বায়তুল মোকাররম : এক কাতারে ধনী-গরিবের ইফতার

0
7

আসরের পর থেকেই রোজাদারদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারম। সূর্য ডোবার সাথে মাগরিবের আল্লাহু আকবার আজানের ধ্বনির সাথে ভ্রাতৃত্বের আবহে পরিণত হয় গোটা মসজিদ। দিনের বাকি সময়টা কারো কারো মধ্য স্তর বিন্যাস থাকলেও দিন শেষে সবাই এক হয়ে যান। ভেদাভেদ ভুলে ধনী গরিব এক কাতারে শামিল হন ইফতারে।

গতকাল সরেজমিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গিয়ে দেখা যায়, আসরের পর থেকেই মসজিদে আসতে শুরু করেছেন নানা পেশার মানুষ। যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী, বড় ব্যবসায়ী, ক্রেতা, বিক্রেতা, পথচারী, ভিক্ষুক, টোকাইসহ নানান বর্ণ পেশার মানুষ।

আগত রোজাদাররা মসজিদের ভিতরে একদিকে সারিবদ্ধভাবে বসছেন। আরেক দিকে ছোট ছোট গ্রুপ করে বসছেন অনেকে। এরই মধ্যে চলছে ইফতার প্রস্তুতির মহা ব্যস্ততা। একদল বড় থালায় মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, খেজুর, কলা, পেঁপেসহ নানান ইফতার সামগ্রী সাজাচ্ছেন। সময় ঘনিয়ে আসার সাথে বাড়ছে রোজাদারের সংখ্যা। অল্পক্ষণ আগেই মসজিদের প্রধান ফটক থেকেও পথচারীদের ইফতারের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তাই ইফতারের আগ মুহূর্তে ভেদাভেদ ভুলে একীভূত হন হাজার হাজার লোক। দিনের সূর্য ডুবার সাথে ভেসে আসা মাগরিবের আজানের ধ্বনিতে এক কাতারে সবাই শামিল হন ইফতারে।

মসজিদ কমিটির একজন জানান, বরাবরের মতো এবারো বায়তুল মোকাররমের এ ইফতার আয়োজনে রয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তাবলিগ জামাত ও মুসল্লি কমিটি। এখানে বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভিক্ষুক, আশপাশের দোকানের কর্মচারী, কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ মানুষ, ভবঘুরে, এতিম-মিসকিন সবাই ইফতারে শামিল হন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন দুই হাজার মানুষের ইফতার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে দৈনিক দুই হাজার জনের ইফতার এবং অন্য একটি সংগঠন থেকে এক হাজার মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। সব মিলিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ এক সাথে এই মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতার করেন। এতে করে প্রতিদিন জাতীয় মসজিদ পরিণত হয় ধনী-গরিবের মিলনমেলায়।

অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, এখানে কয়েকটি ভাগে ইফতার আয়োজন করা হয়। মসজিদের পূর্ব সাহানের উত্তর দিকে ইফতারির আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। দক্ষিণ দিকে আয়োজন করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি এবং তাবলিগ জামাত (জোবায়েরপন্থী)।

এ বিষয়ে তাবলিগ জামাতের আমির (জোবায়েরপন্থী) আবুল কালাম বলেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইফতারির আয়োজন করছি। আপতত প্রতিদিন ৬৫০ জন মানুষের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা হচ্ছে। সামনে আরো বেশি করার ব্যবস্থা করবো।

এদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সদস্য মনসুর হাওলাদার জানান, এখানে প্রতিদিন একই হারে মানুষ হয় না। একেক দিন একেক রকম হয়। যেমন এরই মধ্যে একদিন দুই হাজার মুসল্লির জন্য ইফতারির আয়োজন করা হয়েছে। একদিন ১২০০ জনের। যদি চাহিদা বেশি থাকে তাহলে সে অনুযায়ী আয়োজন হয়।

অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উপপরিচালক আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর সরকারের কাছে আবেদন করেও অনুমতি না পাওয়ার কারণে ইফতারির ব্যবস্থা করা যায়নি। এ বছর অনুমতি পাওয়ায় প্রতিদিন দুই হাজার মুসল্লির জন্য ইফতারি আয়োজন করা হচ্ছে। মানুষ বাড়লে বাড়তি আয়োজনও থাকছে।

আগত একাধিক রোজাদারদের ভাষ্য, সারা দিন রোজা শেষে সবার সাথে ইফতার আনন্দটাই আলাদা। তারা বলেন, এখানে বসে হাজারো মানুষের সাথে বসে ইফতার করলে যে প্রশান্তি তা আর কোথাও নেই। তাই তাদের অনেকেই প্রতি রমজানে এখানে ইফতার করতে আসেন। তা ছাড়া একসাথে বসে ইফতার করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। এমন সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চান না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here