ঢাকা, ১০ জানুয়ারি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ইতশেহারে দেওয়া প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাত দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অভিমুখে রোডমার্চ পুলিশি বাঁধায় পন্ড হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সাত দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অভিমুখে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য রোডমার্চ শুরু করে ঢাকার রমনা কালী মন্দির থেকে যাত্রা শুরু করে টিএসসি হয়ে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পৌঁছালে সেখানে অবস্থানরত পুলিশ রোড মার্চকে সামনে এগুলোতে দেয়নি।
এসময় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা শেষে পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিকের নেতৃত্ব সাত সদস্যের একটি কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিকাল ৩টা ৫০মিনিটে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অভিমুখে রওনা দেন। প্রতিনিধি দলের অন্যরা হলেন-রানা দাশ গুপ্ত,কাজল দেবনাথ,উষাতন তালুকদার,জয়ন্ত কুমার দেব,বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক,সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্র নাথ পোদ্দার।
রোডমার্চে ‘ধর্ম যার যার,রাষ্ট্র সবার,পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা, আজকের সমাবেশ, সফল হোক! সফল হোক!, ঐক্য পরিষদের সমাবেশ, সফল হোক! সফল হোক!, সংখ্যালঘু কমিশন গঠন কর! করতে হবে!- আমাদের দাবি,আমাদের দাবি, মানতো হবে,মানতে হবে!- বলে শ্লোগান দিতে থাকে।
এর আগে বেলা ১২টায় সংগঠনের অন্যতম সভাপতি উষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দাবিতে রমনা কালিমন্দিরের সামনে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে তাদের পেশকৃত সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান। দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ২৪ ফেব্রæয়ারি মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন নেতারা। এর পরেও দাবি আদায় না হলে আমরণ অনশন কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়ার হুমকি দেন নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা গনিমতের মাল হিসেবে থাকতে চাইনা। রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে সেই ব্যবহার আর আমরা করতে দেবো না। গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা আমাদের থেকে কী নেবেন আর কী দেবেন এই সমঝোতা আজকে প্রয়োজন। আজকে এই সমাবেশে আমরা যে দাবি নিয়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি, এই দাবি করেছিলাম ২০১৮ সালে। সরকারি দল এই দাবি মেনে নিয়ে তাদের ইশতেহারে তারা অঙ্গিকার করেছিলেন নির্বাচনে তারা জয়যুক্ত হলে তা বাস্তবায়ন করবেন। আমরা আশা করেছিলাম, আমরা আশা করেছিলাম, কিন্তু আর মাত্র ১বছর বাকি। এখনো তার কিছুই হয়নাই। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনীতির প্রতি আমরা আস্থা রাখতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনি আমাদের শেষ ভরসাস্থল। আপনার ওপর আমরা আশা ও আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাই এতে বিন্দুমাত্র ঘাটতি হোক। আমাদের দাবিগুলো যদি বিবেচিত না হয়, আমাদের দিকে যদি ফিরে তাকাতে কুণ্ঠাবোধ করেন, তাহলে আমরাও আপনাদের প্রতি কতটুকু ফিরে তাকাবো সেই বিষয়েও চিন্তাভাবনা করতে হবে।
এসময় তিনি রোডম্যাপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি দলের নির্বাচনি প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২৪ ফেব্রæয়ারি দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মশাল মিছিলের কর্মসূচির ঘোষণা করছি। আজকের রোডম্যাপ, স্মারকলিপি প্রদান ও পরবর্তী সময়ে মশাল মিছিলের কর্মসূচি দিয়েও যদি দাবি বাস্তবায়ন না হয় তবে আমরণ অনশন কর্মসূচি দিতে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের অন্যতম সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এই সমাবেশে থেকে সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে জানাতে চাই। আজকে এই কনকনে শীতের মধ্যে এসকল মানুষ আনন্দ করতে আসেনি। তারা এসেছে তাদের অধিকার আদায়ে, ন্যায্য দাবি লড়াইয়ে। প্রধানমন্ত্রী আমরা জানি আপনার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, অনেক মহল রয়েছে। আপনি কথা দিলে কথা রাখেন, কিন্তু গত চার বছরে তো কোনো ওয়াদা রাখলেন না। আমরা আশা করছি আপনি অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নিবেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা বার বার এই সাত দফা দাবি পেশ করে আসছি। কিন্তু কোনো অজানা কারণে আমাদের এই দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। আমরা বার বার সা¤প্রদায়িক হামলার শিকার হচ্ছি,আমরা এই নির্যাতন থেকে রেহাই চাই। আমাদের এই দাবি বাস্তবায়ন অবিলম্বে না করা হলে আমরা আরো বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা আগামী নির্বাচন বয়কট করবো যদি আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করা হয়। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মতুয়া সাধু-সংঘের সাধারণ সম্পাদক সাগর সাধু ঠাকুর, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি উষাতন তালুক, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকসহ আরো অনেকে।
প্রসঙ্গত, তাদের সাত দফা দাবি হলো- জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, সমতলে অধিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন,পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ কার্যকরীকরণ, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন।