বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহিদ আবু সাঈদ ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি শহিদ হওয়ার ৯০ দিন পর নিবন্ধনের ফলাফল প্রকাশ হলো। ফলাফল পেয়ে তার বাবাসহ পরিবারের সবাই আবেগাপ্লুত। বিশেষ করে ছোট বোন সুমি খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ১৬ জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের আবু সাঈদ। তার মৃত্যুতে দেশের ছাত্র-জনতা আওয়ামী সরকারের পতনের এক দফার দাবিতে রাজপথে নামেন। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়। অপরদিকে অসচ্ছল পরিবারের সন্তান আবু সাঈদ চাকরির জন্য ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষা-২০২৩ এ ইবতেদায়ি সাধারণ শিক্ষক হিসাবে অংশ নেন। তার রোল ছিল ২০১২৫৬২৯৭। ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে আবু সাঈদ কৃতকার্য হয়েছেন। এ ফলাফল পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা-মা, পরিবারসহ পুরো গ্রামের মানুষ আফসোস করছেন। অসচ্ছল পরিবারের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ছিলেন আবু সাঈদ। আর তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখত তার পরিবার। আন্দোলনে শহিদ হওয়ায় তার পরিবারের মনোবাসনা অধরাই রয়ে যাওয়ায় তারা বুক চাপড়াচ্ছেন।
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইটার খুব মেধা ছিল। ওর ওপর আব্বা খুব আশাবাদী ছিল। কিন্তু কোটা আন্দোলন আমাদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। তবে আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হওয়ায় দেশবাসী নিষ্কৃতি পেয়েছে। আমরাও সেদিক দিয়ে খুশি।’
বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার অনেক কয়জন সন্তান। অর্থের অভাবে তাদেরকে লেখাপড়া করাতে পারিনি। কিন্তু আবু সাঈদের মধ্যে পড়ার খুব আগ্রহ ছিল। সে নিজেই টাকা রোজগার করে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। তাকে নিয়ে আমার খুব আশা ছিল। কিন্তু সে আশা আমার শেষ। আমিও আর আগের মতো কাজ করতে পারি না।’
বেরোবির ভিসি অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, ‘আবু সাঈদ যে মেধাবী ছিল, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। কিন্তু আবু সাঈদ জীবদ্দশায় তা দেখতে পারল না। তার আত্মত্যাগের মূল্য আমরা তাকে দিতে পারব না। তবে তার জন্য দোয়া করছি।’