বাংলাদেশকে পরাধীন করার প্রথম প্রয়াস শরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে প্রথম সরকার শেখ মুজিবের হাত ধরে। তার ধারাবাহিকতার পথ বেয়ে নরেন্দ্র মোদী, মমতা জুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার দায়িত্বটি পালন করে চলেছিলেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। সবকিছুকে ব্যর্থ করে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতীয় বাংলা প্রদেশ করার প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের প্রধান মিত্রশক্তির নাম ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা। ভারতের প্রতিবেশি দুই শত্রুদেশ পাকিস্তান ও চীনের সহায়তার জন্যও আমরা ঋণী।
একথা বলেছেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার, রাজনীতিবিদ স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫৩ বছর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শক্তি ও দেশপ্রেমিক সমাজশক্তিগুলোর পর্যায়ক্রমিক ধংসের অভিযানে ওরা বিজয়ী হয়েছিল। এই সুযোগেই বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব ধংস করার চুড়ান্ত পথে পৌঁছে ভারত। সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ নিয়ে ‘বাংলা প্রদেশ’ গড়ার চূড়ান্ত প্রয়াস এবার ব্যর্থ হয়েছে। তাকে যুদ্ধ করেই তাড়াতে হয়েছে। এ যুদ্ধ এতো কঠিন, বাংলাদেশর সব মানুষ একত্র হয়েও এতে সাফল্য অর্জন সম্ভব ছিল না। আমরা আমেরিকান। এই আমেরিকার নাম সর্বপ্রথম আসবে বাংলাদেশকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে । আমি জানি, কতটি বছর ধরে এই যুদ্ধ চালু রাখতে হয়েছে।
গত রোববার নিউইয়র্কের গ্লেন আইল্যান্ড পার্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নাগরিক ঐক্য ফোরাম ইউএসএ আয়োজিত মিলন মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ড. কনক সরওয়ার, ইলিয়াস হোসাইন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নাগরিক ঐক্য ফোরাম এর সমন্বয়ক ফাহাদ হোসেন, কমিউনিটি সংগঠক গিয়াস আহমেদ, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম মিঠু, জাহিদ মিন্টু, জসিম ভূইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়াজ বিডি’র সম্পাদক শাহ আহমেদ।
স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সে সময় বর্হি:বিশ্বে আমাদের সন্তান এবং বংশধররা যারা দেশের পক্ষে দাঁড়ায় আমি নিজ দায়িত্ব থেকেই তাদের পৃষ্ঠেপাষকতা দিয়েছি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র আমার, আমাদের সবার। সেই জন্যই এটি আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ডক্টর কনক সারওয়ার ও ইলিয়াস হোসেন প্রমাণ করেছেন যে সাংবাদিকতা করেও রাষ্ট্র রক্ষার যুদ্ধ করা যায়। আমার এই দুই ভাইকে আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই দেখতে পেলাম।
আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, আমরা যখন একটি দলের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন আরেক দলের লেজুড়বৃত্তি করি, যখন এক নেতাকে পূজা দেই তখন আরেক নেতার নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো শক্তি রাজনৈতিক দল, অথবা সংবাদ মাধ্যম দেশবাসীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাংলাদেশে অবস্থানের কথা জানায়নি। তিনি সবার উদ্দেশ্য প্রশ্ন রেখে বলেন, কে জানিয়েছিল যে ইন্ডিয়ান এক বিগ্রেট সৈন্য বাংলাদেশে আছে ? বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা, গুম করে দূবর্ল করে, প্রতিটি কাঠামো ও মানুষের নৈতিকতা ধ্বংস করতে করতে একটা সময় কলকাতাকে রাজধানী করে বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার অভিযানে চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা প্রত্যাঘাত হেনেছি। এতে একদিকে বিশ্বকে অবাক করে দেয়া সামরিক কৌশল গ্রহণ করেছি, অপরদিকে বাংলাদেশে ঢাকায় ছাত্র যুবক বিক্ষুদ্ধ জনতাকে রাজনৈতিক আন্দোলনে নামিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পর্যায়ক্রমিকভাবে স্বৈরাচার উৎখাতের চূড়ান্ত সংগ্রামে দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছি। এই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং তাদের কলাবোরেটর বাংলাদেশি স্বৈরাচারী বাহিনীগুলোর মুখোমুখি হয়েছি। গণভবন অভিমুখি বিক্ষুদ্ধ দেশপ্রমিক জনতার যাত্রায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এবং সীমান্তের দুপাশে পাকিস্তানী এবং চীনা বাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখে আগ্রাসী ভারত তাদের বাংলাদেশি অনুগত কলাবোরেটর শেখ হাসিনাকে তাদের আশ্রয়ে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লক্ষ লক্ষ অনুগত দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষুদ্ধ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রোষানলে ফেলে রেখে একাই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে আশ্রয় নেন। ভারতের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোবাল তার দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং সরকারের পক্ষে বাংলাদেশের এই মোনাফেকের তত্বাবধানের দায়িত্ব নেয়। তার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার জন্য একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করে তাকে দুবাইয়ে পুণর্বাসিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কয়েকদিন আগে দুবাই এয়ারপোর্টে ১৭ ঘন্টা অপেক্ষা করেও প্রবেশের অনুমতি পায়নি শেখ হাসিনা। অবশেষে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভারতবন্ধুর কাছেই ফিরে আসতে হয়।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আজ বাংলাদেশ সরকারে যারাই থাকুক তার প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা করা । এই নিরাপত্তা শুধু সীমান্ত রক্ষা এবং আইন শৃংখলা রক্ষাই নয় বরং সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিজিবিসহ সব আইন শৃংখলা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে, সংস্কার করতে হবে দেশের স্বার্থে । তিনি রাজনৈতিক সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে যেমন দলের প্রধানকে ‘দল মালিক’ হতে দেখেছি , আমরা দেখেছি দলের প্রেসিডেন্ট, সাধারণ সম্পাদকের পরিবার রাষ্ট্রেরমালিক, রাজনীতির মালিক, সম্পদের মালিক। এ অবস্থার স্থায়ী পরিবর্তন হতে হবে। জনগণের রাজনীতি জনগণের হাতেই ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণকে জিম্মি করার রাজনীতি চলবে না।
তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পরাশক্তি আমেরিকাকে বাংলাদেশের প্রধান মিত্র উল্লেখ করে বলেন, এখন থেকে আমেরিকা থাকবে বাংলাদেশের পাশে, আমেরিকা যখন থাকবে ভারত মহাসাগরে, আমেরিকা যখন থাকবে ইন্দো প্যাসিফিকে সে সময় ভারত বা অন্যকোন দেশ আমাদের ক্ষতি করতে বা আমাদের ওপর দিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে সাহস পাবে না।
স্যার আবু জাফর মাহমুদ, পতিত শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, তোমার বিচার করবে যারা, সে জায়গায় তোমাকে আসতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতেই বিচার নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, এখানে যারা ভারতের কলাবোরেটরের ভূমিকা রাখতে গিয়ে আমেরিকাকে এতদিন গালাগালি করেছে, আমেরিকার স্বার্থের ওপরে আঘাত করেছে , আমেরিকান অ্যাম্বাসেডরের গাড়ি আক্রমণ করেছে, তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের আমেরিকান নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশকে নিরাপদ করতে আমরা আমেরিকাকে সবসময় পাশে পাবো।