ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ায় কী ক্ষতি হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

0
54

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ- এই চারটি দেশ নিয়ে প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা হচ্ছে, ট্রানজিট হচ্ছে। এটা তো কোনো একটা দেশ না, আঞ্চলিক ট্রানজিট সুবিধা এবং যোগাযোগ সুবিধার জন্য করা হয়েছে। নেপাল থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ কেনা শুরু করতে যাচ্ছি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর যেসব রেলপথ, নৌপথ বন্ধ ছিল সেগুলো আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। ট্রানজিট দেওয়ায় কী ক্ষতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাতকের বুলেটে বাবা, মা, ভাই, স্বজনদের হারিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। এখন একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিশ্চয়তা করে যাওয়া। বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। সবার ঠিকানা হবে। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৫৮টি জেলার ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করেছি। ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে মোট ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৫ জন মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।


গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বৈশি^ক মূল্যস্ফিতি বিবেচনায় নিয়ে সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধনের আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বড় বাজেট পাস হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য আমাদের কতগুলো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রাখব। সংসদ সদস্যসহ সকাইকে অনুরোধ করব বাজেট যাতে যথাযথভাবে কার্যকর হয়। বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সবাই যতœবান হবেন। বৈশ্বিক মূল্যস্ফিতি বিবেচনায় সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। সংসদ নেতা বলেন, আমাদের ট্রান্স-এশিয়া হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়া রেলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। আজকে ভারতকে আমরা ট্রানজিট দিলাম কেন? এটা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া। আমাদের ট্রানজিট তো আছেই। ত্রিপুরা থেকে বাস চলে আসে ঢাকায়, ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত তো যাচ্ছে। এতে ক্ষতিটা কি হচ্ছে। বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে দেশের মানুষ। অনেকে অর্থ উপার্জনও করছে।

তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে আজ পৃথিবীটা গেøাবাল ভিলেজ। যখন এই অঞ্চলে সাবমেরিন কেবল আসে, বাংলাদেশ বিনা পয়সায় যুক্ত হতে পারত। খালেদা জিয়া করতে দেয়নি। সব তথ্য নাকি ফাঁস হয়ে যাবে! ভুটান থেকে একটি রাস্তা যাচ্ছে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত। ভারত চাচ্ছিল ভুটান থেকে রাস্তাটা বাংলাদেশ হয়ে থ্যাইল্যান্ড যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই রাস্তাটার সঙ্গে যুক্ত থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমরা অনেক এগিয়ে যেতাম। খালেদা জিয়া এটাও নাকচ করে দেয়। এখন সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। আমি প্রথমবার সরকারে এসে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু যুক্ত হতে পারিনি। বিশ্বায়নের যুগে আমরা নিজেদের দরজা বন্ধ করে রাখতে পারি না। আজকে পৃথিবীটা গেøাবাল ভিলেজ, একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। ভারত থেকে পাইপলাইনে তেল নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা আসামের রুমালিগড় থেকে পাইপলাইনে তেল নিয়ে এসেছি। পার্বতীপুর ডিপোতে সেই তেল আসছে। ক্ষতিটা কী হয়েছে। বরং আমরাই কিন্তু সস্তায় কিনতে পারছি।
সা¤প্রতিক ভারত সফর নিয়ে সমালোচনাকারীদের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের মিত্রশক্তি। পৃথিবীর কোনো দেশেই যুদ্ধের পর মিত্রশক্তি সেই দেশ ছেড়ে যায়নি। এ ক্ষেত্রে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল, ইন্দিরা গান্ধী নিজেও স্বাধীনচেতা ছিলেন বলেই যেই মুহূর্তে জাতির পিতা ভারতের সৈন্য ফেরত নিতে বলেন, সেই মুহূর্তে ভারতের সৈন্য চলে যায়। অথচ, জাপানকে সহযোগিতা করেছিল আমেরিকা, এখনো সেখানে আমেরিকার ঘাঁটি। পশ্চিম জার্মানিকে সমর্থন করেছিল আমেরিকা, এখনো সেখানে আমেরিকার ঘাঁটি। আমার ভারত সফর নিয়ে বিরোধীদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘দেশ বেঁচে দিয়ে আসছে’। আসলে বিক্রিটা কারা করে?
কেউ ঠিকানাবিহীন থাকবে না : এর আগে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন বা ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৫৮টি জেলার ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করা হয়েছে। ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে মোট ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৫ জন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
অধিবেশন সমাপ্ত : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন গতকাল শেষ হয়েছে। গত ৫ জুন থেকে ১৯ কার্যদিবস অধিবেশন চলার পর গতকাল ৩ জুলাই অধিবেশন শেষ হয়। ৩০ জুন বাজেট পাস হয়। আগের দিন ২৯ জুন সংসদে অর্থ বিল পাস হয়। অধিবেশনে সামগ্রিক বাজেট আলোচনায় ২৩৬ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here