বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি মোদি

0
12

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে গোটা অঞ্চলের শান্তি প্রায় বিপন্ন। নিকটতম বা দূরবর্তী কোনো প্রতিবেশীই ভারতের হাত থেকে নিরাপদ নয়।
ভারতের ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপে’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তান। ভারতের মনোবল এখন এতটাই বেড়েছে যে, তারা এসব কর্মকাণ্ডের কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন। রাজনাথ সিং আরএসএসের কট্টর মুসলিমবিরোধী মতাদর্শে বিশ্বাসী। মোদির মতো তাকেও চরমপন্হা ও মুসলিমবিরোধী মনোভাবের ভিত্তিতে ভারতের চরমপন্থি মহলে পছন্দের প্রার্থী হিসেবে দেখা হয়।
কাশ্মীরে ভারতীয় সন্ত্রাসবাদ বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেও কাশ্মীরিরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ছাড়ছে না। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করে ভারত সরকার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের স্বতন্ত্র মর্যাদা পরিবর্তনের চেষ্টা করে।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর গত পাঁচ বছরে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাটি গভর্নরের শাসনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। কিন্তু এ বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ বিজেপিকে পরাজিত করে তাদের পূর্ণ ঘৃণা প্রকাশ করেছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার অধিকৃত কাশ্মীরে ২০১৪ সালের পর এটিই ছিল প্রথম স্থানীয় নির্বাচন।
দশকের পর দশক ধরে লাখ লাখ সৈন্য কর্তৃক কাশ্মীরি জনগণের ওপর অমানবিক নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসা ভারত সরকারের অপমানজনক পরাজয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, কোনো অঞ্চল কিছু সময়ের জন্য সন্ত্রাস, গুলি এবং জবরদখলের মাধ্যমে দখল করা যেতে পারে কিন্তু স্থায়ীভাবে জনগণের কণ্ঠরোধ করা যায় না। সা¤প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল কাশ্মীর বিরোধকে আরও একবার আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের শিরোনামের অংশ করে তুলেছে।
কাশ্মীরিরা আবারো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীকে বিচারের আওতায় এনেছে এবং তাদের রক্ত দিয়ে এই লড়াইয়ে একটি নতুন রঙ দিয়েছে। অন্যদিকে অধিকৃত কাশ্মীরের পর ভারতীয় সন্ত্রাসের শাখা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে কানাডায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের জুন মাসে কানাডায় শিখ স্বাধীনতা সংগ্রামী হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা করা হয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদীয় তদন্তের পর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধ নিয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন
কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছিলেন, তখন সরকার এ তথ্যগুলো জনসমক্ষে আনতে পারত। তবে আন্তর্জাতিক নৈতিকতার কথা মাথায় রেখে আমরা এটা করিনি। বরং তাদের সন্ত্রাসের যাবতীয় প্রমাণ আমরা ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বকে দিয়েছি।
এ ঘটনায় কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পর কানাডা সরকার ছয় ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং তাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
কানাডার পুলিশ প্রধান মাইক ডেভেহ্যাম স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভারত সরকারের এজেন্টরা কানাডায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত; যা স্থানীয় সমাজ ও নাগরিকদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের হাতে আসা তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, ভারত সরকারের এজেন্টরা হত্যাকাণ্ড ও সহিংস ঘটনায় জড়িত।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে যে, কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিক এবং কনস্যুলেটগুলো তাদের পদের সুযোগ নিয়ে সরাসরি বা তাদের তথ্যদাতাদের মাধ্যমে গোপন কার্যকলাপে জড়িত ছিল। স্বেচ্ছায় বা জোর করে ভারত সরকারের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, খালিস্তান সমর্থকদের টার্গেট করতে অপরাধী চক্র ব্যবহার করা হয়েছিল।
ভারতের সন্ত্রাসবাদ শুধু কানাডাতেই সীমাবদ্ধ নয়, গত মে মাসে মার্কিন এফআইএ এজেন্টরা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর নির্দেশে এক আমেরিকান শিখ নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেয়।
নভেম্বরে মার্কিন আদালতে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গুরপতবন্ত নামে এক মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার জন্য এক ভারতীয় এজেন্ট নিখাল গুপ্তাকে এক লাখ ডলার দিয়েছিল।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহার এ সন্ত্রাসী দেশটির পর্দা উন্মোচন করেছে যা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
বিশ্ব নেতৃত্বের স্বপ্নদ্রষ্টা মোদির জানা উচিত নেতৃত্ব বন্দুক, বিস্ফোরণ, হুমকি ও সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে আসে না, আসে শান্তির বাস্তব অভিব্যক্তি থেকে। মোদির ভারত আগেও বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি ছিল এবং আজও একটি বড় হুমকি হয়ে আছে।
বিশ্ব নেতাদের অবশ্যই এর পথ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো সময় বিশ্ব শান্তি হুমকির মুখে পড়তে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here