বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দিয়ে পুরো জাতিকে নিরাপত্তাহীন ও অরক্ষিত করে ফেলেছে।’
রোববার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের ওপর দেশী-বিদেশী চাপে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়েছে সরকার। দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সরকার। দেশী কিংবা বিদেশী হোক না কেন, যারাই গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলে তারাই জনগণের বন্ধু।’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকার পানিতে হাবু-ডুবু খেতে খেতে জনগণকে বিভিন্ন বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে। গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজের গোষ্ঠীস্বার্থে এক নজিরবিহীন স্বৈরাচারি মডেল তৈরি করেছে। আর এজন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশের স্বাধীন অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতেও তারা দ্বিধা করেনি। গনতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়-বিচার, সুশাসন জনগণের নিরাপত্তাকে পদদলিত করা হয়েছে গুম-খুনের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়ে। ব্যাংক লুট, টাকা পাচার, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী ও ঋণ খেলাপিদের দিয়ে ক্ষমতাসীন বলয় তৈরি করেছে সরকার। এরাই বর্তমানে আইন, প্রশাসন, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। যারা ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা, তারাই তাদের দলীয় নেতা বা সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী ও উপদেষ্টা। বাংলাদেশে সন্ত্রাসকে করা হয়েছে মহিমান্বিত, সন্ত্রাসীরা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে সমাজের প্রভু হয়ে উঠেছে।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একতরফা নিশিরাতের নির্বাচন করে যারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা জবর দখল করে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নেয়, ওই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা কি অন্যায়? গণধিকৃত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করে না বলেই বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য নানা কথার ফুল ঝুড়ি ছড়াচ্ছে। দস্যুদল যদি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে, তার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করা ন্যায্য ও ন্যায় সঙ্গত। আর এই সংগ্রামে যে সমর্থন দিবে, সেই জনগণের বন্ধু। যেকোনো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাহিরের অনেক দেশ সমর্থন দেয়, তা কি অন্যায়? বাংলাদেশের জনগণ নিরাপত্তাহীন ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার পরিবর্তন ও পরিচালনায় তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে ভোটাধিকার হরণ করে। নাগরিক হিসেবে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুতরাং জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে। মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সকল স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসের শেষ প্রান্তে, এটি ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের বিকাশের লক্ষ্যে চলে আসা রক্ত ঝরা আন্দোলনে অনেকের আত্মদান বৃথা যাবে না। আর এই আন্দোলকে দেশে-বিদেশে যারাই সমর্থন করবে, তারা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে ও পক্ষে আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না। বিগত দেড় দশক ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিরোধী দলসহ ভিন্ন মতের মানুষ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিককে গণতন্ত্র বিনাশী এই ফ্যাসিস্ট সরকার নির্মমভাবে হত্যা করেছে। গুম করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদেরও। গণতন্ত্রকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকারের দমনযন্ত্র প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরাচ্ছে।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘জনগণকে পিষ্ট করার পাশাপাশি এরই মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্দিত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার জন্য কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। সরকার হচ্ছে জনগণের আমানতকারী। সরকারের হেফাজতে জনগণের তথ্যসহ অনেক কিছু থাকতে পারে সংরক্ষনের জন্য। নিশিরাতের সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ বলেই সংরক্ষিত তথ্য ফাঁস করিয়েছে। সরকারের লোকজনের সহায়তা ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। জনগণের জান-মাল, সহায়-সম্বল হেফাজতের দায়িত্ব সরকারের। ভোটারবিহীন দখলদার সরকার জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দিয়ে গোটা জাতিকে নিরাপত্তাহীন ও অরক্ষিত করে ফেলেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে যে সকল তথ্য থাকে, ওই তথ্য দিয়ে মানুষের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ লোপাট করা সম্ভব। যতদিন এটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিল, ততদিন তো ফাঁস হয়নি। তাদের অধীন থেকে সরকার নিজ দায়িত্বে নেয়ার পরই এটা ফাঁস হয়েছে। এর ভেতর সরকারের কোনো সু-পরিকল্পিত গভীর চক্রান্ত থাকতে পারে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছিল, তার সঠিক প্রতিবেদন আজও প্রকাশ পায়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই সরকার দূর্বৃত্তায়ন, ইতরায়ন ও রক্তাক্ত সন্ত্রাসের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে হত্যা সংখ্যা। দেশকে পরিণত করা হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। এদের মিথ্যা কথা চেঁচানোর রেওয়াজ র্দীঘ দিনের। আজ এদের সীমাহীন অনাচারের বিরুদ্ধে জনগণ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। জনগণকে আর আটকিয়ে রাখা যাবে না। মিটিং, মিছিল, স্লোগান প্রতিরোধের অভিযাত্রায় রাজপথে অচিরেই জনগণের বিপুল তরঙ্গ উঠবে।’
আগামী ১২ জুলাই (বুধবার) নয়া পল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘ওই দিন দলের পক্ষ থেকে পরের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
ওই সমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।