শাহীনেই আটকে আছে আনার হত্যা

0
87

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এখনো অজানা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমপি খুনের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীকে গ্রেফতারের আগে প্রকৃত মোটিভ বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে নেপালে আটক চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাম অন্যতম আসামি সিয়ামকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে শনিবার ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের পুলিশই নেপালে গেছেন। তবে তাকে বাংলাদেশে আনা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের পুলিশ চাচ্ছে সিয়ামকে তাদের দেশে নিতে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারেনি কাঠমান্ডু ইন্টারপোল। তবে শেষ পর্যন্ত সিয়ামকে ভারতের সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক কর্মকর্তা নেপাল থেকে বলেন, সিয়ামকে আমাদের কাছে দেবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। ভারতের পুলিশ তাকে নিতে চাচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার।
এর আগে শনিবার সকালে নেপালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় ডিবি পুলিশের একটি টিম। ডিবি টিমের সঙ্গে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) একজন প্রতিনিধিও আছেন। এছাড়া মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক সহকারী কমিশনার (এসি) আজ রোববার নেপালে যেতে পারেন বলেও জানা গেছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এমপি আনার হত্যার মূল মামলা ভারতে হয়েছে এবং মূল তদন্তও ভারতে হবে। তবে তদন্তে বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। তাই ভারত মূল তদন্ত করলে শাহীনকে ফিরিয়ে আনা অনেকটা সহজ হবে। আমাদের দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলে আমাদের পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করত। তারা (ভারত) যদি তদন্তে আমাদের সম্পৃক্ত করে তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেপালে পলাতক সিয়ামকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান শনিবার বিকালে বলেন, এমপি আনারকে কারা খুন করেছে, কীভাবে খুন করা হয়েছে সবই আমরা জেনেছি। কিন্তু খুনের মোটিভ সম্পর্কে আমরা এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক থাকায় এখনো গ্রেফতার করতে পারিনি। এ কারণেই হত্যার প্রকৃত মোটিভ জানতে পারছি না। শাহীনই জানে সে কেন এই হত্যকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে। অন্যরা মূলত টাকার জন্যই এই হত্যাকাণ্ডের অংশ নিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে মূল সমন্বয়কারী গ্রেফতারকৃত শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ কী তথ্য দিয়েছে-জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে আমানুল্লাহর ভগ্নিপতি ডা. টুটুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
আমানুল্লাহর পরিবারের অভিযোগ, এই বন্দুকযুদ্ধে আনারের ভূমিকা আছে। এ নিয়ে আনারের প্রতি আমানুল্লাহর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। এছাড়া এমপি আনারের সঙ্গে তার রাজনৈতিক বিরোধও ছিল। এমন পরিস্থিতিতে শাহীনের কাছ থেকে আনারকে হত্যার প্রস্তাব পায় আমানুল্লাহ। সঙ্গে ছিল মোটা অঙ্কের অর্থের প্রস্তাবও। তাই সে এই হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে।
নেপালে আটক সিয়ামকে বাংলাদেশ নাকি ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হবে-জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিষয়টি এখনো কনফার্ম হয়নি। নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেই আমরা সেখানে ডিবির টিম পাঠিয়েছি। সেখানে ভারতের টিম গিয়েছে। তারা সিয়ামকে ভারত নিতে চাচ্ছে। এখন দেখা যাক কী হয়? তিনি আরও বলেন, নতুন কী ব্যবসার কথা বলে এমপি আনারকে কলকাতার সেই সঞ্জীবা ভবনে নেওয়া হয়েছিল সেটি এখনো আমরা বের করতে পারিনি।
শনিবার সকালে নেপালে যাওয়ার আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ গেটে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের সহকারী সিয়াম নেপালে আটক হয়েছেন বলে শুনেছি। এছাড়া হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর অন্যান্য আসামিরাও নেপালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সবদিক বিবেচনা করে আমরা সেখানে যাচ্ছি।
গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আনার।
ওইদিনই কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে দুই দেশেই।
ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৯ মে কলকাতা সিআইডি সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালিয়ে কয়েক টুকরো মাংস উদ্ধার করে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত আটজনের নাম বেরিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ, তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্তি রহমান দ্বিতীয় দফায় ডিবির রিমান্ডে আছে।
এছাড়া কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে আরেক আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে। কাঠমান্ডু ইন্টারপোলের কাছে আটক হয়েছে সিয়াম। শাহীনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও মোস্তাফিজ ও ফয়সালের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here