবি হতে যাচ্ছে সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির; লেবার পার্টি পেতে যাচ্ছে বড় জয়। এমনটা হলে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কেয়ার স্টারমার।
ভোটে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০ সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ অবস্থায় শেষ মুহূর্তে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন স্টারমার ও সুনাক। একের পর এক সভা করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন তারা। নির্বাচনে ব্রিটেনের অর্থনীতির পাশাপাশি অভিবাসন ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। নানা নির্বাচনী বক্তব্যে অভিবাসন বিষয়ে স্টারমারের নমনীয় নীতির প্রতিফলন ঘটেছে। সুনাক অবৈধভাবে ব্রিটেনে যাওয়া লোকজনকে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্টারমার বলছেন, তিনি এমনটা করবেন না।
শেষ মুহূর্তে মঙ্গল ও বুধবার সুনাক বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন। তিনিও হয়তো ধারণা করছেন, নির্বাচনে তাঁর দল ভালো ফল করতে যাচ্ছে না। বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, এ নির্বাচনের ফলাফলেই সব শেষ নয়। লোকজন হয়তো দেখতে পাবেন, আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছি। আমাদের জন্য গত কয়েক বছর ছিল বেশ জটিল। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই- আগের চেয়ে সবকিছু ভালো অবস্থানেই আছে।
অপরদিকে লেবার নেতা কেয়ার স্টারমার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে ব্রিটিশদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। বিশ্লেষক, রাজনীতিকসহ অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, ব্রিটেনে আসলেই পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের মন্থর অর্থনীতি নিয়ে বড় কোনো আশার বাণী দেয়নি। তারা অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্পষ্ট কোনো বার্তাও দিতে পারেনি। তথাপি তাদের এ পুনর্জাগরণের কারণ কী? কার্যত সবকিছুই লেবারদের পক্ষে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী স¤প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছে লেবাররা। পাশাপাশি তারা দেশটির ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীল পত্র-পত্রিকার সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে রুপার্ট মারডকের সানডে টাইমসের। লেবার পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ডগলাস বিটি বলেন, যুক্তরাজ্যের মানুষের মনোভাবের সঙ্গে স্টারমার একাত্ম হতে পারছেন।
বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্ষণশীলরা ব্রিটেনকে ১৪ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়া অত্যন্ত অজনপ্রিয় একটি দল। জনগণের মনোভাব টোরিদের বিরুদ্ধে। লন্ডনভিত্তিক জরিপ সংস্থা ইউগভের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মনে করে, ১৪ বছর আগে যেমনটা ছিল, এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ৪৬ শতাংশ ভোটার মনে করে, পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত খারাপ’ হয়েছে।
রক্ষণশীলদের শাসনামলে ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসে যুক্তরাজ্য। ২০২০ সালে শেষ হয় ব্রেক্সিট। কিন্তু এতে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে কোনো সুবাতাস আসেনি। ব্রেক্সিটের স্পষ্ট বিরোধিতায় ছিল লেবাররা। কিন্তু এবার নির্বাচনী প্রচারণায় স্টারমার ব্রেক্সিট নিয়ে কিছুই বলছেন না। গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের অবস্থান কেমন হবে- এ নিয়ে স্টারমারের বক্তব্য অস্পষ্ট। সুতরাং ক্ষমতায় পালাবদল হলেও পরিস্থিতির পালাবদল নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
এ নির্বাচনে আজ ভাগ্য নির্ধারণ হবে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরও। তাদের অনেকেই লেবার পার্টির হয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অংশ নিচ্ছেন। কেউ কেউ স্বতন্ত্রও লড়ছেন। লেবার পার্টির টিকিটে যারা লড়ছেন, তাদের মধ্যে রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক ও আফসানা বেগম উল্লেখযোগ্য। নির্বাচনে লেবার পার্টি জিতলে তাদের কেউ কেউ মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন।
রক্ষণশীল দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে ভোটে লড়ছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।