ভারতের বিবৃতি ‘তথ্যের ভুল উপস্থাপন, বন্ধুত্বের মেজাজের বিপরীত’: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

0
28

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও জামিন নাকচের ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে ভারত সরকারের বিবৃতিকে ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে তুলে ধরে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অন্তর্ববর্তীকালীন সরকার।
মঙ্গলবার পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি কেবল তথ্যের ভুল উপস্থাপনই নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার যে মেজাজ, সেটারও পরিপন্থি।”
দিল্লির আহŸানের বিপরীতে ঢাকা বলেছে, “দেশে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখতেও বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।”
চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার ও জামিন নাকচের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তাতে বলা হয়, ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা’ বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর একাধিক হামলার পরে চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর এ ঘটনা ঘটল।
“সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটের পাশাপাশি প্রতিমা ও মন্দিরে চুরি, ভাঙচুর ও অবমাননার ‘কিছু নথিবদ্ধ ঘটনাও রয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত দাবি উত্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা দুর্ভাগ্যজনক।”
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর রাত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে গত ২৫ অক্টোবর জনসভার পাঁচ দিন পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাশসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়। ওই মামলার বাদী চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান, যাকে পরে অব্যাহতি দেয় দলটি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, লালদীঘি মাঠের সমাবেশের দিন নিউ মার্কেটে জাতীয় পতাকার ওপর ‘সা¤প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের’ গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের ‘অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল’।
‘দেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা প্রদর্শন ও দেশের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার মানসে’ এভাবে পতাকা অবমাননা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলার এজাহারে বলা হয়, “জাতীয় পতাকার ওপরে ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে আসামিরা দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার রাষ্ট্রদ্রোহ কাজে লিপ্ত আছে।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত চিন্ময় দাশের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।
তাকে কারাগারে নেওয়ার সময় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সমর্থকরা প্রায সাড়ে তিন ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের প্রিজন ভ্যান আটকে রাখেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরায়।
এরপর পাহাড়ের উপর অবস্থিত আদালত থেকে নেমে আসার পথে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনজীবী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে, যাতে এক আইনজীবী নিহত ও কয়েকজন আহত হন।
চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহŸান জানায়।
এরপর রাতে ওই বিবৃতির পাল্টায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আজকে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি বাংলাদেশ সরকারের নজরে এসেছে।
“অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার লক্ষ্য করছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার স্বত্বেও শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেপ্তারের বিষয়টি কোনো কোনো গোষ্ঠী ভুল বুঝেছে।”
ভারতের বিবৃতিকে ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে তুলে ধরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সব বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে যে স¤প্রীতি এবং এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণের যে অঙ্গীকার ও উদ্যোগ, এই বিবৃতি তার প্রতিফলন ঘটায়নি।
“সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনে জড়িতদের বিষয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পুরোপুরি দূর করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, এখানে তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ জোরালো ভাষায় পুনর্নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থেকে প্রত্যেক বাংলাদেশির তার ধর্মীর রীতি ও চর্চা প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা প্রতিপালনের পাশাপাশি কোনো বাধা ছাড়াই মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রত্যেক নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। ঠিক গত মাসে দুর্গা পূজার শান্তিপূর্ণ উদযাপনের মধ্য দিয়ে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বিচার বিভাগ যে ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুনর্ব্যক্ত করছে এবং সরকার বিচার বিভাগের কাজে কোনো ‘হস্তক্ষেপ করছে না’। চিন্ময় দাশের ঘটনাটিও আদালত দেখভাল করছে।
আদালতের আদেশের পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়াকে কেন্দ্র আদালতের অদূরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সনাতনীদের সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
আলিফের প্রাণহানির কথা তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “আজ (মঙ্গলবার) বিকালে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ধর্মীয় স¤প্রীতি যাতে যে কোনো মূল্যে বজায় থাকে, সেজন্য বন্দরনগরীতে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here