ফ্রান্সে জোট সরকার গঠনে জটিলতা

0
100

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে জয় পেয়েছে বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি)। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট এনসেম্বল দ্বিতীয় হয়েছে এবং আরএনের অবস্থান তৃতীয়। তবে নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দলই।
এজন্য দেশটির সরকার গঠনে এবার ঝুঁকতে হবে জোটের দিকে। এতেই বাঁধে বিপত্তি। মধ্যপন্থিদের সঙ্গে জোটবদ্ধ সরকার গড়তে চান না মধ্যপন্থি নেতা জন-লুক মেলশো। আবার প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও চান না মেলশোর মতো নেতার সঙ্গে সরকার গঠন করতে। যার জেরে জোট সরকার গঠনেও বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে দেশটিতে। এরই মধ্যে দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে একত্রিত করতে মঙ্গলবার ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদে পৌঁছেন নবনির্বচিত আইনপ্রণেতারা।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ে আলোচনা শুরু করলে সেখানেও দেখা দেয় জটিলতা। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিভক্তির কারণেই প্রার্থী নির্বাচনেও উভয় সংকটে পড়েছে দলগুলো।
দেশটির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণায় দেখা গেছে, ফ্রান্সের পার্লামেন্টে ৫৭৭টি আসনের মধ্যে নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) পেয়েছে ১৮২টি, ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট এনসেম্বল পেয়েছে ১৬৩টি এবং যারা ক্ষমতায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল সেই ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) ১৪৩টি আসনে জয় পেয়েছে। কিন্তু দেশটির ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৮৯ আসন পায়নি কোনো দলই।
এজন্য জোট সরকার গঠন করা অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী জোট গঠনে সাধারণত অভ্যস্ত নয় ফ্রান্স। যা জার্মানি বা নেদারল্যান্ডসের মতো উত্তর ইউরোপীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে হয়ে থাকে।
এদিকে ম্যাক্রোঁর দলের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজার্ন বলেছেন, তিনি মূলধারার দলগুলোর সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকলেও জন-লুক মেলশোর কট্টর-বাম ফ্রান্স আনবোড (এলএফআই) দলের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে চান না। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপও কট্টর-বাম দলের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে রাজি নন। যেহেতু কোনো জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সেহেতু যে দলই সরকার গঠন করুক না কেনো পার্লামেন্টে তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। যা একেবারে অসম্ভব বিষয়।
ফ্রান্সের সংবিধান অনুসারে, ম্যাক্রোঁ কোনো দলকে সরকার গঠন করতে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। তবে তিনি যাকেই বাছাই করেন না কেন তাকে জাতীয় পরিষদে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। ম্যাক্রোঁ সম্ভবত বামপন্থি জোট থেকে সোশ্যালিস্ট এবং গ্রিনস দলকে বাদ দিতে পারেন। ফ্রান্স আনবোড দলকেও হয়তো রাখবেন না। তিনি নিজেদের মধ্যপন্থি এনসেম্বল দলের সঙ্গে বামপন্থিদের নিয়ে জোট গঠন করতে পারেন বলেও ধারণা করছেন অনেকেই। আরেকটি সম্ভাবনা হলো টেকনোক্র্যাট সরকার।
যা দৈনন্দিন বিষয়গুলো পরিচালনা করবে। কিন্তু কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো তত্ত¡াবধান করবে না। তবে বামজোট কী ভাবছে সেটাই এখন গুরুত্ব পাবে ফ্রান্সের রাজনীতিতে। এরই মধ্যে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল সোমবার সকালে ম্যাক্রোঁর কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে গ্যাব্রিয়েলের পদত্যাগপত্র প্রত্যাখ্যান করেন ম্যাক্রোঁ। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আপাতত নিজ পদেই দায়িত্ব পালনের জন্য গ্যাব্রিয়েলকে আহŸান জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। এদিকে মঙ্গলবার ন্যাটো সম্মেলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।
এ ছাড়া আগামী ২৬ জুলাই অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করতে যাচ্ছে প্যারিস। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না যে, গ্যাব্রিয়েল আটালকে আর কতদিন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ফ্রান্সের বিদায়ি অর্থমন্ত্রী ব্রæনো লে মায়ার সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, দেশ আকস্মিকভাবে আর্থিক সংকট এবং অর্থনৈতিক পতনের মুখোমুখি হতে পারে। কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, কে হবেন প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কে নেতৃত্ব দেবেন- এ নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। ফ্রান্সে যে এরকম পরিস্থিতি হতে পারে, তা ভোটের আগে পর্যন্ত অনুমান করতে পারেনি রাজনৈতিক মহল।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অতি ডানপন্থিদের (ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিরা ছিলেন) দুর্দান্ত ফলাফল দেখে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন ম্যাক্রোঁ। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা ছিল, অতি ডানপন্থিদের ন্যাশনাল র‌্যালিই এবার ক্ষমতায় আসবে। প্রথম রাউন্ডের ভোটগ্রহণ পর্বেও সেই ইঙ্গিত মিললেও পরবর্তীতে তা ভুল প্রমাণিত হয়। উল্লেখ্য, ৩০ জুন দেশটির প্রথম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফার ভোট হয় ৭ জুলাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here