চীনা নেতা শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ মঙ্গলবার তাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করছেন। শি এক রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল মস্কোয় পৌঁছেছেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট রাশিয়া ও চীনকে ‘কৌশলগত পার্টনার’ এবং ‘বড় প্রতিবেশি শক্তি’ বলে বর্ণনা করেছেন। আজ মস্কোতে তার সফরের দ্বিতীয় দিনে শি ভ্লাদিমির পুতিনকে এ’বছর “তার সময় সুযোগমতো” চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বলেছেন মস্কোর সাথে যোগাযোগকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনের সাথে আজ ইতোমধ্যেই বৈঠক করেছেন শি জিনপিং এবং এই বৈঠকের সময় তিনি এসব কথা বলেছেন।
রুশ সৈন্য ইউক্রেন আক্রমণ করার পর এটাই শি-র প্রথম মস্কো সফর।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ
সফরের প্রথম দিন সোমবার দুই প্রেসিডেন্ট চার ঘণ্টারও বেশি সময় কথা বলেছেন এবং দুজন দুজনকে “প্রিয় বন্ধু” বলে উল্লেখ করেছেন।
দুই নেতাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাদের আজকের আলোচনায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গও স্থান পাবে।
চীনা সরকার বলে আসছে এই যুদ্ধের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পক্ষপাতহীন, কিন্তু কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন বেইজিংয়ের শান্তি পরিকল্পনা আসল উদ্দেশ্য আড়াল করার জন্য একটা ধোঁয়াটে পর্দার মতো এবং এই পরিকল্পনাকে সামনে রাখলে চীনের পক্ষে রাশিয়ার আক্রমণকে সমর্থন করা সহজ হবে।
তবে জানা যাচ্ছে যে শি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মি, জেলেনস্কির সাথে ভিডিও কলে কথা বলবেন। ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে শি ও জেলেনস্কির মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
কিয়েভে জাপানের প্রধানমন্ত্রী
চীন ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় বসানোর ব্যাপারে রাজি করাতে পারবে এমন সম্ভাবনা কম হলেও চীনা নেতা শি জিনপিং এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে এই ভিডিও কল আদৌ হয় কিনা কিয়েভ সেই অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে শি যখন মস্কো সফর করছেন তখন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক এক সফরে একই সময়ে কিয়েভে পৌঁছেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। তিনিও আজ জেলেনস্কির সাথে বৈঠকে বসছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন শি-র মস্কোয় রাষ্ট্রীয় সফরের সময়ই জাপানি প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক কিয়েভ সফর চীনা প্রেসিডেন্টের ওপর বড় রকমের চাপ তৈরি করবে।
জাপানি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষ করে নিজের দেশে ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই পরিকল্পনা বদলে পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন এবং সেখান থেকে ট্রেনে কিয়েভ গেছেন।
মস্কোয় শি-এর সফরে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কোনরকম অগ্রগতি হয়ত হবে না, কিন্তু চীনা ও জাপানি দুই নেতা তাদের সফরে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং সার্বিকভাবে বিশ্ব শান্তির বিষয়গুলোকে কতটা গুরুত্ব বা অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তা নিয়ে তুলনামূলক কাটাছেঁড়া যে অবশ্যম্ভাবী হবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
চীনা নেতার মস্কো সফরের প্রথম দিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বলেছেন, “ইউক্রেন সংকট নিরসনে” বেইজিংয়ের দেয়া প্রস্তাবগুলো তিনি পড়ে দেখেছেন এবং এ নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন।
দুই নেতার মধ্যে গতকালের দীর্ঘ আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে চীনের দেয়া ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও তাদের আলোচনার বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ক্রেমলিন শুধু জানিয়েছে যে দুই নেতা “বিস্তারিতভাবে” মতবিনিময় করেছেন এবং ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন আজ দুই নেতার বৈঠকের পর আরো পরের দিকে এক যৌথ বিবৃতিতে তাদের আলোচনার বিষয়ে জানানো হবে।
গত মাসে এই ১২ দফা প্রস্তাব দেয় চীন। তবে এতে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই।
বরং এতে সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর কথা, এবং সব পক্ষকে “যৌক্তিক আচরণ” করার বলা হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
চীন এই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না।
সূত্র : বিবিসি