শিরোনাম কেড়ে নেওয়ার ‘রোগ’টা সাকিব আল হাসানের ছিল এতদিন। কখন কি সব উটকো কাজ করে বসতেন, সেটারও কোনো ঠিক ঠিকানা ছিল না। যে কারণে তাকে শাস্তিও পেতে হয়েছে বহুবার।
সাকিব আল হাসান নেই এবারের বিপিএলে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে তিনি আর দেশে ফিরতে পারছেন না। যে কারণে চিটাগং কিংসের হয়েও খেলা হচ্ছে না তার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সাকিবের সে স্বভাবটা এখন তামিম ইকবালকে পেয়ে বসেছে রীতিমতো। তামিম হরহামেশাই এখন ‘শিরোনাম’ কেড়ে নিচ্ছেন, এবং সেটা নেতিবাচক কারণে।
‘হরহামেশা’ কথাটা কিন্তু এমনিতেই বলা হয়নি এখানে। তামিমের এই নেতিবাচক কারণে শিরোনামে আসাটা গেল এক সপ্তাহে হলো দ্বিতীয় বারের মতো। ৯ জানুয়ারি রংপুরের বিপক্ষে তার দল ফরচুন বরিশাল সিলেট পর্বে সবশেষ বিপিএল ম্যাচটা খেলেছিল। এরপর ১৬ জানুয়ারি নিজেদের পরের ম্যাচে তামিমের দল মাঠে নেমেছিল ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে। এই টানা দুই ম্যাচেই তামিমকে মেজাজ হারাতে দেখা গেছে।
শুরুটা হয়েছিল রংপুর রাইডার্সের অ্যালেক্স হেলসের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে। হেলসের কথায় তামিম রেগে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এ রকম করছ কেন? কিছু বলার থাকলে মুখে বলো। বি আ ম্যান।’ এরপর হেলসও কিছু একটা বলেছিলেন তাকে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা রূপ নেয় বিবাদে। পরে দুই দলের সদস্যদের মধ্যস্থতায় বিষয়টার সুরাহা হয়।
এরপর হেলস জানিয়েছিলেন, সেখানে তামিম তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন। একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ইংলিশ বিশ্বকাপজয়ী বলেন, ‘আমি তাকে কিছুই বলিনি। ২০২১ সালে আমি বিয়ার পানের জন্য (ক্রিকেটে) ২১ দিন নিষিদ্ধ হয়েছিলাম, সেই প্রসঙ্গ নিয়েও সে (তামিম) কথা বলেছে। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যা খুবই লজ্জার ব্যাপার।’
সেদিন এই ঘটনার পর তামিম শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল তাকে দাঁড় করান কাঠগড়ায়। সেখানে তাকে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট শাস্তি দেওয়া হয়। তামিমও পরে বিষয়টা মাথাপেতে নিয়েছিলেন।
এরপর প্রথমবারের মতো তামিমের দল মাঠে নামে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি)। ঢাকার বিপক্ষে এই ম্যাচে আবারও শিরোনামে চলে আসেন তিনি। এদিক ফিফটি করে বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ডটা নিজের করে নেন। এই ফিফটির পথে তামিম ঢাকার সাব্বির রহমানের সঙ্গে রেগে গিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছিলেন আরেকটু হলেই।
গতকাল ম্যাচে বরিশাল ইনিংসের নবম ওভারে ঘটে ঘটনাটা। চতুরঙ্গা ডি সিলভার করা ওই ওভারের দ্বিতীয় বলটা তামিম লং অনে পাঠিয়ে তুলে নিয়েছিলেন একটি রান। তবে সাব্বিরের ফিল্ডিং নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তামিম। বাউন্ডারি লাইনে সাব্বির বলটা হাতে নিতে পারেননি ঠিকঠাক। তা চলে আসে সামনে।
সেটাই তামিমের কাছে বেখাপ্পা মনে হয়। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে ‘ফেইক ফিল্ডিং’ হিসেবে ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাটার বিভ্রান্ত হয়ে রানের জন্য ক্রিজ ছাড়েন, আর তাতে রান আউটের সুযোগ তৈরি হয়। তামিমেরও তেমন কিছুই মনে হয়েছিল।
আর তাই সাব্বিরকে তিনি বলে বসেন, ‘বেশি লাগতে যায়ো না সাব্বির, বেশি লাগতে যায়ো না!’ এখানেই ক্ষান্ত হননি তামিম। সঙ্গে আরও কিছু বলেছিলেন যা ঠিক স্পষ্ট শোনা যায়নি।
প্রতিক্রিয়ায় ‘ব্যাড বয়’ সাব্বির তেড়ে আসছিলেন তামিম ইকবালের দিকে। বিষয়টা মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন থিসারা পেরেরা। সাব্বিরকে থামান তিনি। ফিল্ড আম্পায়াররাও এগিয়ে আসেন। ফলে বিষয়টা আর বড় কিছুতে রূপ নেয়নি।
এখানেই শেষ নয়, বরিশালের এই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন তামিম। তবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি কাণ্ড করে ফেলেছেন আরো একটা, এবং এটাও ওই ‘রাগ’ সম্পর্কিতই।
৪৮ বলে ৬১ রানের ইনিংসের সুবাদে তামিম পান ম্যাচসেরার পুরস্কার। তবে পুরস্কারটা যখন তুলে দেওয়ার সময় হলো হাতে, তখন তামিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার পুরস্কারটা নিতে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তার যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যেতে পারেননি। পরে সঞ্চালক বললেন, ‘তামিম এখানে নেই, তার বদলে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।’
পরে বরিশাল সূত্র নিশ্চিত করে, আসলে কারণটা তামিমের বিরক্তি। তিনি যখন ওখানে ছিলেন, তখনও পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আসেননি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। তার আসতে কিছুটা সময় লেগেছে। তামিম তাতেই অধৈর্য হয়ে রেগেমেগে সে জায়গা ছেড়ে চলে যান ড্রেসিং রুমে।
তামিম অবশ্য মাঠের ক্রিকেট দিয়েও শিরোনাম কেড়ে নিচ্ছেন। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ৮০০০ টি-টোয়েন্টি রান করেছেন। ৬ ইনিংসে ২২২ রান করে তিনি আছেন শীর্ষ রান সংগ্রাহক হওয়ার দৌড়েও। তবে অক্রিকেটীয় যেসব কারণে তিনি ‘খবর’ হচ্ছেন তা সেসব ঢেকে দিচ্ছে পুরোপুরি। আর একটা বার্তাও দিচ্ছে– রাগটা বুঝি স্রেফ তারই হয়, আর কারো নয়!