শেখ হাসিনার আমলে বহুল আলোচিত ’আয়নাঘর’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছ ভারতের পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার জমানা ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল। ওই সময় থেকেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হতো। শাসকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই তুলে আনা হতো বলে খবর।
আয়নাঘর। এই শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক কথা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই এনিয়ে নানা কথা উঠতে শুরু করেছে। বলা হয়, শেখ হাসিনা মূলত তার সমালোচকদের এই আয়নাঘরে রেখে দিতেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবর অনুসারে অনেককেই তুলে এনে গুম করে ফেলা হতো। তাদের লাশের সন্ধান মিলত না। অন্যদেরকে একটি গোপন মিলিটারি ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হতো। এটার নাম ছিল আয়নাঘর। মানে হাউজ অফ মিররস।
কাদের রাখা হতো এই আয়নাঘরে?
মূলত হাসিনার শাসনকালে যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলতেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হতো। আইনজীবী থেকে পাহাড়ি নেতা, যারাই হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতেন তাদেরকেই নিশানা করত তৎকালীন সরকার। এদিকে আচমকাই সেই প্রতিবাদীদের আর সন্ধান মিলত না। কার্যত উবে যেতেন তারা। তবে এবার সেই প্রতিবাদকারীদের আত্মীয়রা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
বেলাল হোসেন। ২০১৩ সাল থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এবার তার ভাইঝি তাসনিম সিপ্রা জানিয়েছেন, আমরা যেটা চাইছি সেটা হলো একটা উত্তর। কী হয়েছিল সেটা জানতে চাইছি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে শিপ্রা জানিয়েছেন, এমন যেন মনে হচ্ছে কাকা কোনো দিন পৃথিবীতে ছিলেন না।
মাইকেল চাকমা। তিনি পাহাড়িদের অধিকারের দাবিতে লড়াই চালাতেন। গত অগস্ট মাসে একটি জঙ্গলে তাকে ছাড়া হয়েছিল। তার আগে চোখ বেঁধে তাকে হাঁটানো হয়। তিনি বলেছিলেন পাঁচ বছরে এই প্রথম আমি সূর্যের আলো দেখলাম। এমনকি তিনি বার বার পরীক্ষা করে দেখেন তিনি কি সূর্যের আলো দেখছেন নাকি সেটা অন্য কিছু।
এদিকে তার প্রশ্ন আমার দোষটা কি ছিল? আমি কী করেছি? আমার অপরাধটা কোথায়? আসলে সেই প্রশ্নের উত্তরটা মিলছে না কিছুতেই।
আবদুল্লাহ আমান আজমি নামে সেনাবাহিনীর এক সাবেক জেনারেল বলেছেন, আমি আকাশ, সূর্য, ঘাস, চাঁদ, গাছ কিছুই দেখিনি। গত অগস্ট মাসে তাকে মিলিটারি জেল থেকে ছাড়া হয়েছিল। আট বছর ধরে তাকে জেলের মধ্যে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তাকে অন্তত ৪১ হাজার বার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল ওই সময়কালে।