মিশন শেষ করে হাসিনা ঠিকই পালালেন ,ডাঃ ওয়াজেদ খান

0
45

শেখ হাসিনা পিতার দেখানো পথেই হাঁটলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মূহূর্তে পালালেন দেশ ছেড়ে। সাথে নিয়ে গেলেন বোন রেহানাকে। ভয়ংকর অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে গেলেন নিজ দলের নেতাকর্মী ও অনুগত প্রশাসনকে। পালানোর বিষয়টি তিনি আগে জানান দেননি কাউকে। হাসিনার পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বোন রেহানাকে নিয়ে যে মিশনে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, সেই মিশন শেষে বোনকে নিয়ে পালালেন তিনি। দীর্ঘ ৪৩ বছরে শেখ পরিবারের হত্যাকারীদের বিচারসহ হাসিনা চরিতার্থ করেছেন তার সকল বিকৃত জিঘাংসা। স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় শাসন করেছেন বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করে বংশের সব সদস্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিভিন্ন দেশে। শেখ হাসিনা যে ভারত থেকে বোনকে নিয়ে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন, বোনকে নিয়ে সেই ভারতেই পালালেন তিনি। তার পলায়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে অবসান ঘটলো শেখ পরিবারের নেতৃত্বের। পদত্যাগ করার শেষ মূহূর্তেও দম্ভ, অহমিকা ও ঔদ্ধত্য স্পষ্ট ছিলো তার আচরণে। “বঙ্গবন্ধু কন্যা কখনো পালায় না” এমন উক্তি তিনি করেছেন বহুবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পালিয়েছেন সবকিছু পেছনে ফেলে। এই পালানোর মধ্য দিয়ে হাসিনা তার প্রয়াত পিতার দেখানো পথেই হেঁটেছেন। শাসন কাজেও অনুসরণ করেছেন পিতাকে।
একাত্তরের ২৫ মার্চের কালো রাতে শেখ মুজিব সাড়ে সাত কোটি মানুষকে পাকবাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে দাঁড় করিয়ে চলে যান পশ্চিম পাকিস্তানে। পঁচিশে মার্চের কালো রাতে পাকবাহিনী জঘন্যতম গণহত্যায় নামছে এমন আগাম বার্তা ছিলো শেখ মুজিবের কাছে। এজন্য দলের কিংকর্তব্যবিমুঢ় নেতারা ছুটে যান তার বাসায়, দিক নির্দেশনা চান নেতার নিকট। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ টেপ রেকর্ডার নিয়ে ৩২ নম্বরের বাসায় যান স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করতে। কথিত আছে যুদ্ধের ময়দানে আত্মসমর্পণকারী সেনাপতির চেয়ে লড়াকু সৈনিকের মূল্য অনেক বেশি।” কিন্তু ইতিহাস থেকে সব সৈনিকের নাম মুছে ফেলেন শেখ মুজিব। এমনকি বাদ যায়নি মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানী। তারপরের ঘটনা সবারই জানা। মুক্তিযুদ্ধের ৮ মাস ২১দিনে লাখো মানুষের প্রাণহানি, মা-বোনের ইজ্জত ও ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশের মানুষ। শেখ মুজিবের নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সত্য। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন না তিনি। মুজিব যুদ্ধের বিভৎসতা ও গণহত্যা দেখেননি, শোনেননি সন্তানহারা মায়ের আহাজারি । মুক্তিযুদ্ধে তিনি বা তার দলের চেয়ে বড় অবদান ছিলো দেশের আপামর জনতার। সাধারণ মানুষই নির্ভীক সৈনিক হিসেবে লড়েছে রণাঙ্গনে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার পুরো ফসল গোলায় তোলে শেখ পরিবার ও তার দল। শেখ মুজিব বনে যান প্রেসিডেন্ট। একদলীয় শাসন, শোষণ ও ক্ষমতার শতভাগ ভোগদখল করেন তারা। খুন-হত্যা-রাহাজানি-ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, অপশাসনে অল্প দিনেই মুজিব হয়ে উঠেন বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়। ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
ইতিহাসের বাক ঘুরে ২১ বছর পর পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে মুজিব কন্যা হাসিনা ফিরে আসেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে কায়েম করেন স্বৈরশাসন। সংবিধান শিকেয় তুলে রেখে অনুসরণ করেন পিতার প্রদর্শিত বাকশালী কায়দা। বিগত দেড় দশকে পরপর তিনটি সংসদীয় নির্বাচনে বিনা ভোটে দখলে রাখেন রাষ্ট্র ক্ষমতা। বাংলাদেশকে পরিণত করেন এক বৃক্ষের বাগানে। গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে শুধু দল বা পরিবারে সীমিত না রেখে নিয়ে নেন ব্যক্তি মালিকানায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ১৭ কোটি মানুষের অধিকার হরণ করে ধ্বংস করে দেন রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্মম, নৃশংসভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করেন নিজ দেশের হাজারো মানুষকে। দেড় দশকে ২ হাজার ৭’শ মানুষকে হত্যা করেন বিচারবর্হিভূতভাবে। তার শাসনামলে গুমের শিকার হয়েছে প্রায় ৭’শ মানুষ। অভিযোগ আছে, হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের অভিষেক হয় পিলখানায় সেনাবাহিনীর ৫৭জন চৌকষ অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এরপর মোটা দাগে গণহত্যা চালায় তার বাহিনী হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের উপর। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দোহাই দিয়ে হত্যা করেন অনেককে। গোপন কারাগার আয়না ঘর তৈরি করে গুমকৃতদের নীপিড়ন-নির্যাতন এবং হত্যার শিকারে পরিণত করা হয়। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মামলা দিয়ে করা হয় কারারুদ্ধ। দেশকে ঠেলে দেন সাক্ষাত নরকে। মানুষের পিঠ ঠেকে যায় দেয়ালে। সাামাজিক বৈষম্য যখন চরমে এমন একটি ক্রান্তিকালে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের সন্তানেরা।
যে বৈষম্যের কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয় একাত্তরে, সেই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদেরকে “রাজাকারের বাচ্চা” বলে গালি দিয়ে তাদেরকে দমাতে লেলিয়ে দেন রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের। চালান নির্বিচার গণহত্যা। নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে প্রায় একহাজার মানুষ। শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধে ফুঁসে উঠে সারাদেশ। একমাস ৬ দিনের আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। তারপরের ঘটনা সৃষ্টি করেছে নজিরবিহিন বিশ্ব ইতিহাস। নূতন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। যে নতুন প্রজন্ম এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে ছিলো হতাশা, তারাই আজ পরিণত হয়েছে জাতির ভরসাস্থলে। শেখ হাসিনা এখানো আওয়াজ দিচ্ছেন ভারতে বসে। কিন্তু ইতিহাস বলে বিশ্বের পলাতক স্বৈরশাসকদের কেউই পরবর্তীতে ফিরতে পারেনি রাজনীতিতে। উল্টো নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুতির দীর্ঘদিন পরও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি স্বৈরাচারদের সন্তানরা। দাঁড়াতে পারেনি তাদের রাজনৈতিক দলগুলোও। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, গুম ও গণহত্যা অন্যান্য দেশের স্বৈরাচারের তুলনায় নজিরবিহীন ও ভয়ঙ্কর। জুলাই-আগষ্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন হাসিনা। ভারত জরুরি ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক আশ্রয় দিয়েছে তাকে। তার পরবর্তী গন্তব্য জানা নেই কারো। হাসিনা বা তার পরিবারের কেউই আর কখনো যে দেশে ফিরতে পারবেন না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত। দেশে শতাধিক হত্যা মামলা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে শেখ হাসিনা ‘চট’ করে দেশে ফিরবেন তার এমন উক্তি হাস্যকর। স্বৈরাচারী ও নৈরাশ্যবাদী হাসিনা নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ এমনটি দাবি করেছেন তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। শুধু এখন নয় হাসিনার মানসিক অসুস্থতা আজন্ম। ‘প্যাথলজিক্যাল লায়ার’ হাসিনা চট করে দেশে ফিরে আসুক এমনটিই চাচ্ছে দেশের মানুষ।
(ডা: ওয়াজেদ খান
সম্পাদক
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here